◆ অভিযোগঃ
ইসলামবিরোধীদের বিশেষ করে খ্রিষ্টান মিশনারীদের একটা অন্যতম দাবি হচ্ছেঃ ইসলামে নাকি নাজাত বা Salvation এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। স্বয়ং নবী(ﷺ) নাকি নিজ পরিনতির ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। এহেন দাবির স্বপক্ষে তারা নিচের দলিলগুলো নিয়ে আসেঃ
قُلْ مَا كُنتُ بِدْعًا مِّنَ الرُّسُلِ وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ وَمَا أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ
অর্থঃ “বল, ‘আমি রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।” [1]
رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْكَ أَبَا السَّائِبِ شَهَادَتِيْ عَلَيْكَ لَقَدْ أَكْرَمَكَ اللهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَمَا يُدْرِيكِ أَنَّ اللهَ أَكْرَمَهُ قَالَتْ قُلْتُ لَا أَدْرِيْ بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَنْ قَالَ أَمَّا هُوَ فَقَدْ جَاءَهُ وَاللهِ الْيَقِيْنُ وَاللهِ إِنِّيْ لَارْجُوْ لَهُ الْخَيْرَ وَمَا أَدْرِيْ وَاللهِ وَأَنَا رَسُوْلُ اللَّه مَا يُفْعَلُ بِيْ قَالَتْ فَوَاللهِ لَا أُزَكِّيْ أَحَدًا بَعْدَهُ
অর্থঃ “…ঐ সময় আমি ‘উসমান [ইবনু মাযউন] (রা.)- কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবু সায়িব! তোমার উপর আল্লাহর রহমত হোক। তোমার সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী(ﷺ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ্ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। হে আল্লাহ্র রসূল! আমি তো জানি না। তবে কাকে আল্লাহ্ সম্মানিত করবেন? নবী(ﷺ) বললেন, আল্লাহ্র শপথ! ‘উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহ্র কসম! আমি তার সম্পর্কে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহ্র কসম, আমি আল্লাহ্র রসূল হওয়া সত্ত্বেও জানি না আল্লাহ আমার সাথে কী ব্যবহার করবেন। উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে পূত-পবিত্র বলব না। …” [2]
◆ জবাবঃ
■ আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যাঃ
সুরা আহকাফের আলোচ্য আয়াতের ব্যাপারে সালাফে সলিহীনদের (Early righteous Muslims) থেকে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আমরা এখানে সেগুলো আলোচনা করবো। কোনো কোনো সালাফের মতে আলোচ্য আয়াতে দুনিয়াতে নবী(ﷺ) এর সঙ্গে কী করা হবে সেটি বোঝানো হয়েছে।
“... যাহহাক(র.) বলেন, وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ এর অর্থ ইহার পর আমাকে কি নির্দেশ দেওয়া হইবে এবং কোন জিনিস হইতে আমাকে বারণ করা হইবে আমি তাহা জানি না।
হাসান বসরী(র.) বলেন, আয়াতের অর্থ হইল, পরকালে যে আমি জান্নাতে প্রবেশ করিব সে ব্যাপারে আমার নিশ্চিত জানা আছে। দুনিয়ার জীবনে ভবিষ্যতে আমাকে কোন নবীর ন্যায় হত্যা করা হইবে, নাকি সাধারণ জীবন যাপন করে আমি আল্লাহর সান্নিধ্যে উপস্থিত হইতে পারিব তাহা আমার জানা নাই। অনুরূপভাবে তোমাদিগকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেওয়া হইবে, নাকি পাথর মারিয়া হত্যা করা হইবে তাহাও আমার জানা নাই। ইমাম ইবনে জারীর [তাবারী] (র.) এই ব্যাখ্যাটিকে অধিক নির্ভরযোগ্য মনে করেন। ...” [3]
সালাফে সলিহীনদের থেকে ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে যে এখানে বোঝানো হয়েছে দুনিয়াতে তাঁকে এবং সাহাবীদেরকে কী করা হবে এ ব্যাপারে নবী(ﷺ) এর নিকট জ্ঞান ছিলো না। সামনে কী বিধান দেয়া হবে এ ব্যাপারে নবী(ﷺ) জানতেন না, যেহেতু তিনি গায়েব জানতেন না। আল্লাহ ওহী নাজিল করার পরেই তিনি এ ব্যাপারে জানতে পারতেন। এর স্বপক্ষে ইবন আব্বাস(রা.) থেকে একটি শানে নুযুলও বর্ণিত হয়েছে।
“আবু সালেহ হযরত ইবনে আব্বাস(রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন যে, রাসূল(ﷺ)-এর সাহাবীগণের উপর যখন বিপদাপদ প্রচণ্ডাকার ধারণ করল, তখন রাসূল(ﷺ) স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি এমন এক অঞ্চলে হিজরত করে যাচ্ছেন, যেখানে খেজুর বৃক্ষরাজী ও পানির সমাহার রয়েছে। তখন রাসূল(ﷺ) সে ঘটনা বর্ণনা করেন । ফলে তারাও এর দ্বারা সুসংবাদ গ্রহণ করল। পক্ষান্তরে তারা তাতে মুশরিকদের নিযার্তন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পন্থা পেল। অতঃপর তারা কিছু কাল সেখানে অবস্থান করে সে সুসংবাদের বাস্তবতা কিছুই দেখতে পেল না। সুতরাং তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে, ভূমি স্বপ্নে দেখেছিলেন সে দিকে কখন আমরা হিজরত করব? এতে রাসূল(ﷺ) নীরবতা অবলম্বন করেন, সে সময় আল্লাহ তা'আলা আলোচ্য আয়াতের مَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُ অংশটুকু নাজিল করেন।” [4]
এটি খুবই স্বাভাবিক যে ওহী পাবার আগে নবীদের পক্ষে এটি বলা সম্ভব না যে সামনে তাঁর নিকট কী বিধান দেয়া হবে। এই কথা বাইবেলের নবীদের ক্ষেত্রেও সত্য। কাজেই এখান থেকে এমন সিদ্ধান্তে আসা অযৌক্তিক যে নবী(ﷺ) নাজাতের ব্যাপারে অজ্ঞ!
আয়াতের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো সালাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে এখানে আখিরাতে নবী(ﷺ) এর সঙ্গে কী করা হবে সেটি বোঝানো হয়েছে। এটা তো ঠিক যে ওহী নাজিলের আগে নবী(ﷺ) এর পক্ষেও জানা সম্ভব না আখিরাতে তাঁর সহিত কী করা হবে। আয়াতে এই ঘোষণারই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তবে তাঁকে পরবর্তীতে ওহী দ্বারা জানিয়ে দেয়া হয়েছে তাঁর সঙ্গে আখিরাতে কী করা হবে। এই ব্যাখ্যা থেকেও এটি স্পষ্ট যে নবী(ﷺ) মোটেও নিজ পরিনতি বা নাজাতের ব্যাপারে অজ্ঞ নন।
“... “আমি জানি না আমার এবং তোমাদিগের ব্যাপারে কী করা হইবে” - আলী ইবনে আবু তালহা(র.) ইবনে আব্বাস(.রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, এই আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর لِّيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ
“আল্লাহ আপনার পূর্বাপর যাবতীয় ভুল মাফ করিয়া দিবেন” (সুরা ফাতহ ৪৮ : ২) অবতীর্ণ হয়। অনুরূপভাবে ইকরিমা, হাসান ও কাতাদা (র.) বলেন, উপরোক্ত আয়াতটি لِّيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ দ্বারা রহিত হইয়া গিয়াছে।
এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্(ﷺ)! আল্লাহ্ আপনার সাথে কী ব্যবহার করিবেন তাহা তো বলিয়া দিয়াছেন, কিন্তু তিনি আমাদিগের সাথে কেমন ব্যবহার করিবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তা'আলা নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন।
لِّيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
“আল্লাহ্ মু'মিন পুরুষ ও মু'মিন নারীদিগকে জান্নাতে প্রবেশ করাইবেন যাহার তলদেশে নির্ঝরমালা প্রবাহিত।”
সহীহ হাদীস দ্বারা এই কথাও প্রমাণিত যে, আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু আমাদের জন্য কী রহিয়াছে? তখন আল্লাহ তা'আলা এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।” [5]
সুরা ফাতহের ২য় আয়াত দ্বারা যে নবী(ﷺ) এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ত্রুটি মার্জনা করে নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করা হয়েছে এর আরো সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে সহীহ বুখারীর এক হাদিসে।
الْمُغِيْرَةَ يَقُوْلُ قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى تَوَرَّمَتْ قَدَمَاهُ فَقِيْلَ لَهُ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَفَلَا أَكُوْنُ عَبْدًا شَكُوْرًا.
