Pray for the world economy

জাপানীদের গল্প

 

জাপান, সম্ভবত পৃথিবীর সবচে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড নেশন। খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তিই হয়তো দ্বিমত করবেন, কেউ কেউ হয়তো জাপান না জার্মানী তা নিয়ে তর্ক করতে পারেন। তবে আমি বলবো জাপান এক, আর জার্মানী দুই। 
 
খুব খেয়াল করলে দেখবেন, জাপানের লোকসংখ্যা প্রায় দশ কোটির মতন। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, ইটালীর সমতুল্য। কিন্তু জিডিপি বা ওয়েলথ গ্রোথ বিবেচনা করলে জাপান এদের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে, অনেক আগেই।

 

জাপান এমন লিজেন্ডারী লেভেলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাকশনকে নিয়ে গেছে, যে দুনিয়ার কোন শক্তিই তার সমকক্ষ না। দুনিয়ার সেরা সব ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানীই কিন্তু জাপানের, কারন তার মত কোয়ালীটি পণ্য কেউ বানাতে পারেনা আর কেউ। ইভেন আমেরিকান ব্রান্ডগুলোকেও জাপান মার খাইয়ে দিয়েছে, আর ইউরোপ তো নস্যি।

 

যে কারণে ১৯৯৫ সালেই জাপানের জিডিপি (=বাৎসরিক সম্পদ উৎপাদন) ৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলার হয়ে যায়, অথচ তখন জার্মানীর জিডিপি ছিল ২.৫ ট্রিলিয়ন, আর ইউকে-ফ্রান্স-ইটালীর ছিল ১ থেকে দেড় ট্রিলিয়ন। তাহলে বুঝেন জাপান কত ধনী, আর কত সম্পদ উৎপাদন করে বছরে , অন্যদের তুলনায়। যদিও ১৯৪৫ সালেই দেশটি ছিল পারমানবিক বোমায় আক্রান্ত এক বধ্যভূমি। সমসাময়িক সময়ে পাকিস্তান-ভারত বা বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও আজ আমাদের জিডিপি ইভেন ১ ট্রিলিয়ন ছোঁয় নি। বাংলাদেশ মাত্র ০.২০ ট্রিলিয়ন , দু:খ।

 

অথচ জনসংখ্যায় জাপান আমাদের প্রায় অর্ধেক। ইন্ডিয়ার পনেরোভাগের এক ভাগ। 
পুরো মুসলিম উম্মাহর ৫৭ টা দেশের জিডিপি যোগ করে দেখলাম ৪.০ ট্রিলিয়নের কাছাকাছি হয়। অথচ জাপান একাই ৫.৫ ট্রিলিয়ন, সেই ১৯৯৫ সালেই। চিন্তা করেন , দু:খ রাখবো কোথায়।

 

কথা সেটা না। কথা হল এই উন্নতির কারণ নিয়ে আগে লিখেছিলাম। একটু রিমাইন্ড করি। জাপানীরা খুব সৎ , খুব কর্মে মনোযোগী, খুব লীন সিক্স সিগমা করে, ফাইভ এস-পোকা ইয়োকা-কাইজেন-ডামাভি : এইসব করে, দিনে ১৬ ঘন্টা কাজ করে , খুব টাইম ম্যানেজমেন্ট করে চলে, আমাদের মতন সময় নষ্ট করেনা, কোন দুর্নীতি নেই, দুই নম্বরী নেই ___ এসব হল তাদের উন্নতির কারণ।

 

সুতরাং, এসব শুনে আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জেগেছিল। তা হল, যদি জাপান যদি এসব লীন সিগমা করে এত উন্নতি করে, তাহলে আমাদের ইসলামের দরকার কি? আমরাও লীন সিগমা করি, তাহলেই তো যথেষ্ঠ? তাহলে আল্লাহ এই ইসলামকে কেন দিলেন?

