কা’বা—যাকে বলা হয় ‘বাইতুল্লাহ’। আল্লাহর ঘর। লক্ষ-কোটি মুসলিমের হৃদয়ের স্পন্দন। ভালোবাসা ও আবেগের অন্য নাম। লক্ষ লক্ষ মানুষ এ ঘরটিকে জীবনে একবার দেখতে পাবার জন্য মুখিয়ে থাকেন। কা’বা আমাদের এক আল্লাহ তা’আলার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেইসব মহান নবীদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যারা এখানে এসে আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করেছেন। উচ্চস্বরে আসমান ও জমিনের রব মহান আল্লাহর প্রশংসা করেছেন।
কিন্তু কিছু ইসলামবিরোধী লেখকের অভিযোগ হচ্ছে—কা’বা ছিল আরব মূর্তিপূজকদের মন্দির। মুহাম্মাদ(ﷺ) তাদের মন্দির থেকে তাদের উচ্ছেদ করে এক আল্লাহর উপাসনা ও হজ শুরু করেন। এছাড়া মুসলিমদের দাবি নাকি মিথ্যা— ইব্রাহিম(আ.) নাকি কখনোই মক্কায় আসেননি, কাজেই তাঁর পক্ষে কা’বা নির্মাণ সম্ভব না। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রাচীন গ্রন্থ ইব্রাহিম(আ.) এর ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা করে। কিন্তু কা’বার ব্যাপারে নাকি এসব গ্রন্থ কিছু বলেনি। অতএব কা’বা ইব্রাহিমী (Abrahamic) স্রষ্টার উপাসনা গৃহ হতে পারে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কা’বা ইব্রাহিম(আ.) এর নির্মাণ করেছেন—এটা আরব পৌত্তলিকদেরও বিশ্বাস ছিল :
মুক্তমনারা আরবের মূর্তিপূজকদের প্রতি খুব দরদ রাখবার দাবি করে, মুহাম্মাদ(ﷺ) নাকি তাদের মন্দিরকে এক আল্লাহর উপাসনালয় মসজিদুল হারামে রূপান্তরিত করেছেন। মুক্তমনারা কি এটা জানে যে খোদ আরবের মূর্তিপূজকরাই এটা দাবি করত যে, তারা ইব্রাহিম(আ.) ও ইসমাঈল(আ.) এর বংশধর এবং কা’বা ছিল তাদের পিতা ইব্রাহিম(আ.) এর নির্মাণকৃত আল্লাহর ঘর?[1] কা’বা যে ইব্রাহিম(আ.) এর নির্মাণকৃত আল্লাহর ঘর —এটা নিয়ে মুসলিম কিংবা আরবের মূর্তিপূজক কারও কোনো দ্বিমত ছিল না। দ্বিমত ছিল এটা নিয়ে যে, মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর কোনো শরীক আছে নাকি নেই।
ইব্রাহিম(আ.) [prophet Abraham] যে মূর্তিপূজক ছিলেন না এবং এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর [ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে El/Eloah/Elohim] উপাসনা করতেন, এটা নিয়ে মুসলিম-ইহুদি-খ্রিষ্টান কারও দ্বিমত নেই।
“ঈশ্বর মোশিকে [নবী মুসা(আ.)] আরো বললেন, “ইস্রায়েলিয়দের বল : সদাপ্রভু ঈশ্বর, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর—আব্রাহামের [নবী ইব্রাহিম(আ.)], ইসহাকের, যাকোবের [নবী ইয়াকুব(আ.)] ঈশ্বর আমাকে তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন। এটাই চিরকালের জন্য আমার নাম, এই নামেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাকে স্মরণ করা হবে।” [2]
মুক্তমনারা কুরআন এবং হাদিসের ওপর সন্দেহ পোষণ করে। অথচ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থের ব্যাপারে তাদের এমন কোনো কথা বলতে শোনা যায় না। ইব্রাহিম(আ.) এর ব্যাপারে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থকে তারা প্রামাণ্য হিসাবে ধরেছে এবং কা’বা সম্পর্কে মুসলিমদের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থের কথা উল্লেখ করে বলেছে—“ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে কা’বার কথা নেই।” এ দিয়েই মুক্তমনাদের একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায়।
ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে কি আসলেই কা’বার কথা আলোচিত হয়নি? :
চলুন আমরা দেখি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে আসলেই কা’বার কথা এসেছে কি না। বাইবেলের গীতসংহিতা (Psalms) গ্রন্থে বলা হয়েছে:
“[হে প্রভু] তারাই আশির্বাদধন্য যারা তোমার ঘরে বাস করে; তারা সদা-সর্বদা তোমার প্রশংসা করে। তারাই আশির্বাদধন্য তোমাতেই যাদের শক্তি, যারা তীর্থযাত্রার জন্য মনস্থির করে। যখন তারা বাকা উপত্যকা দিয়ে গমন করে, একে পানির নহরের স্থান গণ্য করে। শরতের বৃষ্টি একে আশির্বাদে পূর্ণ করে [কোনো কোনো ভার্সনে – শরতের বৃষ্টি জলাশয়গুলোকে ভরিয়ে দেয়]।”
Blessed are those who dwell in your house; they are ever praising you. Blessed are those whose strength is in you, whose hearts are set on pilgrimage. As they pass through the Valley of Baka, they make it a place of springs; the autumn rains also cover it with pools [Or blessings]. (NIV)[3]
বাকা বা বাক্কা হচ্ছে মক্কার প্রাচীন নাম। বাইবেলের গীতসংহিতা হচ্ছে দাউদ(আ.) এর ওপর নাযিলকৃত কিতাব [যাবুর] এর বিকৃত রূপ। এটি বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) অংশে আছে এবং এটি ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় ধর্মাবলম্বীদের স্বীকৃত গ্রন্থ। এই কিতাবে আমরা বাকায় তীর্থযাত্রী (হজ কাফেলা)দের বিবরণ পাই। বাইবেলের পদটিতে আরও বলা হয়েছে যে, সেখানে আশীর্বাদ (blessings) বা বরকত আছে । আল কুরআনেও মক্কার ‘বাক্কা’ নামের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এখানকার বরকতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো কোনো অনুবাদে ওই স্থানে জলাশয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এটিও বলা হয়েছে যে, তারা একে পানির নহরের স্থান গণ্য করে। মক্কায় কা’বার নিকটেও জলাশয় আছে, বিপুল পানির সুপ্রাচীন আধার—যমযম কূপ।
আল কুরআনে বলা হয়েছে:
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ ﴿٩٦﴾ فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّـهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّـهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ﴿٩٧﴾
অর্থ :“নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় [মক্কা] অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মাকামে ইব্রাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা মানে না—আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।” [4]
হিব্রু ভাষায় ‘বাকা’(בכא) শব্দের অর্থ হচ্ছে কান্না বা weeping।[5] এ কারণে বাইবেলের কোনো কোনো অনুবাদে গীতসংহিতা(Psalms) ৮৪ : ৬ এ ‘বাকা উপত্যকা’(valley of Baka/Baca) এর স্থলে হিব্রু শব্দটির অনুবাদ করে লেখা হয়েছে ‘কান্না উপত্যকা’ বা ‘valley of weeping’।[6] বাইবেলে ইসমাঈল(আ.) ও তাঁর মা হাগার [হাযেরা(আ.)]কে নির্বাসন দেবার ঘটনায় উল্লেখ আছে যে, শিশু ইসমাঈল(আ.) মরুভূমিতে পানির অভাবে কাঁদতে শুরু করেন। তাঁর সেই কান্না শুনে ঈশ্বর স্বর্গদূত পাঠিয়ে তাঁদের অভয় দেন এবং পানির একটি কূপ তৈরি করে তাঁদের পানি পানের ব্যবস্থা করেন।[7] বাইবেলে অনেকে জায়গাতেই বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।[8] এখানে শিশু ইসমাঈল(আ.) এর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাকা উপত্যকার নামে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর হাদিস অনুযায়ী শিশু ইসমাঈল(আ.) ও তাঁর মা’কে মক্কায় রেখে আসা হয়েছিল।[9]