অর্থঃ মুগীরাহ(রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী(ﷺ) এত অধিক সলাত আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, “আল্লাহ্ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দিয়েছেন।” তিনি বললেন, “আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?” [6]
আমরা দেখলাম সাহাবী-তাবিঈদের থেকে বর্ণিত রয়েছে যে সুরা আহকাফের আয়াতটির হুকুম মানসুখ হয়েছে (তবে তিলাওয়াত মানসুখ হয়নি), আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন নবী(ﷺ) এবং মুসলিমদের ব্যাপারে কী করা হবে। এ প্রসঙ্গে আলাদা করে আয়াতই নাজিল করে দেয়া হয়েছে। আল কুরআনে পরিষ্কার ভাবেই নবী(ﷺ) এবং মুসলিমদের সাথে কী করা হবে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামবিরোধীদের ভ্রান্তিপূর্ণ দাবির অসারতা এখানেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সালাফদের উভয় ব্যাখ্যার মূল প্রতিপাদ্য একই। মুহাম্মাদ(ﷺ) বা কোনো নবীই (আলাইহিমুস সালাম) গায়েব জানতেন না। গায়েবের জ্ঞানের একমাত্র মালিক আল্লাহ। তিনি ওহী নাজিল করে জানিয়ে দেবার আগে তাঁদের কেউই জানতেন না দুনিয়াতে কিংবা আখিরাতে তাঁদের সহিত কী করা হবে। আল্লাহ ওহী নাজিল করার পরেই তাঁরা এসব বৃত্তান্ত জানতে পারতেন। আল্লাহ তা’আলাই সকল জ্ঞানের অধিকারী, তিনিই দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবীগণ তো শুধু ওহীরই অনুসরণ করে কথা বলেন এবং তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে সতর্ক করা। সকল নবীরই কর্তব্য ছিলো এই সত্যটি নিজ নিজ সম্প্রদায়কে জানিয়ে দেয়া। সুরা আহকাফের আলোচ্য আয়াতে নবী(ﷺ)কে এই সত্যটিই ঘোষণা করবার আদেশ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে এটি বলা একদমই অপ্রাসঙ্গিক এবং অযৌক্তিক যে ইসলামে নাজাতের নিশ্চয়তা নেই বা মুহাম্মাদ(ﷺ) নিজের নাজাতের ব্যাপারে আদৌ জানতেন না।
■ আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যাঃ
এই প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত সহীহ বুখারীর হাদিসটির ব্যাখ্যায় ইবন হাজার আসকালানী(র.) তাঁর সুবিখ্যাত ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেছেন,
ولفظه : فوالله ما أدري وأنا رسول الله ما يفعل بي ولا بكم . قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ذلك موافقة لقوله تعالى في سورة الأحقاف : قل ما كنت بدعا من الرسل وما أدري ما يفعل بي ولا بكم وكان ذلك قبل نزول قوله تعالى : ليغفر لك الله ما تقدم من ذنبك وما تأخر لأن الأحقاف مكية ، وسورة الفتح مدنية بلا خلاف فيهما ، وقد ثبت أنه صلى الله عليه وسلم قال : أنا أول من يدخل الجنة . وغير ذلك من الأخبار الصريحة في معناه ، فيحتمل أن يحمل الإثبات في ذلك على العلم المجمل ، والنفي على الإحاطة من حيث التفصيل ..
অর্থঃ “আল্লাহ্র কসম, আমি আল্লাহ্র রসূল হওয়া সত্ত্বেও জানি না আল্লাহ আমার সাথে কী ব্যবহার করবেন ” – এই কথাটি রাসুলুল্লাহ(ﷺ) সুরা আহকাফে আল্লাহর এই বাণীর সমর্থনে বলেছেনঃ “বল, ‘আমি রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে।” (সুরা আহকাফ ৪৬ : ৯) আর এ ঘটনা এই আয়াতটি নাজিলের পূর্বে ঘটেছেঃ “যেন আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন” (সুরা ফাতহ ৪৮ : ২)। আহকাফ মাক্কী সুরা এবং ফাতহ মাদানী সুরা আর এই দুই সুরার তথ্যের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আর এটিও প্রমাণিত বিষয় যে তিনি(ﷺ) বলেছেনঃ “আমিই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবো”। [7] একই রকম অর্থের এ সংক্রান্ত আরো বর্ণনা রয়েছে। এমনটি হওয়া সম্ভব যে, সাব্যস্ত করার বিষয়টা তিনি সংক্ষিপ্ত জ্ঞানের ক্ষেত্রে (তিনি জানতেন না আল্লাহ তাঁর সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন) বলেছেন আর নাকচ করার বিষয়টা তিনি বিস্তারিত জ্ঞানের ক্ষেত্রে বলেছেন।” [8]
■ নবী(ﷺ) নিজ নাজাত ও পরিনতির ব্যাপারে জানতেনঃ
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ওহী লাভের পূর্বে মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নিকট নাজাত সম্পর্কে বা নিজ পরিনতি সম্যক জ্ঞান থাকা সম্ভব ছিলো না। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে এ ব্যাপারে ওহী প্রদান করার পর তিনি অবশ্যই এ ব্যাপারে জ্ঞান লাভ করেছিলেন। এ ব্যাপারে বহু দলিল রয়েছে।
আল কুরআনে নবী(ﷺ)কে তাহাজ্জুদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ‘মাকামাম মাহমুদ’ বা প্রশংসিত অবস্থানের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
অর্থঃ “আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।” [9]
আলোচ্য আয়াতে عَسَىٰ (আশা করা যায়) কথাটি এসেছে। এই শব্দের অর্থ আলোচনা করতে গিয়ে উইলিয়াম লেনের অভিধানে (Lane's Lexicon) বলা বলা হয়েছেঃ
عَسَىٰ is a preterite verb, [used in the sense of the present,] aplastic, not perfectly inflected, of the verbs of appropinquation, implying hope, and eager desire, and sometimes opinion, and certainty; [10]
অর্থাৎ কখনো কখনো এর দ্বারা নিশ্চয়তাও (certainty) বোঝানো হয়। আর এখানেও এটিই ঘটেছে। এখানে ‘নিশ্চিত’ অর্থে এটি এসেছে। [11] আল্লাহ তা’আলা নবী(ﷺ)কে এটিও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁকে কিয়ামতের দিন ‘মাকামাম মাহমুদ’ বা প্রশংসিত অবস্থান প্রদান করবেন। এ প্রসঙ্গে বহু হাদিস আছে।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) থেকে বর্ণিত তিনি এ আয়াতে مقام محمود “মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থান” সম্পর্কে বলেছেনঃ “এটা সে স্থান যেখান থেকে আমি আমার উম্মাতের জন্য শাফা’আত করব।” [12]
হাশরের ময়দানে যখন সমগ্ৰ মানব জাতি একত্রিত হবে এবং প্রত্যেক নবীর কাছেই শাফাআতের দরখাস্ত করবে, তখন সব নবীই শাফা’আত করতে অপারগতা প্রকাশ করবেন। তখন কেবল মুহাম্মাদ(ﷺ)ই সমগ্ৰ মানবজাতির জন্যে শাফাআত করবেন। এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে উমর(রা.) বলেনঃ কিয়ামতের দিন লোকেরা দলে দলে বিভক্ত হবে। প্রত্যেক উম্মত তার নিজের নবীর কাছে যাবে। তারা বলবে, হে অমুক (নবী)! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফা’আত করুন। হে অমুক (নবী)!! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফা’আত করুন। (কিন্তু তারা কেউ শাফা’আত করতে রাযী হবেন না)। শেষ পর্যন্ত শাফাআতের দায়িত্ব এসে পড়বে নবী [মুহাম্মাদ (ﷺ)] এর উপর। আর এই দিনেই আল্লাহ তাকে মাকামে মাহমুদে দাঁড় করবেন।” [13]
আবু হুরাইরাহ(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “আমি কিয়ামতের দিন আদম সন্তানদের সরদার হব এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যার কবর খুলে যাবে এবং আমিই প্রথম সুপারিশকারী ও প্রথম সুপারিশ গৃহীত ব্যক্তি।” [14]
আনাস ইবন মালেক(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন,
«آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتفْتِحُ، فَيَقُولُ الْخَازِنُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَأَقُولُ: مُحَمَّدٌ، فَيَقُولُ: بِكَ أُمِرْتُ لَا أَفْتَحُ لِأَحَدٍ قَبْلَكَ»
অর্থঃ “আমি কিয়ামতের দিন জান্নাতের গেটে এসে জান্নাত খুলে দিতে বলবো। তখন দারোয়ান প্রশ্ন করবে, আপনি কে? আমি বলবো, আমি মুহাম্মাদ। তখন সে বলবে, আমাকে নির্দেশ দেওয়া আছে যে, আপনার পূর্বে আমি যেন কারো জন্য জান্নাতের দরজা খুলে না দেই”। [15]
উবাই ইবনে কা‘ব(রা.) থেকে শক্তিশালী সনদে বর্ণিত, নবী(ﷺ) বলেন-
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ كُنْتُ إِمَامَ النَّبِيِّينَ وَخَطِيبَهُمْ، وَصَاحِبَ شَفَاعَتِهِمْ غَيْرَ فَخْرٍ.