 

তার উত্তরই এই পোস্টে দিতে যাচ্ছি। কারন তা একটি সেপারেট পোস্ট ডিসার্ভ করে।
 

খুব ভাল করে যদি জাপান সংক্রান্ত নিউজগুলো ইদানীং শুনে থাকেন, খেয়াল করবেন, যে জাপান একটা বড় ধরনের বিপদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেটা হল, তাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বৃদ্ধ এবং যুবক বা শিশুদের সংখ্যা সিগনিফিক্যান্টলী কম। মানে খুবই কম। 
 

জাপানে নতুন নতুন জাপানী বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে না। কিন্তু আগেকার বুড়োরা রয়ে গেছে। কাজেই একটি বিষম অসাম্যবস্থা তৈরী হচ্ছে। সংখ্যানুপাতে শিশু-যুবক-তরুন কমে গেছে অনেক, কিন্তু চল্লিশোর্ধ মানুষ সংখ্যায় বেড়ে গেছে অনেক।

 

জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে জাপানে, কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। এই মুহূর্তে জাপানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ''নেগেটিভ ০.২%'' । এই হারে চললে আর শ খানেক বছর পর ( বা তার আগেই হতে পারে ) জাপানী জাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এন্ডেনজারড স্পীশিজ হতে যাচ্ছে জাপানীরা। ইভেন জার্মানীরও একই অবস্থা।

 

এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যদি একটু রিসার্চ করেন, তাহলে খুজে পাবেন এর উৎস কোথায়।

আসলে ১৯৪৫ এর পর আমেরিকা জাপানকে অধিকারে নিয়ে নেয়। এরপর জাপানে সেই পশ্চিমা সভ্যতার সব আইডিওলজীর চাষ হয়। জাপানীরা আবার খুব সিরিয়াস পিপল। যেটা করে, খুব জান দিয়ে করে। ইভেন পশ্চিমারাও এত সিরিয়াস না।

 
তো আগে জাপানী নারীরা মুসলিম নারীদের মতই ঘরে থাকতো, ঘর-সংসার করতো। কিন্তু পশ্চিমা ফেমিনিজমের প্রভাবে জাপানী নারীরা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে নেমে পড়ে, কারণ তাকে পুরুষের সমান হতে হবে। পুরুষ বাহিরে কাজ করে, সে কেন ঘরে বসে বাচ্চা পালবে? বাচ্চা পালা কি একটা কাজ হল? বাচ্চা মরলে মরুক, আগে ক্যারিয়ার।

 

কাজেই জাপানী নারীরা মূল ওয়ার্ক ফোর্সে জয়েন করে। নারী-পুরুষ কোন ভেদাভেদ নেই এখন। সত্যিকারে ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনকে শতভাগ ফলো করলো জাপান, যেটা ইভেন ওয়েস্টার্নার রা নিজেরাও করেনা।

 

সে কারণে এখন জাপানে সব নারীই উচ্চ শিক্ষার পরপর বিয়ে করেনা। সুন্দরী এট্রাকটিভ মেয়েরাই বিভিন্ন করপোরেটে জয়েন করে, নিজের ক্যারিয়ার গড়ে, আর বাচ্চা পালা বা বিয়ে করাকে কে একটা বাজে কাজ মনে করে। নিম্ন মানের কাজ।

 

বিয়ে করলে বাচ্চা হবে, কাজের ক্ষতি হবে। আর বৈবাহিক জীবনে সময় দিতে গিয়ে ক্যারিয়ারও ঠিকমতন হবেনা। আর ওদিকে পুরুষ তো এগিয়ে যাচ্ছে, কাজেই তাকেও ধরতে হবে। সুতরাং , জাপানী নারীদের সহজ সমাধান হল: নো বিয়ে, নো বাচ্চা, অনলী ক্যারিয়ার। ক্যারিয়ার গড়তে গড়তে ৩৫ বছর, কাজেই পরে আর বিয়ের বয়সও নেই। কাজেই কোন বিয়ে না করেই জীবন পার করে দিচ্ছেন জাপানী নারী রা। জনসংখ্যার বিশাল অংশ।

 

সুতরাং বিয়ের জন্য পুরুষরা চাইলেও নারীরা এভেইল্যাবল না। পুরুষদের তো বিশাল অসুবিধা আছে, বিয়ে না করলে অনেক সমস্যা আপনারা জানেন। কিন্তু নারীদের তো কথা বলার লোক থাকলেই মোটামুটি হয় মনে হয়, সেটা তো চাকরিতে জয়েন করলেই অনেক বন্ধু বান্ধব পাচ্ছেন?? কি জানি আল্লাহ ভাল জানেন। এক্সপ্লেইন করতে চেষ্টা করলাম, সিস্টার রা মাইন্ড কইরেন না। 
 