Jewish Encyclopedia তে Psalms 84 : 6 এর ‘valley of Baka/Baca’ সম্পর্কে বলা হয়েছে :
“A valley mentioned in Ps. lxxxiv. 7 [6 A. V.]. Since it is there said that pilgrims transform the valley into a land of wells, the old translators gave to "Baca" the meaning of a "valley of weeping"; but it signifies rather any valley lacking water. Support for this latter view is to be found in II Sam. v. 23 et seq.; I Chron. xiv. 14 et seq., in which the plural form of the same word designates a tree similar to the balsam-tree; and it was supposed that a dry valley could be named after this tree.König takes "Baca" from the Arabian "baka'a," and translates it "lacking in streams." The Psalmist apparently has in mind a particular valley whose natural condition led him to adopt its name.” [10]
অর্থাৎ এখানে পানির অভাব আছে এমন স্থানের কথা বোঝানো হচ্ছে। এখানে জায়গাটির নামের সঙ্গে Balsam নামক এক প্রকার সুগন্ধি পুষ্পতরুকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। König (একজন জার্মান পণ্ডিত) Baca শব্দটিকে আরবি baka'a থেকে গ্রহণ করেছেন এবং এর অর্থ করেছেন ‘পানি প্রবাহের অভাব’।
বাইবেলের বিভিন্ন সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থেও ‘valley of Baka/Baca’র সাথে balsam পুষ্পতরুকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে।[11]
The new encyclopædia (Universal dictionary of arts and sciences) বলা হয়েছে:
An Arabian tree, famous from the most remote antiquity, and yet little known, is that which produces the balsam of Mecca.[12]
অর্থাৎ, মক্কার balsam পুষ্পতরু হচ্ছে একটি আরব্য গাছ, যেটি সুদূর প্রাচীনকাল থেকে অত্যন্ত বিখ্যাত।
পানির অভাব আছে এমন স্থান, balsam পুষ্পতরু—এ সবকিছুই মক্কাকেই নির্দেশ করছে।
বাইবেলের গীতসংহিতার( Psalms) ওই ৮৪ নং অধ্যায়েই ৩ নং পদে বলা হয়েছে:
“হে সর্বশক্তিমান প্রভু, আমার রাজা, আমার ঈশ্বর, চড়ুই পাখিরা পর্যন্ত আপনার মন্দিরে তাদের আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। আপনার বেদীর কাছেই ওরা বাসা বেঁধেছে এবং ওদের শাবকও আছে।”
“Even the sparrow has found a home,and the swallow a nest for herself, where she may have heryoung—a place near your altar,Lord Almighty, my King and my God. (NIV)” [13]
অপর দিকে, ইবন হিশামের সীরাতুন নবী(সা.) এ মক্কার কা’বা গৃহ সম্পর্কে একজন প্রাচীন আরব কবির কবিতা উল্লেখ করা হয়েছে :
“ সেই পবিত্র ঘরের (কা’বা) জন্য আমার মন কাঁদে, যেখানে কবুতর ও চড়ুই পাখিকে কষ্ট দেয়া হয় না, বরং তারা সেখানে নিরাপদে বাস করে। এমনকি সেখানকার বন্য পশুদেরকেও শিকার করা হয় না।...”
ইবন হিশাম উল্লেখ করেছেন যে, কোনো কোনো কবিতা-বিশারদের মতে এটাই আরবি ভাষায় রচিত প্রথম কবিতা।[14]
প্রাচীন যুগে আরব কবিদের কবিতাগুলো ছিল অনেকটা বর্তমান যুগের সংবাদ-মাধ্যমের মতো। বাইবেলের গীতসংহিতাতে উল্লেখিত বাকা উপত্যকায় ঈশ্বরের মন্দির এবং মক্কার কা’বাগৃহের বিবরণের মাঝে আরও একটি মিল খুঁজে পাওয়া গেল।
যদি এখনো কেউ বলতে চান যে এই মিল ‘কাকতালীয়’, তাদের আরও একটা জিনিস দেখাতে চাই। বাইবেলের গীতসংহিতার (Psalms) ওই একই অধ্যায়ের ৮-১০ নং পদে বলা হয়েছে:
“হে সর্বশক্তিমান প্রভু, আমার প্রার্থনা শুনুন। হে যাকোবের [ইয়াকুব(আ.)] ঈশ্বর, আমার কথা শুনুন। হে ঈশ্বর, আমাদের রক্ষাকর্তাকে সুরক্ষা দিন। আপনার মনোনীত রাজার প্রতি সদয় হোন। অন্য জায়গায় হাজার দিনের চেয়ে আপনার মন্দিরের এক দিন অনেক ভালো। একজন দুষ্ট লোকের ঘরে বাস করার চেয়ে আমার ঈশ্বরের গৃহের দ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ভালো।”
“Hear my prayer, Lord God Almighty; listen to me, God of Jacob. Look on our shield, O God; look with favor on your anointed one. Better is one day in your courtsthan a thousand elsewhere; I would rather be a doorkeeper in the house of my God than dwell in the tents of the wicked.” (NIV) [15]
এবার আমরা মক্কার মসজিদুল হারামে সলাত বা নামাজের ফযিলতের একটি হাদিস দেখি :
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, “মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদের তুলনায় আমার এই মসজিদে (মসজিদুন নববী) একটি সলাত (নামাজ) হাজার সলাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর অন্যান্য মসজিদের তুলনায় মসজিদুল হারামের একটি সলাত এক শত হাজার (১ লক্ষ) সলাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।”[16]
এসব মিল থেকে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে মক্কা মুকাররমায় অবস্থিত আল্লাহর ঘর কা’বার কথা উল্লেখ আছে।
এমন দলিল-প্রমাণ রয়েছে যে, নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর জন্মেরও বহু আগে থেকে আরবের ইহুদিরা কা’বাকে তাঁদের পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম(আ.) এর নির্মাণ করা আল্লাহর ঘর হিসাবে চিনতো। বাদশাহ তুব্বান (তুব্বা/আবু কারাব আসাদ) ৩৯০ থেকে ৪২০ খ্রিষ্টাব্দে ইয়েমেন শাসন করতেন।[17] একবার মদীনাবাসীদের সাথে তার যুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সেই ঘটনার ঐতিহাসিক বিবরণের মধ্যে আমরা কা’বা সম্পর্কে তৎকালীন মদীনার প্রাচীন ইহুদিদের বিশ্বাসের উল্লেখ পাই।
মদীনাবাসীদের সাথে তুব্বানের (ইয়েমেনের বাদশাহ) যুদ্ধের ঘটনা...এভাবে যুদ্ধে লিপ্ত থাকাকালে বনূ কুরায়যা গোত্রের দুজন ইহুদি পণ্ডিত তুব্বানের সাথে দেখা করে। বনূ কুরায়যা গোত্রটি কুরায়যার বংশধর। ...মদীনার এই দুই পণ্ডিত ছিলেন আল্লাহর কিতাবে বিশেষ পারদর্শী। তুব্বান মদীনা ও তার অধিবাসীদের ধ্বংস করতে চান, এ কথা শুনে তারা তার সাথে দেখা করে। তখন তারা তাকে বলে: “হে রাজা! আপনার ইচ্ছা পরিত্যাগ করুন। যদি জিদ ধরেন, তাহলেও আপনার সামনে বাধা আসবে। ফলে আপনি যা চান তা করতে পারবেন না। অথচ অচিরেই আপনার ওপর যে শাস্তি নেমে আসবে তা ঠেকানোর কোনো উপায় আপনার থাকবে না। তুব্বান বললেন:কী কারণে আমার ওপর শাস্তি নেমে আসবে ?
তারা বলল: মদীনা শেষ যামানার নবীর হিজরতস্থল। কুরায়শদের দ্বারা তিনি পবিত্র স্থান থেকে বহিষ্কৃত হবেন এবং এখানে এসে বসবাস করবেন। এ কথা শুনে রাজা থামলেন। তার মনে হলো, লোক দুজন সত্যিই বিজ্ঞ। তাদের কথায় রাজা মুগ্ধ হলেন। তিনি মদীনা ত্যাগ করলেন এবং ওই পণ্ডিতদ্বয়ের ধর্ম গ্রহণ করলেন।...
