Pray for the world economy

মহাকাশে বায়ু নেই, তাহলে ফেরেশতাদের ডানা থাকে কেন?

 

অভিযোগঃ

পাখি বা বিমান যেটিই আকাশে উড়ুক তাদের ডানা প্রয়োজন হয় বায়ুমণ্ডলের জন্য। বায়ু ব্যতিত ডানার প্রয়োজন নেই। মহাশুন্যে কোনো বায়ু নেই, অথচ ইসলাম দাবি করে ফেরেশতাদের অনেক সংখ্যক ডানা রয়েছে, এমনকি ফেরেশতা জিব্রাঈলের(আ.) নাকি ৬০০ ডানা রয়েছে। এই ডানার আবশ্যকতা কী, যেখানে মহাশুন্যে কোনো বায়ু নেই?

 

জবাবঃ

ইসলামে ফেরেশতাদেরকে বস্তুজগতের অন্যান্য সাধারণ প্রাণীদের ন্যায় কিছু বলে দাবি করা হয়নি। বরং ইসলামী ধারণা অনুযায়ী ফেরেশতারা নুর বা জ্যোতির তৈরি।

 

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «خُلِقَتِ المَلاَئِكَةُ مِنْ نُورٍ، وَخُلِقَ الجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ، وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ»

অর্থঃ আয়েশা(রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ() বলেছেন, “ফিরিশতাদেরকে জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে অগ্নিশিখা হতে। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই বস্তু থেকে, যা তোমাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে। [অর্থাৎ মাটি থেকে]।[1]

 

পাখি বা কিংবা বিমান এই সব কিছুর ডানা অবশ্যই বায়ুমণ্ডলের জন্য প্রয়োজন হয়। কিন্তু যেই জিনিস জ্যোতি বা আলোর তৈরি, অবশ্যই তার ডানার সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। কেননা বায়ু হচ্ছে এক প্রকারের পদার্থ, কিন্তু আলো কোনো পদার্থ নয় বরং শক্তি। আলোর তৈরি কোনো কিছুর বায়ুমণ্ডলের উপর নির্ভর করে উড়তে হবে, এই চিন্তাধারাই ভুল। এই ভুল চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে ইসলামবিরোধীরা অভিযোগ করে।

 

ফেরেশতারা বস্তুজগতের প্রাণীগুলোর ন্যায় কোনো প্রাণী নয়। আলো দ্বারা সৃষ্টি এই বিশেষ জীব মানুষের আকৃতি সহ বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে।[2] নবী()  আল্লাহর সাহায্যে তাঁদের দেখতে পেতেন, সাধারণ মানুষের তাঁদের দেখার ক্ষমতা নেই। ফেরেশতাদের আসল আকৃতি সাধারণ মানুষের কল্পনার অতীত। [3] ইসলামের দাবিমতে ফেরেশতারা এমনই ব্যতিক্রমী এক প্রকারের জীব। ইসলামবিরোধীরা ফেরেশতাদের ডানার সঙ্গে আমাদের চেনা-জানা ধরণের বিভিন্ন জিনিস যেমনঃ বিমান, পাখি ইত্যাদির ডানার বা উড়বার তুলনা দিয়ে কুরআন-হাদিস থেকে ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের এই প্রয়াস সঠিক নয় কেননা ফেরেশতাদের ডানা আমাদের জ্ঞাত বস্তুগুলোর ডানার মতো কিছু নয়। প্রখ্যাত ইসলামী বিদ্বান শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র.) উল্লেখ করেছেন,

 

كيفية هذه الأجنحة لا نعلمها، وهذا نظيره تمامًا ما جاء في صفات الله عز وجل فإننا نعلم معنى الصفة، ولكننا نجهل كيفية الصفة، لله عز وجل وجه، نعلم ما معنى الوجه لكن هل نعلم كيفيته؟ لا؛ لأن ما غاب عنك لا يخاطبك الله به إلا ببيان معناه فقط، وأما كيفيته فلا يمكنك إدراكها؛ لأنه غائب ولا نظير لها، والشيء لا يُعرف إلا بمشاهدته أو مشاهدة نظيره، أو الخبر الصادق عنه.

অর্থঃ [ফেরেশতাদের] এই ডানাসমূহের প্রকৃতি আমাদের জানা নেই। আর এটি মহান আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে যা বলা হয়েছে এর অনুরূপ। আমরা এই সিফাতসমূহের অর্থ জানি। কিন্তু সিফাতের প্রকৃতি বা ধরণ আমাদের জানা নেই। যেমন, মহান আল্লাহর চেহারা রয়েছে। আমরা জানি চেহারা অর্থ কী। কিন্তু এর ধরণ কি আমরা জানি? জানি না। কারণ আপনার থেকে যা অদৃশ্য অবস্থায় আছে [যার ধরণ অনুধাবন আপনার সাধ্যের বাইরে], আল্লাহ সে ব্যাপারে শুধু অর্থ উল্লেখ করে সেটি বর্ণনা করেছেন। আর এর ধরণ আপনি অনুধাবন করতে পারবেন না। কেননা এটি আপনার থেকে অদৃশ্য আছে এবং এর সাথে তুলনীয় কিছু নেই। কোনো একটি জিনিসকে জানা যায় একে দেখার দ্বারা অথবা এর সমজাতীয় কোনো কিছুকে দেখার দ্বারা। অথবা এর ব্যাপারে সঠিক তথ্যের দ্বারা।[4]