তাহলে জাপানী পুরুষরা নিজেদের চাহিদা মিটাচ্ছেন কিভাবে? সেজন্য পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে বিশেষ থেরাপী দিয়ে দিয়েছেন। পর্ণ সবজায়গায় এভেইলেবল, কাজেই পর্ণ দেখে অবৈধভাবে নিজেকে রিলাক্স করে নিচ্ছেন জাপানী পুরুষরা, কি করবে ? মেয়েরা বিয়ে করতে চায়না যে?

 

কিছু কিছু জাপানী পুরুষ এক কাঠি সরেষ!!! তাদের জন্য আবার এক বিশাল সেক্স ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে জাপানে, সেখানে গিয়ে তারা কিছুক্ষণ প্লেটোনিক লাভ করে চলে আসবেন , বিনিময়ে টাকা দিবেন কিছু। আসতাগফিরুল্লাহ। 
 

তো এই অতি ফেমিনিজম হল এক নাম্বার কারণ, যে কারণে জাপানে জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে।

 

কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়, বরং আরও একটি কারণ আছে, সেটাতে আলোকপাত না করলে ইনসাফ হবেনা। সেটা হল, জাপানে থাকা অতিরিক্ত কাজ করার কালচার।

 

জাপানী প্রতিটা করপোরেটে অতি প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তারা মাত্র ৮-১০ ঘন্টা কাজে সন্তুষ্ট না। ১৪-১৬-১৮ ঘন্টা কাজ জাপানে খুব নরমাল। সকাল ৮ টা থেকে রাত দশটা খুব নরমাল। আগে সাপ্তাহিক ছুটিও ছিলনা, যদিও এখন সেটা করেছে।

 

যেখানে ইউরোপ আমেরিকাতেও মানুষ বিকাল ৫ টার পর অফিসে থাকেনা, সেখানে একজন এভারেজ জাপানী রাত দশটা বাজে বাসায় যায়। আর জাপানীরা না মুসলমান, না খ্রিস্টান, না হিন্দু। কাজেই তাদের ঈদ ও নাই, পূজাও নাই, ক্রিস্টমাসও নাই। বাৎসরিক তেমন কোন ছুটি নাই।

সুতরাং জাপানীরা সারা বছর মোটামুটি শুধু কাজই করে, কোন সামার নাই, বা বড় কোন ছুটিও নাই।

 

একটা মানুষ যদি এত কাজ করে, তাহলে কি হয়? যেটা হয়, সেটা হল, সে ফ্যামিলী রিলেশন মেইন্টেইন করতে পারে না, ফ্রেন্ডদের সাথে রিলেশন মেইন্টেইন করতে পারেনা। কোন সোস্যাল গ্যদারিং না থাকায়, জাপানীরা একে অন্যের সাথে পরিচয়ও হয়না, সামাজিক রিলেশনগুলোও গড়ে উঠেনা। তার উপর মহিলারাও পুরুষদের মতন অফিসে থাকে, কাজেই সামাজিক কোন অনুষ্ঠানও বিরল। এগুলো এরেঞ্জ করবে কে?

 

কাজেই জাপানীরা রোবোট হয়ে যায়। সারা বছর কাজ করে চলেছে, কারো সাথে কারো যোগাযোগ নেই। একদম সত্যিকারের রোবট।

আপনি যে বিয়ের জন্য কাউকে খুজবেন, কিভাবে খুজবেন, আপনি তো কাউকে চিনেন না, কেউ আপনাকে চিনেনা। আপনার কোন বন্ধু ও নেই। একই অবস্থা আপনার হবু বউ এরও। সুতরাং বিয়ে হবে কিভাবে?