...ইবন ইসহাক বলেনঃ তুব্বান ও তার স্বজাতির লোকেরা মূর্তিপূজারী ছিল। তিনি মক্কা রওনা হলেন আর ইয়েমেন যেতে তাকে মক্কা হয়েই যেতে হতো।...পণ্ডিতদ্বয় বলল : “তোমাকে যারা এই পরামর্শ দিয়েছে, তারা তোমাকে ও তোমার সৈন্যসামন্তকে ধ্বংস করার ফন্দি এঁটেছে। আমাদের জানামতে পৃথিবীতে একমাত্র এই ঘরটিই (কা’বা) রয়েছে, যাকে আল্লাহ তাঁর নিজস্ব ঘর হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তোমাদের হুযায়লীরা যা করতে বলেছে, তা করলে তুমি এবং তোমার সহযাত্রীরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে।” তিনি বললেন : “তা হলে ওই ঘরের কাছে গিয়ে আমার কী করা উচিত বলে তোমরা মনে করো?” পণ্ডিতদ্বয় বলল : “কা'বার আশপাশের লোকেরা যা করে, তুমিও তা-ই করবে। ঘরটির চারপাশ প্রদক্ষিণ করবে, তার প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শন করবে। তারপর মাথা কামাবে। যতক্ষণ সেখানে থাকবে, বিনয়ী থাকবে।” তুব্বান বললেন:তোমরা দুজনে এ কাজ করো না কেন?
তারা বলল : “আল্লাহর কসম, ওটা আমাদের পিতা ইব্রাহিমের ঘর। ওই ঘর সম্পর্কে তোমাকে যা বলেছি, তা সবই সত্য। কিন্তু মক্কাবাসী ওই ঘরের চারপাশে মূর্তি স্থাপন করে এবং তার সামনে রক্তপাত করে আমাদের ওখানে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। ওরা অপবিত্র মুশরিক।” তুব্বান তাদের এসব উক্তির সত্যতা এবং তাদের আন্তরিকতা হৃদয়ঙ্গম করলেন।... তারপর মক্কা রওনা হয়ে গেলেন। মক্কা পৌঁছে তিনি কা'বা ঘরের তওয়াফ করলেন, ঘরের কাছে কুরবানী করলেন, মাথা কামালেন এবং ছয় দিন মক্কায় ঘরের অবস্থান করলেন। এ সময় তিনি আরও কুরবানী করে মক্কাবাসীকে আপ্যায়ন করলেন। তাদের তিনি মধু পান করালেন।...তুব্বানই প্রথম কা'বাকে গিলাফ দিয়ে আবৃত করেন। তিনি কা'বার মুতাওয়াল্লী জুরহুম গোত্রের লোকদের সময়মতো কাবায় গিলাফ চড়াতে উপদেশ দেন। কা'বাকে মূর্তিপূজাসহ সকল কলুষতা থেকে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রাখতে, তার কাছে কোনো রক্তপাত না করতে, মৃতদেহ ও ঋতুকালে ব্যবহৃত নেকড়া কা'বাঘরের কাছে না ফেলার নির্দেশ দেন। তুব্বান কা'বাঘরের জন্য একটি দরজা এবং চাবিও বানিয়ে দেন। [18]
Marshall G. S. Hodgson এর The Venture of Islam: Conscience and History in a World Civilization গ্রন্থে মুহাম্মাদ(ﷺ) এর পূর্বের জাহিলী যুগে মক্কার বিবরণ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
It seems that even Christian Arabs made pilgrimage to the Ka'bah, at that time, honouring Allah there as God the Creator. [19]
অর্থাৎ - এমনকি আরব খ্রিষ্টানরাও সে যুগে আল্লাহকে স্রষ্টা হিসাবে ভক্তি করে কা’বায় হজ করতো।
কা’বা যদি শুধুই একটা ‘পৌত্তলিক উপাসনালয়’ হত, এর কথা যদি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কিতাবে আদৌ উল্লেখ না থাকতো, তাহলে মুহাম্মাদ(ﷺ) এর জন্মেরও বহু আগের সময়ের ইহুদিরা কেন কা’বাকে তাদের পিতা ইব্রাহিম(আ.) এর নির্মাণ করা আল্লাহর ঘর বলে ভক্তি করত? বহু যুগ আগের সেই খ্রিষ্টানরা কেন এখানে হজ বা তীর্থযাত্রা করতে আসতো? এর উত্তর কি আজকের খ্রিষ্টান মিশনারিরা দিতে পারবে?
ইসমাঈল(আ.) এর বসবাসের স্থান :
প্রথমে আমরা সহীহ বুখারীর একটি হাদিস থেকে দেখে নিই, কোথায় ইসমাঈল(আ কে রেখে আসা হয়েছিল।
“...তারপর (আল্লাহর হুকুমে) ইব্রাহিম(আ.) হাযেরা(আ.) এবং তাঁর শিশু ছেলে ইসমাঈল(আ.)কে সাথে নিয়ে বের হলেন, এ অবস্থায় যে, হাযেরা (আ.) শিশুকে দুধ পান করাতেন। অবশেষে যেখানে কা’বা ঘর অবস্থিত, ইব্রাহিম(আ.) তাঁদের উভয়কে সেখানে নিয়ে এসে মসজিদের উঁচু অংশে যমযম কূপের ওপরে অবস্থিত একটি বিরাট গাছের নিচে তাদের রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল কোনো মানুষ, না ছিল কোনোরূপ পানির ব্যবস্থা। পরে তিনি তাদের সেখানেই রেখে গেলেন। আর এছাড়া তিনি তাদের কাছে রেখে গেলেন একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর এবং একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি।…
হঠাৎ যেখানে যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে তিনি একজন ফেরেশতা দেখতে পেলেন। সেই ফেরেশতা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করলেন অথবা তিনি বলছেন, আপন ডানা দ্বারা আঘাত করলেন। ফলে পানি বের হতে লাগল। তখন হাযেরা (আ.) এর চারপাশে নিজ হাতে বাঁধ দিয়ে এক হাউযের ন্যায় করে দিলেন এবং হাতের কোষ ভরে তাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। তখনো পানি উপচে উঠতে থাকল।
রাবী বলেন, তারপর হাযেরা (আ.) পানি পান করলেন, আর শিশুপুত্রকেও দুধ পান করালেন, তখন ফেরেশতা তাঁকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোনো আশঙ্কা করবেন না। কেননা, এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। এ শিশুটি এবং তাঁর পিতা দুজনে এখানে ঘর নির্মাণ করবে এবং আল্লাহ তাঁর আপনজনকে কখনো ধ্বংস করেন না। ওই সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি জমিন থেকে টিলার ন্যায় উঁচু ছিল। বন্যা আসার ফলে তাঁর ডানে বামে ভেঙে যাচ্ছিল। এরপর হাযেরা (আ.) এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে (ইয়ামান দেশীয়) জুরহুম গোত্রের একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। অথবা রাবী বলেন, জুরহুম পরিবারের কিছু লোক কাদা নামক উঁচু ভূমির পথ ধরে এদিক আসছিল। তারা মক্কার নিচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয়ই এ পাখিগুলো পানির ওপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ হয়ে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোনো পানি ছিল না।