অর্থঃ “কিয়ামত দিবসে আমি সকল নবীর ইমাম হব। তাঁদের খতীব হব এবং শাফাআতকারীও হব। (এটা আল্লাহর নিআমত,) কোনো গর্ব নয়।” [16]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِنِّي لَأَوَّلُ النَّاسِ تَنْشَقُّ الْأَرْضُ عَنْ جُمْجُمَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا فَخْرُ، وَأُعْطَى لِوَاءَ الْحَمْدِ وَلَا فَخْرُ، وَأَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا فَخْرُ، وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا فَخْرُ، وَآتِي بَابَ الْجَنَّةِ فَآخُذُ بِحَلْقَتِهَا فَيَقُولُونَ: مَنْ هَذَا؟، فَأَقُولُ أَنَا مُحَمَّدٌ، فَيَفْتَحُونَ لِي فَأَدْخُلُ فَأَجِدُ الْجَبَّارَ مُسْتَقْبِلِي، فَأَسْجُدُ لَهُ، فَيَقُولُ: ارْفَعْ رَأْسَكَ يَا مُحَمَّدُ وَتَكَلَّمْ، يُسْمَعْ مِنْكَ، وَقُلْ، يُقْبَلْ مِنْكَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي أُمَّتِي يَا رَبّ، فَيَقُولُ: اذْهَبْ إِلَى أُمَّتِكَ، فَمَنْ وَجَدْتَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ شَعِيرٍ مِنْ الْإِيمَانِ، فَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ،
অর্থঃ আনাস ইবনু মালিক(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ(ﷺ)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ‘আমিই হলাম সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার মাথার উপর থেকে মাটি ফেটে যাবে, কিন্তু এতে কোন অহংকার নেই। আর আমাকে প্রশংসার পতাকা দেয়া হবে, তাতেও কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব মানবজাতির নেতা, এতেও আমার কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি, এতেও কোন অহংকার নেই। আর আমি জান্নাতের দরজায় এসে কড়া নাড়বো, তখন তারা (জান্নাতের প্রহরীরা) বলবে: এ ব্যক্তি কে? তখন আমি বলব: ‘আমি মুহাম্মদ’। ফলে আমার জন্য তারা জান্নাতের দরজা খুলে দিবে আর আমি তাতে প্রবেশ করেই ‘আল-জাব্বার’ (মহাপ্রতাপশালী) আল্লাহ’কে আমার সম্মুখেই পাব, ফলে আমি তাঁকে সাজদা করব, তখন তিনি বলবেন: ইয়া মুহাম্মদ, তোমার মাথা উঠাও, তুমি কথা বল, তোমার কথা শোনা হবে; তুমি বল, তোমার বক্তব্য কবুল করা হবে; তুমি শাফা’আত কর, তোমার শাফা’আত গৃহীত হবে।’ তখন আমি মাথা উঠাব এবং বলব: ‘হে রব! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত। তখন তিনি বলবেন: তুমি তোমার উম্মতের নিকট যাও, (তাদের মধ্য থেকে) যার অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান পাবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তারপর আমি (তাদের নিকট) যাব, (তাদের মধ্য থেকে) যাদের অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান পাব, তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। … … …’ [17]
নবী(ﷺ) ওহী পাবার পরে নিজ পরিনতি ও নাজাতের ব্যাপারে কী সংবাদ দিয়ে গেছেন এর কিছু উদাহরণ আমরা উপরে দেখলাম। ইসলামের শত্রুরা এখানে অর্ধেক সত্য উপস্থাপন করে। তারা ওহী লাভের পূর্বে নবী(ﷺ) এর নিকট জ্ঞান ছিলো না – শুধু এই রেফারেন্স দেখায়। কিন্তু ওহী পাবার পরে যে তিনি এই ব্যাপারে জ্ঞান লাভ করেছেন সে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়। এরূপ অর্ধসত্য মূলত মিথ্যারই শামিল।
■ নবী(ﷺ) বহু মানুষের নাজাত লাভের কথা বলেছেন, জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেনঃ
নবী(ﷺ) তাঁর উম্মতের নাজাতের ব্যাপারে বহু সংবাদ দিয়ে গেছেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বহু মানুষের জান্নাতী হবার সুসংবাদও দিয়ে গেছেন। যেমনঃ
➫ আশারায়ে মুবাশশারা বা ১০ জন সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীঃ
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَبُو بَكْرٍ فِي الْجَنَّةِ وَعُمَرُ فِي الْجَنَّةِ وَعُثْمَانُ فِي الْجَنَّةِ وَعَلِيٌّ فِي الْجَنَّةِ وَطَلْحَةُ فِي الْجَنَّةِ وَالزُّبَيْرُ فِي الْجَنَّةِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ فِي الْجَنَّةِ وَسَعْدٌ فِي الْجَنَّةِ وَسَعِيدٌ فِي الْجَنَّةِ وَأَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ فِي الْجَنَّةِ "
অর্থঃ আবদুর রহমান ইবনু আওফ(রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “আবু বাকর জান্নাতী, উমার জান্নাতী, উসমান জান্নাতী, আলী জান্নাতী, তলহা জান্নাতী, যুবাইর জান্নাতী, 'আবদুর রহমান ইবনু আওফ জান্নাতী, সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস জান্নাতী, সাঈদ জান্নাতী এবং আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ জান্নাতী।” [18]
এই ১০ জন সাহাবী “আশারায়ে মুবাশশারা” নামে পরিচিত। মুসলিমরা শিশুকাল থেকে এই ১০ সাহাবীর নাম শুনে বড় হয়। বড় অদ্ভুত লাগে যখন কিছু ইসলামবিরোধী এরপরেও বলতে চায়ঃ নবী(ﷺ) কারো নাজাতের ব্যাপারে জানতেন না! আর তাদের জন্যেও আফসোস যারা ইসলামের এতোটুকু সাধারণ জ্ঞানও না রেখে ইসলামবিরোধীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে ঈমানহারা হয়েছে।
➫ বদর যুদ্ধ ও হুদায়বিয়ার সন্ধিতে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণঃ
عَنْ جَابِرٍرضي الله عنهقَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم: لَنْ يَدْخُلَ النَّارَ رَجُلٌ شَهِدَ بَدْرًا وَالْحُدَيْبِيَةَ
অর্থঃ জাবের(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন: “বদরের যুদ্ধে এবং হুদাইবিয়ার সন্ধিতে অংশগ্রহণকারী কোনো লোক জাহান্নামী হবে না।” [19]
➫ মুহাজির সাহাবীগণঃ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍورضي الله عنه، قَالَ : قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِصلى الله عليه وسلم :«أَتَعْلَمُ أَوَّلُ زَمْرَةَ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِيْ ؟»قَالَ : اَللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ فَقَالَ : اَلْمُهَاجِرُوْنَ يَأْتُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ وَيَسْتَفْتِحُوْنَ، فَيَقُوْلُ لَهُمْ الْخَزَنَةُ، أَوْ قَدْ حُوْسِبْتُمْ؟ فَيَقُوْلُوْنَ بِأَيِّ شَيْءٍ نُحَاسِبُ؟ وَإِنَّمَا كَانَتْ أَسْيَافُنَا عَلَى عَوَاتِقِنَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، حَتَّى مِتْنَا عَلَى ذَلِكَ؟ قَالَ : فَيُفْتَحُ لَهُمْ ، فَيَقِيْلُوْنَ فِيْهِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَهَا النَّاسُ
অর্থঃ “আবদুল্লাহ ইবন আমর(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন: তোমরা কি জান যে, আমার উম্মতের মধ্যে কোন দলটি সর্ব প্রথম জান্নাতে যাবে? আমি বললাম: আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তখন তিনি বললেন: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারীরা কিয়ামতের দিন জান্নাতের দরজায় আসবে আর তাদের জন্য দরজা খুলে যাবে। জান্নাতের দারওয়ান তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে- তোমাদের হিসাব নিকাশ হয়ে গেছে? তখন তারা বলবে কিসের হিসাব? আমাদের তরবারি আল্লাহর পথে আমাদের কাঁধে ছিল আর ঐ অবস্থায়ই আমরা মৃত্যুবরণ করেছি। তখন জান্নাতের দরজা তাদের জন্য খুলে দেয়া হবে। আর তারা অন্যদের জান্নাতে প্রবেশের চল্লিশ বছর পূর্বে সেখানে প্রবেশ করে আনন্দের অবস্থান করতে থাকবে।” [20]
➫ হাসান ও হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা):
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ "
অর্থঃ আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “আল-হাসান ও আল-হুসাইন (রা.) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার।” [21]
➫ যায়েদ ইবন আমর ইবন নুফাইল(র.):
عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ لِزَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ دَرَجَتَيْنِ
অর্থঃ “আয়িশা(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন: আমি জান্নাতে প্রবেশ করে যায়েদ ইবন আমর ইবন নুফাইলের দু’টি স্তর দেখতে পেলাম।” [22]
➫ জা‘ফর ইবন আবু তালিব এবং হামযা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা):
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عهنما قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِصلى الله عليه وسلم دَخَلْتُ الْجَنَّةَ الْبَارِحَةَ فَنَظَرْتُ فِيْهَا فَاِذَا جَعْفُرٌ يَطِيْرُ مَعَ الْمَلَائِكَةِ وَاِذَا حَمْزَةُ مُتَّكِئٌ عَلَى سَرِيْرٍ
অর্থঃ “ইবনে আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন: গতরাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম যে, জা‘ফর ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছে। আর হামযা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে।” [23]
➫ বিলাল ও উম্মে সুলাইম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা):
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أُرِيتُ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ امْرَأَةَ أَبِي طَلْحَةَ ثُمَّ سَمِعْتُ خَشْخَشَةً أَمَامِي فَإِذَا بِلاَلٌ "
অর্থঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “আমাকে জান্নাত দেখানো হয়েছে যে, আমি আবূ তালহার সহধর্মিণীকে [উম্মে সুলাইম(রা.)] দেখলাম। তারপর আমার সম্মুখে পদধ্বনি শুনতে পেলাম, লক্ষ্য করে দেখি তিনি বিলাল।” [24]
➫ মারইয়াম, ফাতিমা, খাদিজা ও আসিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম):
عَنْ جَابِرٍرضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم: سَيِّداتُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ بَعْدَ مَرْيَمَ بنتِ عِمْرَانَ، فَاطِمَةُ، وَخَدِيجَةُ، وَآسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ
অর্থঃ জাবির(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “জান্নাতি নারীদের সরদার মারইয়াম বিনতে ইমরান এর পরে ফাতেমা, খাদিজা ও ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া।” [25]
➫ উম্মাহর বহু সংখ্যক মানুষঃ