 

আজ জাপানের ১৮-৩৪ বছর বয়স্ক প্রায় ৫০ ভাগ পুরুষ ও নারী ভার্জিন। বিয়েও করেনি, একা একা চলছে। 
৫০ বছর বয়স্ক শতকরা ২৫ ভাগ পুরুষ এখনও অবিবাহিত। চিন্তা করতে পারেন। চিন্তা করতে পারেন, কি হতে যাচ্ছে দেশটিতে? 
 
‌এখন চিন্তা করুন, আল্লাহ কি আমাদের রোবোট করে বানিয়েছেন? আমরা কি রোবোট? আমরা তো রোবোট নই।

 

আমাদের আবেগ আছে, ভালবাসা আছে, কথা চিন্তা শেয়ার করার শক্তি আছে, এবং এগুলো আমাদের জীবনের অংশ। এগুলো নিয়েই আমাদের সমাজ গড়ে উঠে। দুনিয়ার সব জায়গায়। এই সমাজকে বাদ দিয়ে চলতে গেলে আপনি চলতেই পারবেন না, এটা হিউম্যান জেনেটিক্স এর মধ্যে ডিজাইন্ড।

 

সুতরাং হিউম্যান ওয়ে অব লাইফ এমন হতে হবে, যা তার জেনেটিক্স এর সাথে সংগতি পূর্ণ, তার ফিতরাত এর সাথে সংগতি পূর্ণ। যদি এর বিপরীত 'ওয়ে অব লাইফ' সে ফলো করে, সে শর্ট টার্মে লাভবান হলেও লং টার্মে ধ্বংস হয়ে যাবে, সে হয়তো হবে সত্যিকারের অসুখী।

 

এই ব্যাপারটাই জাপান বুঝেনি, তারা ওয়াহীর জ্ঞান পায়নি। কারণ ওয়াহি দিয়ে মানুষকে তার 'ওয়ে অব লাইফ' টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। নিজের মাথা খাটিয়ে 'ওয়ে অব লাইফ' বের করার ক্ষমতাই তাকে দেয়া হয়নি।

 

চিন্তা করেন, যদি জাপানীরা মুসলিম হতো, তাহলে তাদেরকে দিনে ৫ বার নামাজ পড়তে হতো। সুতরাং এত দীর্ঘক্ষণ তাকে কাজ করতে হতোনা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাকে বিশ্রাম নিতে আল্লাহ বাধ্য করতেন। এশার নামাজের এক্সকিউজে সে রাত দশটার বহু আগেই কাজ শেষ করতে পারতো, তাকে ফজরের জন্য উঠতে হবেনা? সে সপ্তাহে একটা ছুটি তো পেতোই, বছরে তার জন্য দুইটা বড় ছুটি ঈদুল আযহা আর ঈদুল ফিতর থাকতো।

 

সে একটু রিলাক্স হতো, সে একটু সামাজিক হতো, কারণ দুই ঈদের তার সব বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের সাথে তার দেখা হতো। সবাই তাকে বিয়ের প্রেসার দিতো, সেও ভিতর থেকে ফীল করতো । আর পর্ণ দেখে রিলাক্স হবার কোন অপশন ইসলাম রাখেনি। কাজেই বিয়ের জন্য সে ডেসপারেট হতো।

 

তার উপর জাপানী মেয়েরা নিশ্চয়ই পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ৩৫ বছর পর্যন্ত ওয়েট করতোনা। নিশ্চয়ই মাতৃত্ব তাদের অনেক ডিয়ার এবং নিয়ার হতো। একদল নতুন মুসলিম পিচ্চি পুচ্চী কে দুনিয়ায় বড় করার বাসনা নিশ্চয়ই তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। এক ইমার্জেন্সী না হলে, সে নিশ্চয়ই ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পিচ্চি পুচ্চীদের আগমনকে থামিয়ে রাখতোনা।

 

কাজেই জাপানী ছেলেরা তখন জাপানী মেয়েদের বিয়ে করতো, কারণ ছেলেরাও বিয়ে করতে চায়, মেয়েরাও এভেইলেবল। হয়তো টাকা উপার্জন একটু কম হতো। না হয় ৫.৫ ট্রিলিয়ন না হয়ে ২.৭৫ ট্রিলিয়ন হতো বাৎসরিক জিডিপি, সমস্যা কোথায়? তাও তো জার্মানী থেকে বেশী, ইউকে থেকে বেশী, ফ্রান্স থেকে বেশী, তাইনা? এত টাকা দিয়ে করবেটা কি? বাংলাদেশী টাকায় এভারেজে তারপরেও মাসে ৩ লাখ পায়। একটা পরিবার চালানোর জন্য তো যথেষ্ট? তাইনা?