তখন তারা একজন কি দুজন লোক সেখানে পাঠাল। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে সকলকে পানির সংবাদ দিলো। সংবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হলো। রাবী বলেন, ইসমাঈল (আ.) এর মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদের অনুমতি দেবেন কি? তিনি জবাব দিলেন - হ্যাঁ। তবে, এ পানির ওপর তোমাদের কোনো অধিকার থাকবে না। তারা ‘হ্যাঁ’ বলে তাদের মত প্রকাশ করল। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, নবী(ﷺ) বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিলো। আর তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন।
এরপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার-পরিজনের নিকটও সংবাদ পাঠাল। তারপর তারাও এসে তাঁদের সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হলো। আর ইসমাঈলও যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবি ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌঁছে তিনি তাদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। এরপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিলো। এরই মধ্যে ইসমাঈলের মা হাযেরা (আ.) ইন্তেকাল করেন।…” [20]
আমরা দেখলাম সহীহ বুখারীর হাদিস অনুযায়ী ইসমাঈল(আ.)ও তাঁর মা’কে মক্কায় আল্লাহর ঘরের স্থানের নিকটে রেখে আসা হয়েছিল। সেখানে জুরহুম আরব গোত্রের সাথে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং তিনি তাদের নিকট থেকে আরবি ভাষা শেখেন।
ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী ইসমাঈল(আ.) পারানে বাস করতেন।[21] পারান স্থানটি লোহিত সাগরের সাথে সম্পর্কিত, এলাত [Elath] এর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশই বাইবেলে বর্ণিত পারানের অন্তর্ভুক্ত। যার মধ্যে আরব অঞ্চলও পড়ে যায়। অনেক খ্রিষ্টান পণ্ডিত এই দাবি করেন যে, পারানের যে অংশে ইসমাঈল(আ.) থাকতেন তা লোহিত সাগরের পশ্চিমে; পারান অঞ্চলটি কানান এবং মিসরের কাছাকাছি কোথাও। কিংবা ফিলিস্তিন এবং মিসরের সিনাই পেনিনসুলার চারপাশে। এবং ইব্রাহিম(আ.) মক্কায় আসেননি। তাদের কিছু পণ্ডিত এবং কতিপয় প্রাচ্যবিদ (orientalist) এমন দাবি করে। এই দাবি তাদের জন্য মুহাম্মাদ(ﷺ)কে অস্বীকার করার ব্যাপারে সহায়ক হয়। মুক্তমনারাও এসব ব্যাপারে খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের মুখের কথার ওপরে খুব আস্থাশীল।
ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ থেকেই আমরা দেখি, পারান আসলে কোথায়—লোহিত সাগরের পশ্চিমে নাকি পূর্বে। কানান কিংবা মিসরে নাকি আরবদেশে।
প্রথমত, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে স্পষ্টতই বলা হয়েছে যে ইসমায়েলীয়রা [Ishmaelites, ইসমাঈল(আ.) এর বংশধর] মিসরে থাকত না।
“তারা যখন খাবার জন্য বসল তখন তারা দেখতে পেল, গিলিয়দ থেকে ইসমায়েলীয়দের একটা কাফেলা আসছে। তাদের উটগুলো মশলা, সুগন্ধি তেল এবং গন্ধরস দ্বারা পূর্ণ ছিল। তারা সেগুলো মিসরে নিয়ে যাচ্ছিল।” [22]
ইসমাঈল(আ.) এবং তাঁর বংশধররা যদি মিসরের সিনাই পেনিনসুলাতেই থাকত, তাহলে তারা আবার কীভাবে মিসরে উটে করে জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছিল? ঐতিহাসিক ভাবেই এটা প্রমাণিত যে, মক্কার আরবরা ইসমাঈল(আ.) এর বংশধর। আর তারা উট ব্যবহার করত এবং দূর-দূরান্তে বাণিজ্য-কাফেলা নিয়ে যেত। বাইবেলের আদিপুস্তক ৩৭:২৫ একদম সেই দাবিকেই সমর্থন করছে। এবং বাইবেলের এই পদ আমাদের জানাচ্ছে যে, ইসমায়েলীয়রা মিসরে বাস করত না।
Easton's Bible Dictionary অনুযায়ী ‘গিলিয়দ’(Gilead) হচ্ছে জর্ডানের পূর্বদিকের একটি পাহাড়ি এলাকা।[23] বাইবেলের Targum (Aramaic version) এবং সিরিয়াক ভার্সনগুলোতে আদিপুস্তক (Genesis) ৩৭:২৫ এ ‘ইসমায়েলীয়’ এর বদলে বলা আছে ‘আরব’।[24] অর্থাৎ সেই ইসমায়েলীয়রা আরব থেকে মিসরে আসছিল, আদিপুস্তক(Genesis) ৩৭:২৫ এর মাধ্যমে তা বোঝা গেল।
ঐতিহাসিক ও সিরাতকারকদের মতে, মুহাম্মাদ(ﷺ) এর পূর্বপুরুষ ছিলেন ইসমাঈল(আ.) এর ছেলে কেদার (কাইদার)।[25] বাইবেল বলছে যে,কেদারের বংশধরেরা আরবে বসবাস করত।
“আরব দেশ এবং কেদার বংশের সমস্ত নেতারা/যুবরাজরা [আদিপুস্তকে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে যে, ইসমায়েলের বংশ থেকে১২জন নেতা আসবে] ছিল তোমার ক্রেতা। তারা মেষশাবক, ভেড়া ও ছাগল এগুলোর ব্যাপারে তোমার সাথে বাণিজ্য করত।” [26]
খ্রিষ্টান মিশনারিরা দাবি করে যে, পারান হচ্ছে মিসরের সিনাই মরুভূমির অংশ। কিন্তু তাদের এই দাবিও তাদের নিজ গ্রন্থ থেকেই খণ্ডন হয়।
“অতঃপর ইস্রায়েলীয়রা সিনাই এর মরুভূমি থেকে যাত্রা করল এবং বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে লাগল যতক্ষণ না মেখখণ্ড তাদেরকে পারানের মরুভূমিতে নিয়ে এল।” [27]
এ থেকে বোঝা গেল যে, পারান ও মিসরের সিনাই মরুভূমি মোটেও এক জায়গা নয়; বরং ভিন্ন জায়গা। ইহুদিরা সিনাই এর মরুভূমি থেকে পারানে গিয়েছিল।
বাইবেলে উল্লেখিত ‘পারান’ যদি মিসরের সিনাই মরুভূমি এক জায়গা না হয়, তাহলে সেটি আসলে কোন জায়গা?
বাইবেলের নতুন নিয়ম (New Testament) এ সিনাই পাহাড়ের সাথে হাগার (বিবি হাযেরা)কে সংশ্লিষ্ট করে এটাই স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে যে, তিনি [এবং তাঁর সন্তান ইসমাঈল(আ.)] আরবের সাথে সংশ্লিষ্ট।
“হাগার হচ্ছেন আরব দেশের সিনাই পর্বতের মত এবং বর্তমান জেরুসালেম নগরের প্রতিরূপ।কারণ সে তার সন্তানদের সাথে দাসত্বে আবদ্ধ।” [28]
ইসমাঈল(আ.)কে আরব দেশে রেখে আসা হয়েছিল তার স্বপক্ষে অমুসলিম উৎস থেকে বেশ কিছু প্রমাণ দেওয়া যায়। ইহুদিদের তাওরাতের[29] সর্বপ্রথম আরবি অনুবাদক হচ্ছেন কিংবদন্তি র্যাবাই সাদিয়া গাওন (Saadia Gaon/Rasag)।[30] তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইহুদি পণ্ডিতদের একজন গণ্য করা হয়। মূল হিব্রুর সমজাতীয় আরবি শব্দ নির্বাচনের জন্য তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। বাইবেলে আরব জাতির আদি পুরুষ কাহতানের (ইংরেজি অনুবাদে Joktan) [31] বংশধরদের অর্থাৎ আরব জাতির আবাসস্থল হিসাবে বলা হয়েছে পূর্বের পাহাড়ের দিকে মেশা (Mesha) থেকে সেফার (Sephar) পর্যন্ত অঞ্চলকে।[32] সাদিয়া গাওনের তাওরাতের আরবি অনুবাদে (الترجمة العربية للتوراة) এই জায়গা দুটোকে মক্কা (مكة) ও মদীনা (مدينة) বলে অনুবাদ করা হয়েছে।[33] সংশ্লিষ্ট অংশের অনুবাদ করা হয়েছে :