 

এ প্রসঙ্গে তাফসীরে জাকারিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, 

 

অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতাগণকে পালকবিশিষ্ট ডানা দান করেছেন যদ্বারা তারা উড়তে পারে। এ ফেরেশতাদের হাত ও ডানার অবস্থা ও ধরণ জানার কোন মাধ্যম আমাদের কাছে নেই।[5]

 

ফেরেশতাগণের ডানার ধরণ জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা তাদের নিজ সত্তার প্রকৃতি অনুযায়ী ওড়েন।

 

এ ব্যাপারে কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আমরা আমাদের দৃশ্যমান সৃষ্টিজগতের মধ্যেই বিভিন্ন রকমের 'পা' দেখতে পাই। পিঁপড়ার পা থাকে, মশার পা থাকে, হাঁসের পা থাকে, কুমিরের পা থাকে, হরিণের পা থাকে, বাঘের পা থাকে, হাতির পা থাকে, মানুষের পা থাকে। আবার রোবটেরও পা থাকতে পারে। একেক প্রকার পায়ের প্রকৃতি একেক রকম। কোনো কোনো প্রাণীর পা অতি ক্ষুদ্র, আবার কোনো কোনো প্রাণীর পা অতি বৃহৎ। কেউ তাদের পা ব্যবহার করে শুধু হাঁটে, কেউ পায়ের সাহায্যে সাঁতারও কাটে, আবার কেউ পা দিয়ে ফুটবল পর্যন্ত খেলে। কেউ তাদের পা দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে দৌঁড়াতে পারে আবার কেউ তাদের পা দিয়ে প্রচণ্ড শক্তিশালী থাবা দিতে পারে, আবার কারো পা অতি ক্ষুদ্র ও দুর্বল। একেক প্রজাতির পা একেক উপাদানে গঠিত। এদের একের পায়ের সঙ্গে অন্যের পায়ের কোনো তুলনা চলে না। স্রেফ 'পা' শব্দটি দেখিয়েই এটি বলার উপায় নেই যে এই বস্তুটি এই আকৃতির বা এই প্রকৃতির। বিষয়টির অর্থ হয়তো পরিষ্কার, কিন্তু প্রকৃতি অনেক রকমের হতে পারে। স্রেফ ‘ডানা’ শব্দের জন্য অ্যারোস্পেস গ্রেড এলুমিনিয়ামে তৈরি বিমানের ডানার সঙ্গে মশার ডানার তুলনা দেয়া অমূলক। নুরের তৈরি ফেরেশতারা আমাদের দৃশ্যমান সৃষ্টিজগতের মতো কিছু নয়, তাদের ডানার প্রকৃতিও আমাদের জানা বস্তুগুলোর ন্যায় নয়। স্রেফ ‘ডানা’ শব্দটি দেখেই পাখি বা বিমানের সঙ্গে তাঁদের ডানার তুলনা অমূলক।

 

অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে মানুষের মুখ ও পাখির ডানার মতো আকৃতি সহকারে ফেরেশতাদের বিভিন্ন ছবি অংকন করা হয়। ইসলামবিরোধীরা সেসব ছবি দেখিয়েও ইসলামকে বিদ্রুপ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এসব ছবির সাথে ইসলামের ফেরেশতার কোনো সম্পর্ক নেই। এই ছবিগুলোর উৎস মূলত খ্রিষ্টানদের বিভিন্ন গির্জার মধ্যে থাকা ফেরেশতাদের ছবি মূর্তি। ইসলামবিরোধীরা খ্রিষ্টীয় উৎস থেকে আসা ছবি দেখিয়ে ইসলামকে কটাক্ষ করার অপচেষ্টা চালায়। আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি আলোর তৈরি ফেরেশতাদের আসল আকৃতি আমাদের চেনা জানা বস্তুগুলোর মতো নয়।

 

 

 

 

আরো পড়ুনঃ

আল্লাহ অমুখাপেক্ষী হলে ফেরেশতাদের কেন সৃষ্টি করলেন?

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] মুসলিম ২৯৯৬, আহমাদ ২৪৬৬৮, ২৪৮২৬; রিয়াদুস সালেহীন ১৮৫৫

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=32648

[2] ফেরেশতা কারা? - islamqa (শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ)

https://islamqa.info/bn/843/

অথবা https://archive.is/wip/bvNLp (আর্কাইভকৃত)

[3] এ ব্যাপারে বিস্ত্যারিত আলোচনার জন্য দেখুনঃ

Who Can See Angels in Their True Form? - islamqa (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)

 https://islamqa.info/en/96661/

অথবা  https://archive.is/wip/a2Pqk (আর্কাইভকৃত)

[4] তাফসির ইবন উসাইমিন, সুরা ফাতিরের ১ নং আয়াতের তাফসির থেকে।

https://tafsir.app/ibn-uthaymeen/35/1

অথবা https://archive.is/wip/bqQTY (আর্কাইভকৃত)

[5] তাফসীরে জাকারিয়া, সুরা ফাতিরের ১ নং আয়াতের তাফসির থেকে।

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=3661