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، حَدَّثَهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي زُمْرَةٌ هُمْ سَبْعُونَ أَلْفًا تُضِيءُ وُجُوهُهُمْ إِضَاءَةَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ " . قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ الأَسَدِيُّ يَرْفَعُ نَمِرَةً عَلَيْهِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ مِنْهُمْ " ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ "
অর্থঃ আবূ হুরাইরাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের একটি দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সংখ্যা হবে সত্তর হাজার। তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাদের ন্যায় চমকাতে থাকবে। আবূ হুরাইরাহ (রা.) বলেন, তখন উক্কাশাহ ইবনু মিহসান আসাদী দাঁড়ালেন। তার গায়ে একটি চাঁদর ছিল। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দু'আ করুন তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! একে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। এরপর আরেকজন আনসারী দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনি আল্লাহর কাছে দু'আ করুন তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ এ সুযোগ লাভে উক্কাশাহ তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে। [26]
অনুরূপ আরো বিশুদ্ধ হাদিসের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়ঃ উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার ৪৯০ কোটি মানুষ বিনা হিসাব ও আযাবে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে। [27]
এমনিভাবে ওহীর মাধ্যমে আরো বহু মানুষের জান্নাতী হবার সুসংবাদ দিয়ে গেছেন নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)। শুধু তাই না, আল কুরআন ও হাদিসে বহু ব্যক্তির জাহান্নামী হবার সংবাদও দেয়া হয়েছে। যেমনঃ আবু লাহাব, আবু জাহল, মুসা(আ.) এর সময়কার মিসরের ফিরআউন, ইবলিস এবং আরো অনেকে। সুনির্দিষ্টভাবে নাম উল্লেখ করে এতো বিপুল পরিমাণ ব্যক্তির জান্নাত ও জাহান্নাম লাভের সংবাদ কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় যা আলাদাভাবে উল্লেখ করলে স্বতন্ত্র একটি বই হয়ে যেতে পারে। প্রবন্ধের কলেবর বড় হয়ে যাবার আশঙ্কায় এখানে আর উল্লেখ করা হলো না। আগ্রহী পাঠকরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ‘ইসলাম হাউজ’ থেকে প্রকাশিত ‘জান্নাত ও জাহান্নাম এর সংবাদপ্রাপ্ত নারী-পুরুষগণ’ বইটি পড়তে পারেন। [28] আশা করি পাঠকের নিকট এখন এটি দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যারা দাবি করে “নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) নিজের বা অন্য কারো নাজাতের ব্যাপারে জানতেন না” - তাদের দাবি কী চরম মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে। একটি আয়াতকে প্রসঙ্গবিহীন উদ্ধৃত করে এবং অন্য সকল আয়াত ও হাদিসকে এড়িয়ে গিয়ে তারা এহেন মিথ্যার বেসাতি করে থাকে।
■ ইসলামে নাজাতের নিশ্চয়তাঃ
যে ব্যক্তি আল কুরআন পাঠ করবে, সে এর পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় তাওহিদ, পরকাল ও নাজাতের বাণী পাবে। হাদিসের গ্রন্থগুলোতেও নাজাতের নানা বাণীতে পরিপূর্ণ। কুরআন এবং হাদিসের মধ্যে অনেকগুলো কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো করলে মানুষ আখিরাতে নাজাত বা পরিত্রাণ পাবে এবং জান্নাত লাভ করবে। যেসব ইসলামবিরোধী দাবি করে যে ইসলামে কোনো নাজাত নেই – তারা সত্যের ঠিক ১৮০ ডিগ্রি উল্টো কথা বলে।
ইসলামে একের পাপের ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে অন্যায্যভাবে নাজাতের ধারণা দেয়া হয়নি। বরং যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে, এর উপর অবিচল থেকেছে – আল কুরআন এবং হাদিসে বারংবার তাদের নাজাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। সৎকাজগুলো কী রূপে হতে পারে এর বিস্তারিত বহু উদাহরণও দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা নিজ পাপের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবাহ করেছে, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
( 107 ) إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
( 108 ) خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا
অর্থঃ "নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।" [29]
( 30 ) إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ
( 31 ) نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ
( 32 ) نُزُلًا مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيمٍ
অর্থঃ “নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’। ‘আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু এবং আখিরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরো থাকবে যা তোমরা দাবী করবে। পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ।” [30]
قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ ۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
অর্থঃ “বল, ‘আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য প্রতিপালককে অন্বেষণ করব? অথচ তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক। প্রত্যেকেই স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না। অতঃপর তোমাদের প্রতিপালকের নিকটেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে, তারপর যে বিষয়ে তোমরা মতান্তর ঘটিয়েছিলে তা তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।” [31]
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থঃ “বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [32]
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ شَيْئًا
অর্থঃ “কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন জুলুম করা হবে না।” [33]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى ". قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ " مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى "
অর্থঃ “আবূ হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করল।” [34]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ "
অর্থঃ “আবূ হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইলম তালাশ করতে পথ চলে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” [35]
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ، فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا ". وَقَالَ بِإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى.
অর্থঃ সাহল ইবনু সা'দ(রা.) থেকে বর্ণিত যে নবী(ﷺ) বলেছেনঃ “আমি ও ইয়াতীমের তত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকবো।” এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে ইশারা করে দেখান। [36]
عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ، فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ يَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا، وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ، فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَالْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا.
অর্থঃ আবদুল্লাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। নবী(ﷺ) বলেনঃ “তোমরা অবশ্যই সত্যের ধারক হবে। কেননা সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে পথ দেখায় এবং কল্যাণ জান্নাতের দিকে পথ দেখায়। কোন ব্যক্তি সত্যবাদিতা অবলম্বন করে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যাশ্রয়ী বলে তালিকাভুক্ত হয়। সাবধান! তোমরা মিথ্যা পরিহার করবে। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে চালিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি মিথ্যাচার অবলম্বন করে এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যাবাদীর তালিকাভুক্ত হয়।” [37]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ جِئْتُ فَلَمَّا تَبَيَّنْتُ وَجْهَهُ عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ. فَكَانَ أَوَّلُ مَا قَالَ: «أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الْأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلام»
অর্থঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী(ﷺ) মদীনায় আগমন করার পর আমি তাঁর কাছে গেলাম। তাঁর ‘চেহারা মুবারাক’ দেখেই আমি চিনতে পেরেছি এ কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না। সর্বপ্রথম তিনি যে কথা বলেছিলেন তা ছিল, ‘‘হে লোকেরা! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করো, রাতের বেলা যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকবে, তখন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় কর, তাহলে প্রশান্তচিত্তে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [38]
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَاتَ رَجُلٌ فَقِيلَ لَهُ قَالَ كُنْتُ أُبَايِعُ النَّاسَ فَأَتَجَوَّزُ عَنْ الْمُوسِرِ وَأُخَفِّفُ عَنْ الْمُعْسِرِ فَغُفِرَ لَهُ قَالَ أَبُو مَسْعُودٍ سَمِعْتُهُ مِنْ النَّبِيِّ
অর্থঃ হুযাইফাহ(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী(ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, “একজন লোক মারা গেল, তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কী বলতে? সে বলল, আমি লোকজনের সাথে বেচা-কেনা করতাম। ধনীদেরকে অবকাশ দিতাম এবং গরীবদেরকে হ্রাস করে দিতাম। কাজেই তাকে মাফ করে দেয়া হল।” আবূ মাসঊদ(রা.) বলেন, “আমি নবী(ﷺ) -এর নিকট হতে এ হাদীস শুনেছি।” [39]
أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَهُمْ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: مَنْ كَانَ لَهُ ثَلاَثُ بَنَاتٍ، يُؤْوِيهِنَّ، وَيَكْفِيهِنَّ، وَيَرْحَمُهُنَّ، فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ الْبَتَّةَ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَعْضِ الْقَوْمِ: وَثِنْتَيْنِ، يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: وَثِنْتَيْنِ.