فى مكة الى ان تجبيءالمدينةالى الجبل الشرقي
অর্থাৎ “মক্কায়, তুমি মদীনায় যাওয়া অবধি পূর্বদিকের পাহাড়ের দিক পর্যন্ত”। অতএব মক্কা থেকে মদীনা—এই এলাকাটি আরবদের বাসভূমি। ইহুদি তাওরাতের অন্যতম প্রাচীন এই অনুবাদে এমন তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে।
সাদিয়া গাওনের অনুবাদ থেকে বাইবেলের Genesis (التكوين) ১০ম অধ্যায়ের কিছু অংশ
প্রখ্যাত বাইবেল পণ্ডিত অধ্যাপক William Paul আদিপুস্তক (Genesis)১০:৩০ এর হিব্রু খণ্ডাংশের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
“mountain (mountains) of the East. These are supposed to be those mountains of Arabia running from the neighbourhood of Mecca and Medina to the Persian Gulf.” [34]
অর্থাৎ “পূর্বদিকের পাহাড়ের সারি”, এগুলো আরব দেশের সেই পাহাড়গুলো হবার কথা, যেগুলো মক্কা ও মদীনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত চলে গেছে।
সাদিয়া গাওনের তাওরাত অনুবাদে Genesis(التكوين) এর ১৩ নং অধ্যায়ের ১ম পদটি অনুবাদ করা হয়েছে এভাবে:
فصعد أبرام من مصر هو وزوجته وكل ماله ولوط معه إلى القبلة
অর্থাৎ,অতঃপর অব্রাম[বাইবেলে ইব্রাহিম(আ.) এর প্রথম জীবনের নাম] মিসর ত্যাগ করলেন। তাঁর স্ত্রী, সমস্ত জিনিসপত্র এবং লুতকে সঙ্গে নিয়ে কিবলার দিকে অগ্রসর হলেন।
১৩ নং অধ্যায়ের পরবর্তী পদগুলো উল্লেখ করছি। উল্লেখযোগ্য অংশে সাদিয়া গাওনের আরবি অনুবাদ উল্লেখ করে দিচ্ছি :
২. এই সময় অব্রাম খুবই ধনী। তাঁর প্রচুর পশু এবং প্রচুর সোনা ও রুপা ছিল।
৩. অব্রাম তাঁর যাত্রা অব্যাহত রাখলেন,কিবলার দিক থেকে তিনি বৈথেলে ফিরে গেলেন। [فمضى في مراحله من القبلة إلى أيل] সেখান থেকে বৈথেল নগর আর অয় নগরের মধ্যবর্তী স্থানে গেলেন। এখানেই অব্রাম ও তাঁর পরিবার আগে একবার শিবির স্থাপন করেছিলেন।
৪.যে স্থানে তিনি প্রথম বেদী নির্মাণ করেছিলেন সেখানে অব্রাম আল্লাহর নাম ধরে ডাকলেন।
[إلى موضع المذبح الذي صنعه ثم في الابتداء ، فدعا ثم أبرام باسم الله]
৫. এই পর্যটনের সময় অব্রামের সঙ্গে লুতও ছিল। লুতের অনেক পশু ও তাঁবু ছিল।...
১৮ তখন অব্রাম তাঁর তাঁবু উঠিয়ে নিলেন। তিনি মম্রির উচ্চ বৃক্ষগুলির কাছে বাস করতে গেলেন। স্থানটি ছিল হিব্রোন নগরের কাছে। সেখানে অব্রাম প্রভুর উদ্দেশ্যে উপাসনা করার জন্যে একটি বেদী(مذبح)নির্মাণ করলেন।
সাদিয়া গাওনের আরবি অনুবাদে এ অধ্যায়ে একাধিক বার ‘কিবলাহ’ কথাটির উল্লেখ আছে। বাইবেলের তাওরাত অংশের বর্তমান সময়কার অনুবাদে এমন কিছু দেখা যায় না। এখানে মূল হিব্রুতে ‘নেগেভ’ শব্দ আছে।[35]এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘দক্ষিণ দিক’। বর্তমান অনুবাদগুলোতে ‘নেগেভ’ অথবা ‘দক্ষিণ দিক’ এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে ইব্রাহিম(আ.) কর্তৃক একাধিকবার বেদি (উপাসনার ইমারত; مذبح) নির্মাণ করার কথা উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, যেখানে তিনি প্রথম বেদি নির্মাণ করেছিলেন, সেখানে তিনি আল্লাহকে ডাকেন। কা’বাগৃহে হজের সময় “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” বলে আল্লাহকে ডাকার দৃশ্যের সাথে এই বিবরণটি অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ। খ্রিষ্টান মিশনারী এবং তাদের সাথে সাথে অনেক নাস্তিক-মুক্তমনাও কা'বায় হজ করার রীতিকে মূর্তিপুজকদের রীতির সাথে তুলনা করেন। অথচ আমরা ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মীয় গ্রন্থ থেকেও দেখতে পাচ্ছি কিভাবে ইব্রাহিম(আ.) কিবলার দিকে অগ্রসর হয়েছেন এবং ইবাদতের ইমারতের (Altar) নিকট আল্লাহর নাম নিয়েছেন। অমুসলিম উৎস থেকেও এভাবে প্রমাণিত হলো যে এই রীতি মোটেও মূর্তিপুজকদের রীতি নয় বরং ইব্রাহিমী রীতি।
র্যাবাই সাদিয়া গাওনের তাওরাতে Genesis(التكون) এর ১৬ নং অধ্যায়ের ৭ নং পদে শুর(Shur) নামক অঞ্চলের নাম হিজাজ(الحجاز) বলে অনুবাদ করা হয়েছে। হিজাজ হচ্ছে বর্তমান সৌদি আরবের লোহিত সাগরের নিকটবর্তী এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল যার মধ্যে মক্কা-মদীনা উভয় শহর অন্তর্ভুক্ত।[36]
সাদিয়া গাওনের অনুবাদ থেকে বাইবেলের Genesis(التكوين) ১৬ তম অধ্যায়ের কিছু অংশ
তিনি এই অনুবাদ সে সময়ে আরব দেশগুলোতে বসবাসকারী আরবিভাষী ইহুদিদের জন্য করেছিলেন, মুসলিমদের জন্য করেননি। তিনি তার অনুবাদে হিজাজ, মক্কা, মদীনা এই স্থানগুলোর নাম এনেছেন এর অর্থ হচ্ছে—সেই যুগের ক্লাসিক্যাল ইহুদিদের বিশ্বাস এমনই ছিল। তারা মূল হিব্রু শব্দগুলো দ্বারা এই স্থানগুলোকেই বুঝত। এ কারণেই তিনি ‘শুর’, ‘মেশা’, ‘সেফার’—এই শব্দগুলোকে ‘হিজাজ’, ‘মক্কা’, ‘মদীনা’ এইসব শব্দ দ্বারা অনুবাদ করেছেন।
বাইবেলে ইসমাঈল(আ.) এর সন্তানদের বসবাসের স্থান উল্লেখ করে বলা হয়েছে: তারা হাভিলাহ (Havilah) থেকে শুর (Shur) অঞ্চলে বসতি গেড়েছিল।[37] শুর কোথায় তা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। Jewish Encyclopediaএর তথ্য অনুযায়ী হাভিলাহ (Havilah) হচ্ছে আরবের উত্তর অঞ্চল।[38] হিজাজ থেকে আরবের উত্তর অঞ্চল—অর্থাৎ বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী বর্তমান সৌদি আরবের প্রায় পুরোভাগ—ছিল ইসমাঈল(আ.) এর সন্তানদের বসবাসের স্থান। সন্তানদের বসবাসস্থল এটাই নির্দেশ করে যে, ইসমাঈল(আ.)কে আরবে রেখে আসা হয়েছিল; মিসরে বা কানানের কোথাও নয়।
কেউ কেউ এভাবেও বলতে চান –হ্যাঁ, হতে পারে ইসমাঈলের(আ.) বংশধরেরা আরবে থাকত। কিন্তু এটাই কি প্রমাণ করে যে ইব্রাহিম(আ.) তাঁকে আরবে নির্বাসন দিয়েছেন? এমনও তো হতে পারে যে ইসমাঈলের(আ.) বংশধরেরা পরবর্তীতে আরবে গিয়েছে!
