- মুহাম্মদ ﷺ ও আয়েশা(রাঃ) এর বিয়ের কারণে মুসলিম উম্মাহ নানাদিক থেকে লাভবান হয়েছিল। আয়েশা(রাঃ), মুহাম্মদ ﷺ এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণনা করেছিলেন।[২৮]
-সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণনাকারীদের মাঝে তিনি ছিলেন সপ্তম, নারীদের মধ্যে থেকে প্রথম।
-হাদীস এবং তাফসীরের এমন কোন বই নেই যাতে, আয়েশা(রাঃ) নামটি জ্বলজ্বল করে না।
-রাসূল ﷺ এর মৃত্যুর পর লম্বা একটা সময় তাঁর জ্ঞান আয়েশা(রাঃ) সাহাবী ও তাবেয়ীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। তিরমিযীতে আবু মুসা আশআরি(রাঃ) থেকে বর্ণিত, “আমাদের, সাহাবীগণের কাছে কোনো হাদীস অস্পষ্ট লাগলে, আমরা আয়েশা(রাঃ) এর নিকট শরণাপন্ন হতাম। তাঁর কাছে অবশ্যই কোনো না কোনো ধারণা পাওয়া যেতো।[২৯]
ইমাম যুহরী(রহঃ) তাবিঈদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। অনেক সাহাবীর সাহচর্যে ধন্য হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “সবচেয়ে ভালো জ্ঞান ছিলো আয়েশা(রাঃ) এর। বড়ো বড়ো সাহাবীগণ তাঁর কাছে জানতে চাইতেন।”[৩০]
ইমাম যুহরী আরো বলেন, “যদি সকল মানুষের জ্ঞান এবং পবিত্র স্ত্রীগণের জ্ঞান একত্রিত করা হয়, তারপরেও আয়েশা(রাঃ) এর জ্ঞান বেশী হবে।”[৩১]
---
আবার মক্কার মুশরিক কুরাইশদের কাছে ফিরে যাই। নানাভাবে মুহাম্মদ ﷺ কে প্রলোভন দেখিয়েও তারা মুহাম্মদ ﷺ এর সাথে কোন সমঝোতা করতে পারেনি। মুহাম্মদ ﷺ যদি নারীলোভী হতেন তবে তখনকার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আরবের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের বিয়ে করতে পারতেন, শিশুকামী হলে পারতেন বেছে বেছে শিশুদের ভোগ করতে। তিনি তার কিছুই করেননি। কারণ, তাঁর মিশন ছিলো সত্যের পথে আজন্ম সংগ্রামের। তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে ‘সৃষ্টির দাসত্ব থেকে স্রষ্টার দাসত্ব’ এর দিকে নিয়ে যাওয়া। তাই তো সত্য প্রচারের জন্য অনমনীয় থেকে তিনি বলেছিলেন,
“আমার এক হাতে সূর্য আরেক হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমার ধর্ম থেকে আমি বিরত হবো না। হয় আল্লাহ আমাকে জয়ী করবেন, নতুবা আমি শেষ হয়ে যাবো। কিন্তু এ কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হবো না। ” [৩২]
তথ্যসূত্রঃ
[১] সিরাতুর রাসূল-মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা-৭৪৮
[২] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪১৮
[৩] Cantor JM, Blanchard R, Christensen BK, Dickey R, Klassen PE, Beckstead AL, Blak T, Kuban ME (2004). "Intelligence, memory, and handedness in pedophilia". Neuropsychology 18 (1): 3–14.
[৪] Michael Hart in 'The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,' New York, 1978.
[৫] Sir George Bernard Shaw in 'The Genuine Islam,' Vol. 1, No. 8, 1936.
[৬] "Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition". American Psychiatric Publishing. 2013
[৭] Montesqueu-The spirit of Laws- Book-16,page 264
[৮] তিরমিযী, কিতাবুল নিকাহ
[১০] অনেক মুসলিমই ছয় বছর বয়সে যে আয়েশা(রাঃ) এর বিয়ে হয়েছিলো, তা স্বীকার করেন না। তারা বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণের চেষ্টা করেন যে, বিয়ের সময় আয়েশা(রাঃ) এর বয়স ছিল বারো বছর অথবা ষোল বছর কিংবা তার চেয়েও বেশী। এই দাবী মেনে নিলে বেশ কয়েকটি সহীহ হাদীসকে অস্বীকার করতে হয়। ‘বিয়ের সময় আয়েশা(রাঃ) এর বয়স ষোল বছর ছিল’- এ সংক্রান্ত দাবীগুলো খণ্ডন করেছেন সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী(রহঃ)। আগ্রহীরা তার বিখ্যাত বই “সীরাতে আয়েশা” পড়লে সেগুলো জানতে পারবেন(পৃষ্ঠাঃ৪০৪-৪৪৬)।
[১১] মুসনাদে আহমাদ, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ২১১
[১২] আয়েশা(রাঃ) ছিলেন রাসূল ﷺ এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী। অনেক ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদ আর খ্রিষ্টান গবেষকদের দাবী হচ্ছে , যেহেতু আরবীতে بكر বলতে কুমারী মেয়েদের বুঝানো হয়, তাই সেই সম্মানের খাতিরেই তাঁর পিতা ইসলামে “আবু বকর” উপনামে খ্যাত হন। একই ভুল করেছেন ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার অন্যতম পথিকৃৎ- স্যার সৈয়দ আমির আলি তার “লাইফ অফ মুহাম্মাদ” গ্রন্থের ১৪ নং অধ্যায়ে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আয়েশা(রাঃ) এর জন্মের বহু পূর্বেই তাঁর পিতা “আবু বকর” উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। আর এই পন্ডিতদের কে জানাবেন যে, আরবী ভাষায় কুমারীকে بَكْر (ফাতহা দিয়ে-বকর) বলা হয় না; বরং بِكْر (কাসরা দিয়ে-বিকর) পড়া হয়?
[১৩] তাবাকাত, ইবনে সা‘দ, পৃষ্ঠাঃ ৪৩
[১৪] Al-Dawoodi said: ‘Aa’ishah (may Allaah be pleased with her) was reached physical maturity (at the time when her marriage was consummated).
(Sharh Muslim, 9/206 )
https://islamqa.info/en/22442
[১৫] মুসনাদে আহমদঃ ৬/৬৪
[১৬] আবু দাউদ
[১৭] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
[১৮] সুনানে আবু দাউদ
[১৯] সহীহ বুখারী
[২০] সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠাঃ ৬৪০
[২১] সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠাঃ ৮৯৭
[২২] মুসনাদে আহমাদ, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৫৮
[২৩] মুসনাদে আহমাদ, পৃষ্ঠাঃ ২৫৫
[২৪] মুসনাদে আহমাদ, পৃষ্ঠাঃ ২১৭
[২৫] সহীহ বুখারী
[২৬] সীরাতে আয়েশা-সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী(রহঃ), পৃষ্ঠা-১৪৯
[২৭] সহীহ মুসলিম
[২৮] সিরাতুর রাসূল-মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা- ৭৬৮
[২৯] জামে তিরমিযীঃ মানাকেব আয়েশা(রাঃ)
[৩০] তাবাকাত ইবনে সা‘দ
[৩১] মুসতারাকে হাকেম
[৩২] সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৪