অর্থঃ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ(রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ যার তিনটি কন্যা সন্তান আছে এবং সে তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে তাদের ব্যয়ভার বহন করে এবং তাদের সাথে দয়ার্দ্র ব্যবহার করে, তার জন্য বেহেশত অবধারিত হয়ে যায়। লোকজনের মধ্য থেকে একজন বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কারো যদি দুটি কন্যা সন্তান থাকে? তিনি বলেনঃ দুইটি কন্যা সন্তান হলেও। [40]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا " . قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا . قَالَ " فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً " . قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا . قَالَ " فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا " . قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا . قَالَ " فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا " . قَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه أَنَا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ "
অর্থঃ আবূ হুরায়রাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ আজ তোমাদের মধ্যে কে রোযা রেখেছে? আবূ বাকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে জানাযার সাথে গেছে? আবূ বাকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে মিসকীনকে খাবার দিয়েছে? আবূ বাকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গেছে? আবূ বাকর(রা.) বললেন, আমি। অতঃপর রসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ যখন কোন ব্যক্তির মধ্যে এসব কাজের সমাবেশ ঘটে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। [41]
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ "
অর্থঃ “আবূ উমামা(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ আমি সে ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী ঘরের যিম্মাদার, যে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্বেও ঝগড়া পরিহার করে। আর যে ব্যক্তি হাসি-তামাসার মধ্যেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের উঁচুস্থানে একটি ঘরের যিম্মাদার হব। আর যে ব্যক্তি সদ্ব্যবহার করে, তার জন্য আমি জান্নাতের উচ্চতম স্থানে একটি ঘরের যিম্মাদার।” [42]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " أَنَّ رَجُلاً رَأَى كَلْبًا يَأْكُلُ الثَّرَى مِنَ الْعَطَشِ، فَأَخَذَ الرَّجُلُ خُفَّهُ فَجَعَلَ يَغْرِفُ لَهُ بِهِ حَتَّى أَرْوَاهُ، فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ فَأَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ "
অর্থঃ আবূ হুরাইরাহ(রা.) হতে বর্ণিত। নবী(ﷺ) বলেনঃ “(পূর্ব যুগে) জনৈক ব্যক্তি একটি কুকুরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ভিজা মাটি চাটতে দেখতে পেয়ে তার মোজা নিল এবং কুকুরটির জন্য কুয়া হতে পানি এনে দিতে লাগল যতক্ষণ না সে ওর তৃষ্ণা মিটাল। আল্লাহ্ এর বিনিময় দিলেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।” [43]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَرْأَةُ إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ»
অর্থঃ আনাস(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, ‘‘কোনো নারী তার পাঁচ ওয়াক্তের সলাত পড়লে, রমযানের সিয়াম পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর আনুগত্য করলে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।” [44]
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، أَنَّهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَيْهِ وَهُوَ فِي الْمَوْتِ فَبَكَيْتُ فَقَالَ مَهْلاً لِمَ تَبْكِي فَوَاللَّهِ لَئِنِ اسْتُشْهِدْتُ لأَشْهَدَنَّ لَكَ وَلَئِنْ شُفِّعْتُ لأَشْفَعَنَّ لَكَ وَلَئِنِ اسْتَطَعْتُ لأَنْفَعَنَّكَ ثُمَّ قَالَ وَاللَّهِ مَا مِنْ حَدِيثٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَكُمْ فِيهِ خَيْرٌ إِلاَّ حَدَّثْتُكُمُوهُ إِلاَّ حَدِيثًا وَاحِدًا وَسَوْفَ أُحَدِّثُكُمُوهُ الْيَوْمَ وَقَدْ أُحِيطَ بِنَفْسِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله
অর্থঃ ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত(রা.) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্(ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি বলে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং মুহাম্মাদ(ﷺ) তাঁর বান্দা ও রসূল, আর নিশ্চয় ‘ঈসা (আ.) আল্লাহর বান্দা, তাঁর বান্দীর (মারইয়ামের) পুত্র ও তাঁর সে কালিমা- যা তিনি মারইয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি ‘রুহ’ মাত্র, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য” - আল্লাহ তাকে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করাতে চাইবেন, প্রবেশ করাবেন।” [45]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خَمْسٌ مَنْ جَاءَ بِهِنَّ مَعَ إِيمَانٍ دَخَلَ الْجَنَّةَ مَنْ حَافَظَ عَلَى الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ عَلَى وُضُوئِهِنَّ وَرُكُوعِهِنَّ وَسُجُودِهِنَّ وَمَوَاقِيتِهِنَّ وَصَامَ رَمَضَانَ وَحَجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَأَعْطَى الزَّكَاةَ طَيِّبَةً بِهَا نَفْسُهُ وَأَدَّى الأَمَانَةَ " . قَالُوا يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ وَمَا أَدَاءُ الأَمَانَةِ قَالَ الْغُسْلُ مِنَ الْجَنَابَةِ .
অর্থঃ আবূ দারদা(রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচটি কাজ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (১) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু ও রুকু’ সাজদাহ্ সহকারে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করবে, (২) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, (৩) পথ খরচের সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ করবে, (৪) সন্তুষ্ট চিত্তে যাকাত আদায় করবে, এবং (৫) আমানত আদায় করবে। লোকেরা বলল, হে আবূ দারদা! আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বললেন, অপবিত্র হলে গোসল করা।” [46]
আমরা উপরে বেশ কিছু সৎকর্মের বিবরণ দেখলাম যেগুলোর দ্বারা একজন ঈমানদার ব্যক্তি আখিরাতে নাজাত বা পরিত্রাণ পেতে পারে তথা জান্নাত লাভ করতে পারে। ঈমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে আল্লাহর অনুগ্রহে অবশ্যই তার জন্য নাজতের নিশ্চয়তা আছে। কুরআন-হাদিসে এতো বিপুল পরিমাণে নাজাত লাভের উপায় বাতলে দেয়া হয়েছে যার সবগুলোর উল্লেখ করলে বিশাল কলেবরের বই হয়ে যাবে। আগ্রহী পাঠকরা এ ব্যাপারে জানতে ইউসূফ মুহাম্মদ আল-‘উওয়াইদ এর 'কীভাবে আপনি জান্নাত লাভ করবেন' বইটি পড়তে পারেন। [47] যে ইসলাম এভাবে মানবজাতিকে নাজাতের পন্থা বাতলে দিয়েছে, ঈমান ও সৎকর্মের দ্বারা একজন মানুষের নাজাতের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে, সেই ইসলামের বিরুদ্ধে লাগামহীন মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালায় কিছু মানুষ। আমরা আল্লাহর নিকট তাদের হেদায়েত প্রার্থনা করছি।
■ বাইবেলের নবীরা কি নিজেদের ব্যাপারে জানতেন?
“নবী(ﷺ) নিজেই জানতেন না তাঁর পরিনতি কী” (!) - ইসলামের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ মূলত খ্রিষ্টান মিশনারীরা করে থাকেন। আমরা উপরের আলোচনায় দেখেছি তাদের এহেন প্রচারণা কেমন অসার ও ভিত্তিহীন। মজার ব্যাপার হলো, বাইবেলেই দেখা যায় নবীগণ নিজেদের ব্যাপারে অথবা নিজ পরিনতির ব্যাপারে অজ্ঞ!
➫ যোহন বাপ্তাইজক জানতেন না যে তিনি আসলে এলিয়!:
বাইবেলের একজন অন্যতম নবী হচ্ছেন যোহন বাপ্তাইজক [John The Baptist / তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া]। যিশুখ্রিষ্ট তাঁর ব্যাপারে বলেছেন,
“আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকল মানুষের মধ্যে যোহনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই। ...” (BBS)
“I tell you, among those born of women there is no one greater than John; ... ” (NIV) [48]
অথচ বাইবেলের এতো বড় মহান একজন নবীই জানতেন না যে তিনি আসলে কে! যিশুখ্রিষ্ট বলেছেন, যোহনই হচ্ছেন ভাববাদী এলিয় (Prophet Elijah / নবী ইলিয়াস), ইহুদিরা যার পুনরাগমনের প্রতীক্ষা করছিলো।
“তোমরা যদি একথা বিশ্বাস করতে রাজী থাক তবে শোন, এই যোহনই সেই ভাববাদী এলীয়, যার আসবার কথা ছিল৷” (BBS)
“And if you are willing to accept it, he is the Elijah who was to come.” (NIV) [49]
অথচ ভাববাদী এলিয়র জন্য প্রতীক্ষারত ইহুদিরা যখন যোহনকে জিজ্ঞেস করে যে তিনি কে, উত্তরে যোহন সরাসরি বলে দেন যে তিনি এলিয় না!
“তখন তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে আপনি কে? আপনি কি এলিয়? যোহন বললেন, ‘না, আমি এলিয় নই৷’ … …” (BBS)
They asked him, “Then who are you? Are you Elijah?” He said, “I am not. … …” (NIV) [50]
বাইবেলের এতো বড় একজন নবী হয়েও যোহন জানেন না তিনি আসলে এলিয়। এটা নিয়ে খ্রিষ্টান মিশনারীদের কোনো সমস্যা নেই। যোহনের নবুয়ত নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু মুহাম্মাদ(ﷺ)কে নিয়ে তাদের অনেক সমস্যা। যোহনের ক্ষেত্রে তারা এক স্ট্যান্ডার্ড প্রয়োগ করে, মুহাম্মাদ(ﷺ) এর ক্ষেত্রে আরেক।
➫ যিশু নিজ মৃত্যুর স্থানের ব্যাপারে জানতেন না!:
যোহন বাপ্তাইজক তো শুধু একজন নবী; খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসমতে যিশুখ্রিষ্ট একই সঙ্গে নবী এবং ঈশ্বর। ঈশ্বরের মানবরূপ। কিন্তু বাইবেল অনুযায়ী ঈশ্বরের এই মানবরূপ নিজেই নিজের মৃত্যুর স্থানের ব্যাপারে ভুল কথা বলেছেন। অর্থাৎ নিজ পরিনতির ব্যাপারে যিশুর অজ্ঞতা ছিলো!
যিশুখ্রিষ্ট বলেছেন, কোনো ভাববাদী বা নবী জেরুজালেমের বাইরে মরতে পারেন না।
“আমি আমার পথে চলতেই থাকব, কারণ জেরুশালেমের বাইরে কোন ভাববাদী প্রাণ হারাবে তেমনটি হতে পারে না৷” (BBS)
“In any case, I must press on today and tomorrow and the next day—for surely no prophet can die outside Jerusalem!” (NIV) [51]
বাইবেলে যিশুকে একজন ভাববাদী (নবী) বলা হয়েছে। [52] অথচ বাইবেলের বর্ণনামতে ভাববাদী হওয়া সত্ত্বেও তিনি জেরুজালেম নগরের বাইরে মারা যান! সেই স্থানটি জেরুজালেমের কাছেই ছিলো, কিন্তু তা ছিলো জেরুজালেম নগর থেকে বাইরে।
"ঠিক সেই মতোই যীশু নগরের বাইরে দুঃখভোগ করলেন৷ যীশু বলি হলেন যেন তাঁর নিজের রক্তে তাঁর লোকদের পবিত্র করতে পারেন৷" (BBS)
"And so Jesus also suffered outside the city gate to make the people holy through his own blood." (NIV) [53]
"তখন অনেক ইহুদী সেই ফলকটি পড়ল, কারণ যীশুকে য়েখানে ক্রুশে দেওযা হয়েছিল তা নগরের কাছেই ছিল, আর সেই ফলকের লেখাটি ইহুদীদের ভাষা, গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষায় ছিল৷" (BBS)
"Many of the Jews read this sign, for the place where Jesus was crucified was near the city, and the sign was written in Aramaic, Latin and Greek." (NIV) [54]
আমরা দেখলাম (খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী) স্বয়ং ঈশ্বর এবং নবী হওয়া সত্ত্বেও যিশুখ্রিষ্ট নিজের মৃত্যুর ব্যাপারে সব কিছু জানতেন না। “মুহাম্মাদ(ﷺ) নিজের পরিনতির ব্যাপারে জানতেন না” (!) – এই কথা প্রচার করে মিশনারীরা ইসলামকে মিথ্যা ধর্ম প্রমাণ করতে চান। কিন্তু তাদের ধর্মগ্রন্থই এটা বলছে যে তাদের ‘ঈশ্বর’ই নিজ মৃত্যুর ব্যাপারে সম্যকভাবে জানতেন না!
(খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী) স্বয়ং ঈশ্বর এবং নবী হওয়া সত্ত্বেও যিশুখ্রিষ্ট আরো অনেক বিষয়েই অজ্ঞ ছিলেন। যেমনঃ
➫ যিশু শেষ বিচারের দিন ও মুহূর্তের কথা জানতেন নাঃ
খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে যিশু মানবজাতির বিচার করবেন। অথচ ‘সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর’ হয়েও যিশুখ্রিষ্ট জানতেন না তিনি যেই দিনে মানবজাতির বিচার করবেন, সেই দিনের কথা!
‘সেই দিন ও মুহূর্ত্তের কথা কেউ জানে না, এমন কি স্বর্গদূতেরা অথবা পুত্র নিজেও তা জানেন না, কেবলমাত্র পিতা (ঈশ্বর) তা জানেন৷ (BBS)
“But about that day or hour no one knows, not even the angels in heaven, nor the Son, but only the Father.” (NIV) [55]
➫ যিশু জানতেন না কোন মৌসুমে ডুমুর গাছে ফল হয়!:
নাজাত কিংবা শেষ বিচারের দিনক্ষণ জানা তো অনেক বড় বিষয়; বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী একটা ডুমুর গাছে কোন মৌসুমে ফল হয় যিশু সেটাও জানতেন না। শুধু তাই না, অকালে ফল না হবার কারণে যিশু অভিশাপ দিয়ে সেই নির্দোষ ডুমুর গাছটির ফল দেয়া পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেন!
“দূর থেকে তিনি একটি পাতায় ভরা ডুমুর গাছ দেখে তাতে কিছু ফল পাবেন ভেবে তার কাছে গেলেন, কিন্তু গাছটির কাছে গেলে পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না; কারণ তখন ডুমুর ফলের মরশুম নয়৷” (BBS)
“Seeing in the distance a fig tree in leaf, he went to find out if it had any fruit. When he reached it, he found nothing but leaves, because it was not the season for figs.” (NIV) [56]
"...তখন তিনি সেই গাছটিকে বললেন, ‘তোমাতে আর কখনও ফল হবে না৷’ আর সেইডুমুর গাছটি শুকিয়ে গেল৷" (BBS)
"...Then he said to it, “May you never bear fruit again!” Immediately the tree withered." (NIV) [57]
ফিলিস্তিনের অধিবাসী একটা ছোট শিশুরও এটা জানার কথা কোন মৌসুমে সেখানকার ডুমুর বা Fig বৃক্ষে ফল হয়। কিন্তু ‘ঈশ্বর’ হয়েও যিশু এটা জানতেন না নিজ সৃষ্টি একটা গাছে কবে ফল হবে। এর মাঝে কিন্তু ইসলামবিরোধী খ্রিষ্টান প্রচারকরা কোনো সমস্যা খুঁজে পান না। সব সমস্যা তারা শুধু মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মাঝেই খুঁজে পান, তাও অপব্যাখ্যার দ্বারা খুঁজে পান।
খ্রিষ্টান প্রচারকরা সমস্যা খুঁজে না পেলেও বাইবেল কিন্তু বলছে এখানে সমস্যা আছে! ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু যদিও পূর্ণরূপে মানুষ (Fully man), কিন্তু একই সাথে তিনি পূর্ণরূপে ঈশ্বরও (Fully God)। [58] যিশুখ্রিষ্ট যদি কোনো কিছুর ব্যাপারে অজ্ঞ থাকেন, তাহলে বাইবেল অনুযায়ী তিনি আর ঈশ্বর হতে পারেন না। কেননা বাইবেল দাবি করে ঈশ্বর সব কিছু জানেন। তাঁর অজানা কোনো কিছু নেই।
“...ঈশ্বর আমাদের হৃদয়ের চেয়ে মহান এবং তিনি সবকিছুই জানেন।” (BCV)
“…God is greater than our hearts, and he knows everything.” (NIV) [59]
এখন এই ধর্মতাত্ত্বিক সমস্যার সমাধাণ খ্রিষ্টান বিশেষজ্ঞরাই বের করুন। সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, এমন সমস্যাপূর্ণ বিষয় তাদের নিজেদের বিশ্বাসের মাঝে থাকার পরে তারা কিভাবে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আসেন?
আমরা মোটেও খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদেরকে আঘাত করার জন্য এই কথাগুলো বলছি না। বরং ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের ধর্মপ্রচারকগণ যে অযৌক্তিক অভিযোগ তোলেন এবং দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করেন, সেগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য এগুলো বলছি। আমরা আল্লাহর নিকট তাদের সকলের হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করছি।
■ যিশুশিষ্যরাও নাজাতের ব্যাপারে জানতেন না!:
বাইবেলের ‘ইব্রীয়দের প্রতি পত্র’ (Hebrews)তে উল্লেখ করা হয়েছে, [60] যিশু যেহেতু মানবজাতির পাপের জন্য ক্রুশে কুরবানী হয়েছেন, এখন থেকে আর পশু কুরবানীর প্রয়োজন নেই। খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের বিশ্বাসের অন্যতম দলিল এটি। এটিই এখন খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের নিকট নাজাত লাভের পন্থা। তারা এর আলোকে মুসলিমদের এবং ইহুদিদের পশু কুরবানীর রীতিকেও সমালোচনা করে থাকেন।
10 ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারেই তিনি এই কাজ সমাপ্ত করেছেন৷ এইজন্যই খ্রীষ্ট তাঁর দেহ একবারেই চিরকালের জন্য উত্সর্গ করেছেন যাতে আমরা চিরকালের জন্য পবিত্র হই৷
11 প্রত্যেক যাজক প্রত্যেকদিন দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের সেবা করেন তাঁরা বারবার সেই একই বলি উত্সর্গ করেন৷ কিন্তু তাদের বলিদান কখনও পাপ দূর করতে পারে না৷
12 খ্রীষ্ট পাপের জন্য একটি বলিদান উত্সর্গ করলেন যা সকল সময়ের জন্য যথেষ্ট৷ তারপর তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণ পাশে বসলেন৷
13 তাঁর শত্রুদের মাথা তাঁর পায়ের নীচে অবনত না হওয়া পর্যন্ত এখন তিনি সেখানে অপেক্ষা করছেন৷
14 তিনি একটি বলিদান উত্সর্গ করে চিরকালের জন্য তাঁর লোকেদের নিখুঁত করেছেন৷ তারাই সেই লোক যাদের পবিত্র করা হয়েছে৷
15 পবিত্র আত্মাও আমাদের কাছে এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন৷ প্রথমে তিনি বলেন:
16 ‘ঐ সময়ের পর প্রভু বলেছেন, আমি তাদের সঙ্গে এই চুক্তি করব৷ আমি তাদের হৃদয়ে আমার নিয়মগুলো গেঁথে দেব, আর তাদের মনে আমি তা লিখে দেব৷’যিরমিয় 31:33
17 এরপর তিনি বলেন: ‘আমি তাদের সব পাপ ও অধর্ম আর কখনও মনে রাখবো না৷’ যিরমিয় 31 : 34
18 তাই একবার যখন সেইসব পাপ ক্ষমা করা হল, তখন পাপের জন্য বলিদান উত্সর্গ করার আর কোন প্রযোজন নেই৷ (BBS) [61]
‘ইব্রীয়দের প্রতি পত্র’ (Hebrews) এর এই অধ্যায়ে বারংবার এ কথাটিই বোঝানো হয়েছে যে, যিশুর উৎসর্গ হওয়াই সকলের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে। তিনি যেভাবে উৎসর্গিত হয়েছেন তা চিরকালের জন্য। যাজক বারবার যে পশুবলি দেন এর মাধ্যমে পাপ দূরীভূত হয় না। যিশু ক্রুশে বলি হবার পরে পাপের জন্য আর কোনো পশুবলির প্রয়োজন নেই। এখন পশুবলি অপ্রয়োজনীয়।
অথচ বাইবেল দাবি করেঃ যিশু ক্রুশে উৎসর্গিত হবার পরেও যিশুশিষ্যরা পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য মোশির [মুসা(আ.)] বিধি-ব্যবস্থা অনুসরণ করে পশুবলির ক্রিয়াকর্মের ব্যবস্থা করতেন! অন্য যিশুশিষ্যরা তো বটেই – স্বয়ং সাধু পলও পশুবলির এই ক্রিয়াকর্মে শামিল ছিলেন!