এই যুক্তি খণ্ডন করা খুব সহজ।
বাইবেল অনুযায়ী ইসমাঈল(আ.) এর ১২ ছেলের ১ জনের নাম ছিল ‘হাদাদ’ বা 'হাদ্দাদ' (حَدَّاد)। [39] حَدَّاد একটি আরবি শব্দ; যার মানে হচ্ছে, 'কর্মকার' (Smith)[40]। সেকালে একমাত্র আরব জাতিগোষ্ঠীর লোকেদেরই আরবি নাম হতো। বর্তমান সময়ে ইসলামের বিস্তৃতি এবং সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল কুরআন আরবি ভাষায় হবার কারণে অনারব জাতিগোষ্ঠীর ভেতরেও আরবি নামের আধিক্য দেখা যায়, কিন্তু সেকালে এমন কোনো সম্ভাবনা ছিল না। এ থেকে বোঝা যায় যে, ইসমাঈল(আ.) এবং তাঁর পরিবার আরবদের মাঝে ছিলেন এবং তাদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তাঁর সন্তানের আরবি নাম রাখা হয়েছিল।[41] আমরা একটু আগেই আলোচনা করেছি যে, বাইবেল অনুযায়ী আরবদের আবাসভূমি কোন অঞ্চলটি।
ইহুদিদের মিদরাস (Midrash) Pirkei DeRabbi Eliezer এর ৩০ নং অধ্যায়ে ইসমাঈল(আ.) এর মরুভূমিতে বসবাসের বিস্তারিত বিবরণ আছে। ইসমাঈল(আ.) এর ২ জন স্ত্রীর নাম সেখানে পাওয়া যায়—আয়িশাহ ও ফাতিমাহ।[42] নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর একজন স্ত্রী ও কন্যার নামের সাথে হুবহু মিল। এই মিলের কথা যদি কাকতালীয়ও ধরে নিই, তারপরেও লক্ষণীয় যে, ‘আয়িশাহ’ ও ‘ফাতিমাহ’এই দুইটি নামই বিশুদ্ধ আরবি নাম। আয়িশাহ (عائشة) অর্থ প্রাণময়/জীবন্ত (alive) এবং ফাতিমাহ ( ( فاطمة অর্থ ‘বিরত থাকা’ (to abstain)।[43] ইসমাঈল(আ.) এর স্ত্রীদের আরবি নাম সহীহ বুখারীর হাদিসের তথ্যকেই সমর্থন করছে যে, ইসমাঈল(আ.) আরবভূমিতে ছিলেন, আরবদের সাথে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে, বাইবেল অনুযায়ী আরবভূমি ছিল মক্কা-মদীনা।
আরেকজন প্রসিদ্ধ ইহুদি পণ্ডিত আব্রাহাম ইবন এজরা (Abraham Ibn Ezra) তার তাওরাতের ব্যাখ্যায় আদিপুস্তক (Genesis) গ্রন্থে হাযেরা(আ.) যে কূপের নিকট ছিলেন, তাকে জিমুম (অন্যান্য ভার্সনে জিমজুম) বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সেই কূপটি সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন যেঃ এখানে প্রতিবছর ইসমায়েলীয়রা [ইসমাঈল(আ.) এর বংশধর] কোনো একটি পর্ব উদযাপন করে।[44] এখানে এটি সুস্পষ্ট যে, তিনি যমযম কূপ ও হজের কথা উল্লেখ করেছেন।
Strong’s Bible Dictionaryতেও স্বীকার করা হয়েছে যে, পারান হচ্ছে আরবের একটি মরুভূমি।[45]
সামেরি(শমরীয়/Samaritan) ধর্মাবলম্বীদের The Asatir – The Samaritan Book of The “Secret of Moses” পুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
“And after the death of Abraham, Ishmael reigned twenty seven years. And all the children of Nebaot(son of Ishmael) ruled for one year in the lifetime of Ishmael,And for thirty years after his death from the river of Egypt to the river Euphrates; and they built Mecca.” [46]
অর্থাৎ ইসমাঈল(আ.) এর বংশধরেরা মক্কা নগরী নির্মাণ করেছে।
ওই বইতেই প্রখ্যাত ইহুদি ঐতিহাসিক Josephus(৩৭ খ্রি.-১০০ খ্রি.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে:
Josephus I. 12. 3. 221: "These inhabited all the countries from Euphrates to the Red Sea, and called it Nabatene." Gen. 25. 18. Pal.Targ.: "And they dwelled from Hindikia (Indian Ocean) to Palusa (Pelusiumt which is before Egypt as thou goest to Atur (Assyria). In Kebra Ch. 83: many countries are enumerated over which Ishmael ruled. "Built Mecca."
প্রখ্যাত গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমির (১০০ খ্রি.-১৭০খ্রি.) উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে,
Already known to Ptolemy as Makoraba. Pitron has preserved the original reading באכה (ibid) Which they read Baka and took it to meana local name. Hence מכה (Maka/Makkah)into which it was afterwards changed.[47]
অর্থাৎ Josephus এর মতে ইসমায়েলীয়রা মক্কা নির্মাণ করেছিল। টলেমির কাছে নগরটি ‘মাকোরাবা’ নামে পরিচিত ছিল। এই নগরীর একটি স্থানীয় নাম ছিল ‘বাকা’(বাক্কা)।
এতক্ষণ অমুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কিংবা ধর্মীয় বইয়ের তথ্যের আলোকে আলোচনা করলাম। এবার সেকুলার সূত্র থেকে আলোচনা করব। সমসাময়িককালের ইতিহাস-বিষয়ক শ্রেষ্ঠ বইয়ের মধ্যে Will Durant এর The Story of Civilization অন্যতম। ৪২ খণ্ডের এ বইতে লেখক পৃথিবীর প্রায় সবগুলো সভ্যতার ব্যাপারেই আলোচনা করেছেন। আরব উপদ্বীপে গড়ে ওঠা সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন:
“It (the Ka‘bah) was built the fourth time by Abraham and Ishmael, his son from Hagar.” [48]
অর্থাৎ কা’বার নির্মাতা হচ্ছেন ইব্রাহিম(আ.) ও তাঁর ছেলে ইসমাঈল(আ.)।
যেসব মানুষ বলতে চান ইব্রাহিম(আ.) মক্কায় এসেছেন কিংবা কা’বা নির্মাণ করেছেন বলে কোনো ঐতিহাসিক উল্লেখ নেই, এটা তাদের গালে চপেটাঘাতস্বরূপ।
বিশ্বাসী মুসলিমদের জন্য কুরআন ও হাদিসের তথ্যই যথেষ্ট। অমুসলিম সূত্রগুলো থেকে এইসব তথ্য তাদের জন্য পরিবেশন করা হলো, যাদের অন্তর বিভ্রান্তিকর সন্দেহে আচ্ছন্ন।
ইসমাঈল(আ.) ও তাঁর সন্তানাদি আরবের মক্কায় বাস করতেন—এর দ্বারা এটি প্রমাণ হয় যে ইব্রাহিম (আ.) অবশ্যই মক্কায় এসেছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রী হাযেরা (আ.) (Hagar) ও সন্তান ইসমাঈল (আ.) কে মক্কায় রেখে এসেছিলেন। এবং কা’বার নির্মাতা তিনিই। খ্রিষ্টান মিশনারি ও নাস্তিক-মুক্তমনাদের দাবি মিথ্যা।
ইব্রাহিম (আ.) কী করে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মক্কায় আসবেন? :
ইসলামবিরোধীরা আরো একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে যে – ইব্রাহিম (আ.) বাস করতেন ফিলিস্তিনে। সেই যুগে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কী করে তিনি মক্কায় আসতে পারেন? বিশেষত তাঁর স্ত্রী হাযেরা (আ.) ও শিশু ইসমাঈল (আ.)কে নিয়ে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মক্কায় আসা কি আদৌ সম্ভব ছিল? উত্তরে আমরা বলব, যে সত্তা অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহিম (আ.)কে রক্ষা করতে পারেন, [49] সেই সত্তার পক্ষে তাঁর নবীকে ফিলিস্তিন থেকে মক্কায় যাতায়াত করানো কি আদৌ কঠিন কাজ? বাইবেলেও তো স্বপরিবারে ইব্রাহিম (আ.) এর এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাবার বিবরণ আছে, হারান থেকে কানান এবং মিসর পর্যন্ত বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করার বিবরণ আছে।[50] ইব্রাহিম (আ.) কী করে মক্কায় যাতায়াত করতেন, তার বিবরণ আমাদের নিকট রয়েছে। ইবন ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, ইব্রাহিম (আ.) বুরাকে করে প্রতি বছর মক্কায় হজ করতেন।[51] ইব্রাহিম (আ.) এর বংশধর শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)ও বুরাকে করেই মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের বাইতুল মুকাদ্দাসে গিয়েছিলেন। বুরাক এক প্রকারের অলৌকিক দ্রুতগতিসম্পন্ন জীব যাতে আরোহন করে অল্প সময়ে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করা যায়।[52]