 

তখনই জাপানীরা হতো সত্যিকারের সুখী। আমরাও পেতাম পিচ্চী পুচ্চি কিউট কিউট জাপানী মুসলিম বাবু। যদিও এখনই তা হতে যাচ্ছে না। দু:খ। আজ জাপানে বড় অংশের জনসংখ্যা এতই অশান্তিতে বড় হচ্ছে যে বছরে ৫০ হাজার ডলার এর বেশী ইনকাম করেও আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছে। মানবসম্পদের কি অপচয়!!!!

 

কিন্তু প্রশ্ন হল, একই সমস্যায় ইউরোপ-আমেরিকা কেন আক্রান্ত হয়নি। কারণ জাপান তো তাদের লাইফস্টাইল ফলো করতেছে।

 

উত্তর হল, ইউরোপ - আমেরিকানরা নিজেরাও এরকম সিরিয়াসলী তাদের থিউরিটিকাল লাইফস্টাইল ফলো করেনা। আর তারা কালচারালী খ্রিস্টান হওয়ায়, তাদের একটা বড় অংশ এখনও খ্রিস্টধর্মকে ফলো করে। দেশে দেশে ডানপন্থী রাজনীতির উত্থান দেখেই তো বুঝা যায়।

 

আর আমেরিকানরা এখনও তাদের ইউরোপীয়ান কাউন্টারপার্টদের থেকে অনেক বেশী ধার্মিক। হলিউডের মতন লাইফস্টাইল আপনি অনেক জায়গাতেই পাবেন না। গোঁড়া খ্রিস্টান, গাদা গাদা বাচ্চা সহ অজস্র পরিবার আমেরিকেতই আছে।

 

এখানে আমেরিকায় অনেক মেয়েই বাচ্চা পালার জন্য চাকরি ছেড়ে দেয়। অনেকে মেয়েই চাকরিই করেনা, কারণ বাচ্চা হয়ে গেলে আর সময় পায়না। এখানে আসলে হরেক রকমের মানুষ পাওয়া যায়।

 

যদিও জাপানীরা সেটা বুঝেনি। তারা থিউরী পড়েই ডাইরেক্ট গণহারে তা ইম্প্লীমেন্ট করতে গিয়েছে। তাতেই বিধিবাম। আজ তারা পৃথিবীর সবচে অসুখী জাতি হয়তো। না হলে তারা আত্মহত্যায় তারা এত উপরে কেন ? দিনে প্রায় ৭০ জন জাপানী আত্মহত্যা করে মারা যায়।

 

অথচ একটা ছাপড়া ঘরে থেকে দিনে ১০০ টাকা ইনকাম নিয়ে কাচা মরিচ দিয়ে ভাত খেয়ে লুঙ্গি কাচা দিয়ে ঘুমিয়ে বাংলার রিকসাওয়ালারা কত সুখী? চিন্তা করেন? এজন্য দিনে মাত্র ১ জন বাঙ্গাললীও আত্মহত্যা করলে দেশে নিউজ হয়, অথচ জাপানে এটা একটা পানিভাত ব্যাপার। প্রতিদিনই হচ্ছে, এখানে ওখানে।

 

একই সমস্যা কিন্তু জার্মানীতেও হয়েছে। কারণ একটাই, জার্মানরা জাপানীদের মতন একটু কাজ পাগল এবং এরা একটু ধর্মহীন , এবং মাত্রাতিরিক্ত ফেমিনিজম আক্রান্ত।

 

আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকানদের বুদ্ধিতে জার্মান আর জাপানীরা মাত্রাতিরিক্ত কাজ- ফেমিনিজম-ধর্মহীনতার এই পশ্চিমা লাইফস্টাইলে সিরিয়াসলী অভ্যস্ত হয়, বা বলতে পারেন বাধ্য করা হয়: মিডিয়ার মাধ্যমে। তার ফলশ্রূতি আজকের জাপান বা জার্মানী।