“20এই কথা শুনে তাঁরা ঈশ্বরের গৌরব করলেন, তাঁকে বললেন, ভাই, তুমি জান, ইহুদীদের মধ্য হাজার হাজার লোক বিশ্বাসী হয়েছে, কিন্তু তারা সবাই ব্যবস্থা পালন করতে বড়ই উদ্যোগী। 21তারা তোমার বিষয়ে এই কথা শুনেছে যে, তুমি অযিহুদিদের মধ্য প্রবাসী ইহুদীদের মোশির বিধি ব্যবস্থা ত্যাগ করতে শিক্ষা দিচ্ছ, যেন তারা শিশুদের ত্বকছেদ না করে ও সেই মত না চলে। 22অতএব এখন কি করা যায়? তারা শুনতে পাবেই যে, তুমি এসেছ। 23তাই আমরা তোমায় যা বলি, তাই কর। আমাদের এমন চারজন পুরুষ আছে, যারা শপথ করেছে; 24তুমি তাদের সঙ্গে গিয়ে নিজেকে শুচি কর এবং তাদের মাথা ন্যাড়া করার জন্য খরচ কর। তাহলে সবাই জানবে, তোমার বিষয়ে যে সমস্ত কথা তারা শুনেছে, সেগুলো সত্যি নয়, বরং তুমি নিজেও ব্যবস্থা মেনে সঠিক নিয়মে চলছ। 25কিন্তু যে অযিহূদীরা বিশ্বাসী হয়েছে, তাদের বিষয় আমরা বিচার করে লিখেছি যে, প্রতিমার প্রসাদ, রক্ত, গলাটিপে মারা প্রাণীর মাংস এবং ব্যভিচার, এই সমস্ত বিষয় থেকে যেন নিজেদেরকে রক্ষা করে। 26পরের দিন পৌল সেই কয়েকজনের সঙ্গে, বিশুদ্ধ হয়ে মন্দিরে প্রবেশ করলেন এবং তাদের বলি উৎসর্গ করা থেকে বিশুদ্ধ হতে কত দিন দিন লাগবে, তা প্রচার করলেন। 27আর সেই সাত দিন শেষ হলে এশিয়া দেশের ইহুদীরা মন্দিরে তাঁর দেখা পেয়ে সমস্ত জনতাকে উত্তেজিত করে তুলল এবং তাঁকে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো,” (IRV BEN) [62]
যিশুশিষ্যদের চার জন লোক এবং সাধু পল এখানে যে ক্রিয়াকর্মে অংশ নিয়েছিলেন একে বলা হয় Nazarite Vow বা নাসরীয় শপথ। New American Bible (Revised Edition) এ Acts 21:24 এর পাদটীকায় বলা হয়েছেঃ
“Pay their expenses: according to Nm 6:14–15 the Nazirite had to present a yearling lamb for a holocaust, a yearling ewe lamb for a sin offering, and a ram for a peace offering, along with food and drink offerings, upon completion of the period of the vow.” [63]
অর্থাৎ - “খরচ করঃ গণনাপুস্তক ৬:১৪-১৫ অনুযায়ী একটি নিখুঁত এক বছর বয়স্ক পুরুষ মেষশাবক যা হোমবলির জন্যে উত্সর্গ করা হবে| একটি নিখুঁত এক বছর বয়স্ক স্ত্রী মেষশাবক যা পাপার্থক বলির জন্য উত্সর্গ করা হবে| একটি নিখুঁত মেষ যা মঙ্গল নৈবেদ্যর জন্য উত্সর্গ করা হবে। ”
এখানে New American Bible এর পাদটীকায় গণনাপুস্তক ৬ : ১৪ উদ্ধৃত করা হয়েছে। অর্থাৎ যিশুশিষ্যরা এখানে গণনাপুস্তক (Numbers) এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে ঈশ্বর মোশিকে যে বিধি-বিধান দিয়েছেন, সে অনুযায়ী কাজ করেছেন। আর গণনাপুস্তক ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের পুরোটা জুড়েই উল্লেখ করা হয়েছে কী করে প্রভু ঈশ্বরের জন্য নিজেকে কিছুদিন পৃথক করে রাখতে হয় এবং সেইদিনগুলো অতিক্রান্ত হবার পরে চুল কেটে ও পশুবলি দিয়ে “নাসরীয় শপথ” (Nazarite Vow) এর কার্যক্রম পালন করতে হবে।
1 প্রভু মোশিকে বললেন,
2 “ইস্রায়েলের লোকদের বলো: কোন পুরুষ বা স্ত্রী নাসরীয হবার জন্য অর্থাত্ প্রভুর জন্য নিজেকে পৃথক করে তবে,
...
13 “তার পৃথক থাকার নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পরে নাসরীয অবশ্যই সমাগম তাঁবুর প্রবেশ পথে যাবে|
14 এবং প্রভুর কাছে তার যা কিছু উত্সর্গ করার তা করবে| তার উত্সর্গ অবশ্যই হবে:একটি নিখুঁত এক বছর বয়স্ক পুরুষ মেষশাবক যা হোমবলির জন্যে উত্সর্গ করা হবে| একটি নিখুঁত এক বছর বয়স্ক স্ত্রী মেষশাবক যা পাপার্থক বলির জন্য উত্সর্গ করা হবে| একটি নিখুঁত মেষ যা মঙ্গল নৈবেদ্যর জন্য উত্সর্গ করা হবে|
15 এক ঝুড়ি রুটি যা খামিরবিহীনভাবে তৈরী (তেলের সঙ্গে খুব ভালো মযদা মিলিযে তৈরী কেক|) এই সব কেকের ওপরে অবশ্যই তেল ছড়ানো থাকবে| এই সব উপহারের সঙ্গেই শস্য নৈবেদ্য এবং পেয় নৈবেদ্য উত্সর্গ করা হবে|
16 “যাজক এই সকল দ্রব্যসামগ্রী প্রভুর সামনে উপস্থিত করে তখনই পাপস্খালনের জন্যে বলি এবং হোমবলি উত্সর্গ করবেন|
17 যাজক খামিরবিহীন তৈরী এক ঝুড়ি রুটি প্রভুকে দেবেন| তারপর তিনি প্রভুর কাছে মঙ্গল নৈবেদ্য উত্সর্গের জন্য সেই পুং মেষটিকে হত্যা করবেন| যাজক এটিকে শস্য নৈবেদ্য ও পেয় নৈবেদ্যর সাথেই প্রভুকে উত্সর্গ করবেন|
18 “এরপর নাসরীয সমাগম তাঁবুর প্রবেশ পথে যাবে| সেখানে সে তার এই উত্সর্গ করা চুল কেটে ফেলবে এবং যে আগুন মঙ্গল নৈবেদ্যর জন্য উত্সর্গীকৃত নৈবেদ্যর নীচে জ্বলছে তাতে সেই চুল ফেলে দেওয়া হবে|
19 “নাসরীয তার চুল কেটে ফেলার পরে যাজক তাকে পুং মেষের একটি সেদ্ধ করা স্কন্ধ, একটি পিঠে আর একটি সরুচাকলী ঝুড়ি থেকে দেবেন| এই দুটিই খামির ছাড়া তৈরী করা হবে|
20 এর পর যাজক এইসব দ্রব্যসামগ্রী প্রভুর সামনে দোলাবেন| এটি হল দোলনীয় নৈবেদ্য| এই সব দ্রব্যসামগ্রী পবিত্র এবং এগুলো সবই যাজকের| এছাড়াও মেষের বুক এবং উরুও প্রভুর সামনে দোলানো হবে| এই সব দ্রব্যসামগ্রীও যাজকের| এর পর নাসরীয ব্যক্তিটি দ্রাক্ষারস পান করতে পারে|21 “যে ব্যক্তি নাসরীয শপথ করবে বলে মনস্থ করেছে তার জন্য ঐগুলোই হল নিয়ম| ঐ ব্যক্তি অবশ্যই প্রভুকে ঐসব উপহার দেবে| এছাড়াও যদি কোনো ব্যক্তি আরও কিছু বেশী দিতে সক্ষম হয় এবং তা দেবার জন্য শপথ করে থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই তার শপথ রাখতে হবে| তবে তাকে অবশ্যই কমপক্ষে ঐসব জিনিসপত্র দিতেই হবে যা নাসরীয শপথের নিয়মে তালিকাভুক্ত হয়েছে|” [64]
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা বাইবেল থেকে গণনাপুস্তক (Numbers) এর ৬ষ্ঠ অধ্যায় সম্পূর্ণ পড়ে দেখতে পারেন। [65]
ইব্রীয়দের প্রতি পত্র (Hebrews) এর ১০ অধ্যায়ের তথ্য অনুযায়ী যিশু ক্রুশে মারা যাবার পর থেকেই পশুবলির সকল প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে। যিশুর কুরবানীই নাজাত লাভের পন্থা। অথচ প্রেরিত (Acts) ২১ অধ্যায়ে সাধু পল এবং যিশুশিষ্যরা যিশুর স্বর্গে চলে যাবারও বহুদিন পরে দিব্যি মোশির শরিয়ত অনুসরণ করে পাপস্খালনের জন্যে পশুবলির ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছেন! যোহন লিখিত সুসমাচার অনুযায়ী যিশুশিষ্যরা স্বয়ং যিশুখ্রিষ্টের কাছ থেকে পবিত্র আত্মা লাভ করেছেন। [66] অথচ পবিত্র আত্মার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সেই সময়টিতে স্বয়ং যিশুর শিষ্যরা নাজাতের ব্যাপারে জানতেন না। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে স্বয়ং যিশুর শিষ্যরা পবিত্র আত্মার অধিকারী হয়েও নাজাতের ব্যাপারে “সঠিক” (?) মতটি না জেনে পশু কুরবানীর ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছেন, সেখানে খ্রিষ্টান মিশনারীরা কোন মুখে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)কে নাজাতের ব্যাপারে অজ্ঞতার জন্য অভিযুক্ত করেন? তাদের তো আগে যিশুশিষ্যদেরকে অভিযুক্ত করা উচিত।
■ উপসংহারঃ
অজ্ঞতা ও খ্রিষ্টান মিশনারীদের অপপ্রচারের দরুণ ইসলাম থেকে যারা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন, তাদের বড় এক অংশই বলেন “ইসলামের নবীই জানতেন না তিনি নাজাত পাবেন কিনা, অপরদিকে খ্রিষ্ট ধর্মে নাজাত আছে” (?), নাজাতের নিশ্চয়তার কারণে তারা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাদের এহেন দাবি যে কতোটা ভ্রান্তিপূর্ণ ও অসার, উপরের আলোচনায় তা পরিষ্কার বোঝা গেছে বলে আমরা আশা করছি। সেই সাথে খ্রিষ্টান মিশনারিদের দ্বিমুখী নীতিগুলোও এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই আলোচনার অনেক কথাই খ্রিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়েছে। কিন্তু এই কথাগুলো মোটেও কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আঘাত করার জন্য বা কষ্ট দেবার জন্য বলা নয় বরং ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু এক্টিভিস্টের দ্বিমুখী নীতি তুলে ধরার জন্য বলা। আমরা আশা করছি এই তথ্য ও দলিলগুলো আহলে কিতাবদের মাঝে চিন্তাশক্তির উন্মেষ ঘটাবে ও তাদের হেদায়েত লাভের উসিলা হবে।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল কুরআন, আহকাফ ৪৬ : ৯
[2] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৯২৯
[3] তাফসির ইবন কাসির, ১০ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা আহকাফের ৯ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২০৬-২০৭