কা’বা যদি প্রাচীনতম আল্লাহর ঘর হয়, পূর্বের নবীরা কি এখানে এসেছেন? :
অনেককেই প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়, কা’বায় পূর্বেকার নবীগণ ইবাদতের জন্য আসতেন কিনা। এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর আমরা হাদিসেই পেয়ে যাই। নির্ভরযোগ্য সনদের হাদিস দ্বারা এটি প্রমাণিত যে, অন্তত ৭০ জন নবী মসজিদুল হারামে হজ করেছেন।
قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم : ( لقد مر بِالرَّوْحَاءِ سَبْعُونَ نَبيا فيهم نَبِي الله مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَام ، حُفَاة عَلَيْهِم العباء ، يؤمُّونَ بَيت الله الْعَتِيق
অর্থঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, ৭০ জন নবী রাওহা (মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী অঞ্চল) অতিক্রম করেছেন। তাঁদের মধ্যে মুসা(আ.) আছেন। তিনি খালি পায়ে ও আবায়া পরে আল্লাহর প্রাচীন ঘরের (কা’বা) দিকে গমন করেছেন।” [53]
আল মুনজিরী(র.) এর মতে এই হাদিসের সনদে কোনো প্রকার ত্রুটি নেই।
মুসা(আ.) এর হজের বিবরণ দিয়ে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.) এর কিতাবুয যুহদ কিতাবের হাদিসে বলা হয়েছে: “[হজের সময়] তাঁর গায়ে ছিল ২টি কাতাওয়ানি বস্ত্র। তিনি লাব্বাইক [আমি হাজির] বললে পাহাড়সমূহ থেকে তার প্রতিধ্বনি আসত।” [54]
৭০ জন নবী বাইতুল্লাহর [মসজিদুল হারাম] হজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১ জন হলেন মুসা বিন ইমরান(আ.)। তাঁর গায়ে ছিল ২টি কাতাওয়ানী বস্ত্র। আরেকজন হলেন ইউনুস(আ.)। [হজের সময়] তিনি বলেছিলেন, لبيك كاشف الكرب لبيك “আমি হাজির হে দুর্দশা দূরকারী [আল্লাহ], আমি হাজির।” [55]
ইবন ইসহাক বর্ণনা করেছেন, নবী ইব্রাহিম(আ.) প্রতিবছর বুরাকে করে হজ করতেন। এ ছাড়া আরও বিবরণ রয়েছে যে, সালিহ(আ.) ও হুদ(আ.) ব্যতীত সকল নবী কা’বা গৃহে হজ করেছেন। [56]
২য় আগমনের পর নবী ঈসা মাসিহ(আ.) কা’বায় হজ পালন করবেন।
হানযালা আসলামী বলেন, আমি আবূ হুরায়রা(রা.) কে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, অবশ্যই মারইয়ামের পুত্র [ঈসা(আ.)] ফাজ্জুর-রাওহাতে [মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী অঞ্চল] তালবিয়া পাঠ করবেন। হজ অথবা উমরার কিংবা উভয়টার জন্য।" [57]
এই প্রাচীন গৃহ প্রাচীনকাল থেকেই ছিল নবী-রাসুলদের তীর্থভূমি, আজও শেষ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর উম্মতের দ্বারা সেটি এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর উপাসনালয়। আর এর নির্মাতা ছিলেন একত্ববাদের মহানায়ক—আল্লাহর বন্ধু ইব্রাহিম(আ.) এবং তাঁর পুত্র ইসমাঈল(আ.)।
“আর স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম বলল, ‘হে আমার প্রভু, আপনি একে [মক্কা] নিরাপদ নগরী বানান এবং এর অধিবাসীদের ফলমূলের রিজিক দিন—যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনে’।
তিনি [আল্লাহ] বললেন, ‘যে কুফরী করবে, তাকে আমি স্বল্প ভোগোপকরণ দেবো। অতঃপর তাকে আগুনের আযাবে প্রবেশ করতে বাধ্য করব। আর তা কত মন্দ পরিণতি’।
আর স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম ও ইসমাঈল কা’বার ভিতগুলো ওঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) ‘হে আমাদের প্রভু, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। হে আমাদের প্রভু, আমাদের আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের প্রভু, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে আর তাদের পবিত্র করবে। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।
আর যে নিজেকে নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া কে ইব্রাহিমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? আর অবশ্যই আমি তাকে দুনিয়াতে বেছে নিয়েছি এবং নিশ্চয়ই সে আখিরাতে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।” [58]
“যে আল্লাহর নির্দেশের সামনে মস্তক অবনত করে সৎকাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহিমের ধর্ম অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন—তার চাইতে উত্তম আর ধর্ম কার? আল্লাহ ইব্রাহিমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।” [58.5]
“তুমি বলোঃ নিঃসন্দেহে আমার প্রভু আমাকে সঠিক ও নির্ভুল পথে পরিচালিত করেছেন। ওটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন এবং ইব্রাহিমের আদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ। আর সে অংশীবাদীদের [বহু ঈশ্বরবাদী] অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
বলোঃ আমার সলাত (নামাজ), আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।” [59]
তথ্যসূত্রঃ
[1]. ■ আর রাহিকুল মাখতুম –শফিউর রহমান মুবারকপুরী (র.), (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) পৃষ্ঠা ৬২
■ সীরাতুন নবী(সা.) –ইবন হিশাম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৯
[2]. বাইবেল, যাত্রাপুস্তক (Exodus) ৩ : ১৫
[3]. তানাখ (ইহুদি বাইবেল) /পুরাতন নিয়ম (খ্রিষ্টান বাইবেল), গীতসংহিতা (Psalms/সামসঙ্গীত) ৮৪ : ৪-৬
আর Septuagint (গ্রিক Old testament) ভার্সনে এটি এভাবে আছে :
“Blessed are they that dwell in thy house: they will praise thee evermore. Pause. Blessed is the man whose help is of thee, O Lord; in his heart he has purposed to go up the valley of weeping (Baka), to the place which he has appointed, for there the law-giver will grant blessings.” (Psalms 83/84 : 4-6)
Law-giver : আইনপ্রণেতা। নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর ভূমি মক্কা এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় কুরআনের আইন নিয়ে এসেছেন।
King James Bible এ Psalms 84 : 6--- Who passing through the valley of Baca make it a well; the rain also filleth the pools.
ইহুদিদের Tanakhএ এভাবে আছে : “They pass through the Valley of Baca, regarding it as a place of springs, as if the early rain had covered it with blessing.”