 

এভাবে চলতে থাকলে, জাপান বা জার্মানী একদিন জনমানবহীন ধূধূ প্রান্তরে পরিণত হবে, আর কিছু নয়, এটিমিক বোম তাদের ধ্বংস করতে পারেনি, কিন্তু ওয়েস্টার্ন লাইফস্টাইফ তাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে, চিন্তা করতে পারেন? আল্লাহ না করুক। আসুন দোয়া করি, যাতে আল্লাহ এই জাতি দুটোকে ইসলাম দ্বারা রক্ষা করেন।

 

তাহলে চিন্তা করুন, আসলে জাপানের এই ৫ ট্রিলিয়ন ইকোনমি, এত লীন সিক্স সিগমা, এত সততার গল্প, সবকিছুই বৃথা, কারণ সে তো জাতিগতভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আর পারসোনাল লাইফে সে এত অসুখী যে আত্মহত্যা করতে হয়। 
 
কোন পরিবার নেই, কোন ফ্যামিলী রিলেশন নেই, কোন বন্ধু নেই, কথা বলার একটা লোক নেই, শুধু কাজ আর কাজ। এরকম একটা দম বদ্ধ পরিবেশে থেকে জাপানীরা হয়তো খুব সুন্দর সুন্দর ছবি ফেবুতে শেয়ার দেয়, আর তা দেখে সবাই ভাবে, যে তার বুঝি খুব ভাল আছে।

 

অথচ আত্মহত্যা রেইট দেখেই বুঝা যায়, যে তারা কত অসুখী। কারণ কিন্তু একটাই। সেটা হল, ওয়াহীর জ্ঞান না পাওয়া। আল্লাহ কে না চিনা, রসূল(স) এর সীরাতকে না জানা। শুধু দুনিয়া নিয়ে থাকা, নিজের মাথা খাটিয়ে 'ওয়ে অব লাইফ' / 'লাইফস্টাইল' কে বানাতে চেষ্টা করা। শুধুই ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের বাহিরে আর কিছু চিন্তা করতে না পারা। 
 

তাহলে দেখুন, ইসলাম কিভাবে আদম থেকে আসা সব গোত্রের মানুষকে ব্যালেন্স করে। যারা এই লেখাটা জাপানী ভাষায় অনুবাদ না করলে পড়তে পারবেনা, তাদের অতি-কাজ,অতি-ফেমিনিজম করার পাগলামী থামিয়ে তাদের সামাজিক মানুষ বানায়।

 
আর যারা মাতৃভাষায় এই লেখাটা পড়তে পারছে, তাদেরকে ইসলাম কিছুটা পরিশ্রম করে ভুড়ি কমিয়ে কাজ করে সততা মেইন্টেইন করিয়ে ব্যালেন্স করে। কারণ তারা একটু অলস ফিতরাতের উপর জন্ম নিয়েছেন, লেখকের মতন।

 

পুনশ্চ: লীন সিক্স সিগমা-টাইম ম্যানেজমেন্ট : এসবের দরকার আছে, সাইন্স টেকনোলজীরও দরকার আছে। কিন্তু তা কাজ করবে তখন, যখন লাইফস্টাইল/ ওয়ে অব লাইফ হিসেবে আপনি ইসলামকে বেইজ হিসেবে মানবেন। 
যদি তা না মানেন, তাহলে সবই বৃথা। কয়েক জেনারেশন পরেই আপনার অস্তিত্ব থাকবেনা, জাস্ট নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। আর সবাই হবেন অসুখী।

সুতরাং আমরা ইসলামের উপর থেকেই ভাল আছি। ওইসব লীন সিক্স সিগমা-সাইন্স-টেকনোলজী হবে পরে। কিন্তু ফাউন্ডেশনে ইসলাম আনতে হবে আগে। 
তাহলেই হবে শান্তি, সুখ আর সফলতা। কি দুনিয়ায়, কি আখিরাতে। আল্লাহ যেন ইসলাম দ্বারা জাপানী আর জার্মানীদের রক্ষা করেন। আমীন।