[4] কুরতুবী,তাফসির আনওয়ারুল কুরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, সুরা আহকাফের ৯ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৮
[5] তাফসির ইবন কাসির, ১০ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা আহকাফের ৯ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২০৬
[6] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৪৮৩৬ [তাফসীর অধ্যায় (সুরা ফাতহ ৪৮/২)]
[7] ‘সহীহাহ’ – আলবানী, ৪/১০০
[9] আল কুরআন, বনী ইস্রাঈল (ইসরা) ১৭ : ৭৯
[10] Edward William Lane's Arabic-English lexicon
[11] তাফসির আহসানুল বায়ান – সুরা বনী ইস্রাঈলের ৭৯ নং আয়াতের তাফসির
[12] মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪১, ৫২৮
[13] বুখারীঃ ৪৭১৮, তাফসির যাকারিয়া -– সুরা বনী ইস্রাঈলের ৭৯ নং আয়াতের তাফসির
[14] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৮৩৪
[15] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৯৭
[16] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১২৪৫; কিতাবুয যুহদ, ইমাম ইবনুল মুবারক, হাদীস ১৬১৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩২২৯৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৯৪১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪৩১৪; আল মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাকেম আবু আব্দুল্লাহ, হাদীস ২৪১; আল আহাদীসুল মুখতারাহ, জিয়াউদ্দীন আলমাকদিসী, হাদীস ১১৭৯
[17] ‘সুনান আদ-দারেমী’তে বর্ণিত এর সনদ যঈফ হলেও ইমাম আহমাদ(র.) অন্য সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যার সনদ সহীহ। (৩/১৪৫)
[18] সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নং : ১৯৭ (সহীহ)
[19] আহমাদ, আল্লামা আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহীহা’, হাদিস: ২১৬০
[20] আল্লামা আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিস, আস সহীহা’, হাদিস: ৮৫২
[21] জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৭৬৮ (সহীহ)
[22] ইবন আসাকির, আল্লামা আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহীহা’, হাদিস: ১৪০৬
[23] সহীহ আল জামি’ ৩৩৬৩ (সহীহ)
[24] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৪৫৭
[25] তাবারানী, আল্লামা আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহীহা’, হাদিস: ১৪৩২
[26] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪১০
[27] ঐ সত্তর হাজারের প্রত্যেক ব্যাক্তির সাথে আরো সত্তর হাজার করে মুসলিম জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আহমাদ, সিঃ সহীহাহ ১৪৮৪নং)
বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ
'জান্নাত-জাহান্নাম' - আবদুল হামীদ ফাইযী; অনুচ্ছেদঃ "বিনা হিসাবে জান্নাত প্রবেশকারী দল"
https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=144&chapter=12157
[28] বইটির ডাউনলোড লিঙ্কঃ https://islamhouse.com/bn/books/434030/
[29] আল কুরআন, কাহফ ১৮ : ১০৭-১০৮
[30] আল কুরআন, ফুসসিলাত (হা-মিম সাজদাহ) ৪১ : ৩০-৩২
[31] আল কুরআন, আন’আম ৬ : ১৬৪
[32] আল কুরআন, যুমার ৩৯ : ৫৩
[33] আল কুরআন, মারইয়াম ১৯ : ৬০
[34] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৬৭৮৩
[35] সহীহ, ইবনু মাজাহ ২২৫, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৬৪৬ [আল মাদানী প্রকাশনী]
[36] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৫৫৭৯
[37] বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং : ৩৮৭ (সহীহ)
[38] সহীহ : আত্ তিরমিযী ২৪৮৫, ইবনু মাজাহ্ ৩২৫১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৫৮৪৭, আহমাদ ২৩৭৮৪, দারিমী ১৪৬০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪২৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৬১৬
[39] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৩৯১
[40] আবু দাউদ, তাবারানী, বাযযার, আল-আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৭৮ (হাসান)
[41] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২২৬৪
[42] সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৭২৫ (হাসান)
[43] সহীহ বুখারী , হাদিস নং : ১৭৩
[44] মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং : ৩২৫৪ (সহীহ)
[45] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪৬
[46] সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪২৯ (হাসান)
[47] বইটির ডাউনলোড লিঙ্কঃ https://islamhouse.com/bn/books/353690
[48] বাইবেল, লুক (Luke) ৭ : ২৮
https://www.wordproject.org/bibles/ben/42/7.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Luke%207%3A28&version=NIV
[49] বাইবেল, মথি (Matthew) ১১ : ১৪
https://www.wordproject.org/bibles/ben/40/11.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Matthew+11%3A14&version=NIV
[50] বাইবেল, যোহন (John) ১ : ২১
https://www.wordproject.org/bibles/ben/43/1.htm
https://www.biblegateway.com/passage/?search=John+1%3A21&version=NIV
[51] বাইবেল, লুক (Luke) ১৩ : ৩৩
https://www.wordproject.org/bibles/ben/42/13.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Luke%2013%3A33&version=NIV
[52] দেখুনঃ মথি ২১ : ১১; ১৩ : ৫৭ , মার্ক ৬ : ৪, লুক ৪ : ২৪; ৭ : ১৬; ২৪ : ১৯, যোহন ৭ : ৪০
[53] বাইবেল, ইব্রীয়দের প্রতি পত্র (Hebrews) ১৩ : ১২
https://www.wordproject.org/bibles/ben/58/13.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Hebrews+13%3A12&version=NIV
[54] বাইবেল, যোহন (John) ১৯ : ২০
https://www.wordproject.org/bibles/ben/43/19.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=John+19%3A20&version=NIV
[55] বাইবেল, মথি (Matthew) ২৪ : ৩৬
https://www.wordproject.org/bibles/ben/40/24.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=matthew+24%3A36&version=NIV
[56] বাইবেল, মার্ক (Mark) ১১ : ১৩
https://www.wordproject.org/bibles/ben/41/11.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Mark+11%3A13&version=NIV
[57] বাইবেল, মথি (Matthew) ২১ : ১৯
https://www.wordproject.org/bibles/ben/40/21.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=matthew+21%3A19&version=NIV
[58] God-Man _ Encyclopedia.com
https://www.encyclopedia.com/religion/encyclopedias-almanacs-transcripts-and-maps/god-man
[59] বাইবেল, যোহনের ১ম পত্র (1 John) ৩ : ২০
https://www.bible.com/bible/2412/1JN.3.BCV
https://www.biblegateway.com/passage/?search=1+John+3%3A20&version=NIV
[60] বাইবেলের ‘ইব্রীয়দের প্রতি পত্র’ (Hebrews) এর আসল লেখক কে তা মূলত অজানা। অজানা লেখকের লেখা এই চিঠিটিকে কেউ কেউ সাধু পলের লেখা বলেও দাবি করেছেন। New World Encyclopediaতে বলা হয়েছেঃ
“The author of Hebrews is not known. The text as it has been passed down to the present time is internally anonymous, though ancient title headings often attribute it to the Apostle Paul.”
https://www.newworldencyclopedia.org/entry/Epistle_to_the_Hebrews#Authorship
[61] বাইবেল, ইব্রীয়দের প্রতি পত্র (Hebrews) ১০ : ১০-১৮
https://www.wordproject.org/bibles/ben/58/10.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Hebrews+10%3A10-18&version=NIV
[62] বাইবেল, প্রেরিতদের কার্য্য বিবরণ (Acts) ২১ : ২০-২৬
https://www.bible.com/bible/1883/ACT.21.IRVBEN
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Acts+21%3A20-26&version=NIV
[63] Acts 21_24 NABRE - Bible Gateway
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Acts+21%3A24&version=NABRE
[64] বাইবেল, গণনাপুস্তক (Numbers) ৬ষ্ঠ অধ্যায়।
https://www.wordproject.org/bibles/ben/04/6.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Numbers%206&version=NIV
[66] “এই বলে তিনি [যিশু] তাঁদের [শিষ্যদের] ওপর ফুঁ দিলেন, আর বললেন, ‘তোমরা পবিত্র আত্মা গ্রহণ কর৷” (যোহন ২০ : ২২)