[4]. আল কুরআন, আলি ইমরান, ৩ : ৯৬-৯৭
[5]. “Albert Barnes' Notes on the Whole Bible”, commentary on Psalms 84 : 6
[6]. যেমনঃ New Living Translation, American Standard Version, Aramaic Bible in Plain English, English Revised Version, World English Bible, Young's Literal Translation এবং আরো অনেক ভার্সন।
এখান থেকে দেখা যেতে পারেঃ http://biblehub.com/psalms/84-6.htm
[7]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ২১ : ১৬-১৯ দ্রষ্টব্য
[8]. বাইবেল, আদিপুস্তক(Genesis) ২২:১৪, ৩২:৩০, দ্রষ্টব্য
[9]. সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩১২৫ দ্রষ্টব্য
[10]. “BACA, THE VALLEY OF – Jewish Encyclopedia”, Vol. 2, Page 415
http://www.jewishencyclopedia.com/articles/2290-baca-the-valley-of
[11]. Commentary on Psalms 84 : 6; “Ellicott's Commentary for English Readers” And "Barnes' Notes"
[12]. The new encyclopædia (Universal dictionary of arts and sciences), page 352
[13]. তানাখ (ইহুদি বাইবেল)/পুরাতন নিয়ম (খ্রিষ্টান বাইবেল), গীতসংহিতা (Psalms/সামসঙ্গীত) ৮৪ : ৩
[14]. সীরাতুন নবী(সা.) - ইবন হিশাম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৬
[15]. তানাখ (ইহুদি বাইবেল)/পুরাতন নিয়ম (খ্রিষ্টান বাইবেল), গীতসংহিতা (Psalms/সামসঙ্গীত) ৮৪ : ৮-১০
Septuagint ভার্সনে এটি এভাবে আছে :
“For one day in thy courts is better than thousands. I would rather be an abject in the house of God, than dwell in the tents of sinners.” (Psalms 83/84:10)
[16]. মুসনাদ আহমাদ; ইবন মাজাহ ১৪০৬, সহীহ
[17]. Nehama C. Nahmoud (January 1, 1998). "When We Were Kings; The Jews of Yemen, Part II"
[18]. ■ সীরাতুন নবী(সা.)-ইবন হিশাম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪-৫৭
■ বর্তমানে কোন ইহুদি কি এমন বিশ্বাস রাখে যে মুসা(আ.) কা’বায় হজের জন্য এসেছিলেন? -
ইহুদি পণ্ডিত Dennis Avi Lipkin তার ‘Return to Mecca: Let My People Go so That They May Circle Me in the Desert’ বইতে বাইবেলের আলোকে প্রমাণ করেছেন যে, কা'বায় খোদ মুসা(আ.)পর্যন্ত হজ করেছিলেন; কাজেই মক্কা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কাছেও পবিত্র বলে বিবেচিত হওয়া উচিত! এ প্রসঙ্গে তার আলোচনা এখান থেকে দেখা যেতে পারে--
“The Bible proves Prophet MOSES did pilgrimage to MECCA - INTERESTING Insight by a JEWISH writer!”
[19]. Marshall G. S. Hodgson, The Venture of Islam: Conscience and History in a World Civilization (Vol. 1), University of Chicago Press, p.156
[20]. সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩১২৫
[21]. তানাখ (ইহুদি বাইবেল) / পুরাতন নিয়ম (খ্রিষ্টান বাইবেল), আদিপুস্তক (Genesis) ২১ : ২১ দ্রষ্টব্য
[22]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ৩৭ :২৫
[23]. “Easton's Bible Dictionary”
[24]■ "Ellicott's Commentary for English Readers"
http://biblehub.com/commentaries/ellicott/genesis/37.htm
■ "Gill's Exposition"
http://biblehub.com/commentaries/gill/genesis/37.htm
[25]. ‘আর রাহিকুল মাখতুম’ --শফিউর রহমান মুবারকপুরী (র.) [তাওহীদ পাবলিকেশন্স], পৃষ্ঠা ৭৪ দ্রষ্টব্য
[26]. বাইবেল, যিহিষ্কেল (Ezekiel/হিজকিল) ২৭ : ২১
[27]. বাইবেল, গণনাপুস্তক (Numbers) ১০ : ১২
[28]. বাইবেল, গালাতীয় (Galatians) ৪ : ২৫
[29]. সাধারণ অর্থে বাইবেলের ১ম ৫টি বই বা Pentateuchকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা মুসা(আ.) এর তাওরাত (Torah of Moses) বলে বিশ্বাস করে।
[30]. “Saadia Gaon” (Jewish Virtual Library)
http://www.jewishvirtuallibrary.org/saadia-gaon
[31]. ■“Joktan-s Descendants” (Bible Origins)
http://www.bibleorigins.net/JoktanDescendants.html
■ “Joktan, Biblical figure - Amazing Bible Timeline with World History”
https://amazingbibletimeline.com/blog/biblical-figure-joktan/
[32]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ১০ : ২৯-৩০ দ্রষ্টব্য
[33]. “Torah - Navigating The Bible”
http://bible.ort.org/books/torahd5.asp?action=displayid&id=265
[34]. Rev. W. Paul, Analysis and critical interpretation of the Hebrew text of the Book of Genesis, (Edinburgh: W. Blackwood & Sons, 1852), p. 100
[35]. “Genesis 13_1 Hebrew Text Analysis” (Biblehub)
http://biblehub.com/text/genesis/13-1.htm
[36]. “Hijaz _ Define Hijaz at Dictionary.com”
http://www.dictionary.com/browse/hijaz
[37]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ২৫ : ১৮
[38]“HAVILAH - JewishEncyclopedia.com”
http://www.jewishencyclopedia.com/articles/7343-havilah
[39]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ২৫ : ১৫ দ্রষ্টব্য
[40]. “Translation and Meaning of حداد In English, English Arabic Dictionary of terms Page 1”
[41]. এ ব্যাপারে একজন অমুসলিম বিশেষজ্ঞের আলোচনা দেখা যেতে পারে।
ইহুদি র্যাবাই Reuven Firestone ইহুদিদের কিতাব থেকে প্রমাণ করেছেন যে, ইব্রাহিম(আ.) তাঁর পুত্র ইসমাঈল(আ.) কে যে স্থানে রেখে এসেছিলেন তা বর্তমান মক্কা। “Rabbi Reuven Firestone - Mecca and Arabia in the Ancient Biblical World!”
[42]. ■ Pirkei DeRabbi Eliezer chapter 30
https://www.sefaria.org/Pirkei_DeRabbi_Eliezer.30?lang=bi
■ “Jewish Encyclopedia; article: Ishmael”
http://www.jewishencyclopedia.com/articles/8251-ishmael
[43]. ■ “Name meaning عائشة” (Cute Baby names)
■ “Translation and Meaning of فاطمة In English, English Arabic Dictionary of terms Page 1” (almaany)
[44]. ■“Ibn Ezra on Genesis 16_14_1 with Connections” (Sefaria)
https://www.sefaria.org/Ibn_Ezra_on_Genesis.16.14.1?lang=bi&with=all&lang2=en
■ “مدونةالجزيرةالعربية _ (ibn Ezra, SaadiaGaon) Saadia Translates _Shur_ Hijaz Paran Arabia”
■ “ZAMZAM - JewishEncyclopedia.com”
http://www.jewishencyclopedia.com/articles/15161-zamzam
[45]. ‘Paran’–Strong’s
http://biblehub.com/strongs/hebrew/6290.htm
[46]. The Asatir – The Samaritan Book of The “Secret of Moses by Dr. Moses Gaster; page 262
[47]. প্রাগুক্ত
[48]. ‘ قصة الحضارة ’, 13/18 (The Story of Civilization) by Will Durant
[49]. আল কুরআন, আম্বিয়া ২১ : ৫১-৭১ দ্রষ্টব্য
[50]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis/পয়দায়েশ) ১২ নং অধ্যায় দ্রষ্টব্য
[51]. ‘আখবারুল মাক্কাহ’ – আযরাকী, পৃষ্ঠা ১২০, রেওয়ায়েত নং ৭৯, সনদ হাসান
[52] “ ...রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেনঃ আমার জন্য বুরাক পাঠানো হলো । বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদূর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততদূর চলে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বাইতুল মাকদিস পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। তারপর অন্যান্য নবীগণ তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকাত সলাত আদায় করে বের হলাম। ... ”
[সহীহ মুসলিম, খণ্ড ১, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়, হাদিস ৩০৯]
[53]. আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/১১৮
[54]. কিতাবুয যুহদ (‘রাসুলের চোখে দুনিয়া’ শিরোনামে বাংলায় অনূদিত) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.), হাদিস নং : ৩১৩
[55]. কিতাবুয যুহদ (‘রাসুলের চোখে দুনিয়া’ শিরোনামে বাংলায় অনূদিত) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.), হাদিস নং : ২৯৩
[56]. “Is it proven that all the Prophets (peace be upon them) performed Hajj to the Ka‘bah?” –islamQA(Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/200581
[57]. সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩০৩০
[58]. আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১২৬-১৩০
[58.5]. আল কুরআন, নিসা ৪ : ১২৫
[59]. আল কুরআন, আন’আম ৬ : ১৬১-১৬২