Pray for the world economy

জিন কোথায় থাকে?

স্ববিরোধিতার অভিযোগঃ জিন থাকে কোথায়? – পৃথিবীতে (Quran 55:33) নাকি আকাশে (Quran 37:6-7) !

 

জবাবঃ সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো নিচে উল্লেখ করা হল।

 

 “হে জিন ও মানবকূল, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।” [1]

 

 “ নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি। এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ” [2]

 

সুরা আর রহমান ৫৫:৩৩ আয়াতে এ কথা বলা উদ্যেশ্য যে, প্রতিদান দিবসের (শেষ বিচারের দিন) উপস্থিতি এবং হিসাব নিকাশ থেকে কেউ পলায়ন করতে পারবে না। মৃত্যুর কবল থেকে অথবা কিয়ামতের হিসাব থেকে গা বাঁচিয়ে পালাবার সাধ্য কারো নেই। ...এখানে আসমান ও জমিন (বা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল) অর্থ গোটা সৃষ্টিজগত অন্য কথায় আল্লাহর প্রভুত্ব। আয়াতে আকাশ ও পৃথিবীর প্রান্ত অতিক্রম করার সম্ভাব্যতা বর্ণনা উদ্যেশ্য নয়। বরং অসম্ভবকে সম্ভব ধরে নেয়ার পর্যায়ে তাদের অক্ষমতা ব্যক্ত করা উদ্যেশ্য। [3]

 

এ ছাড়াও লক্ষ্যণীয় যে, আর রহমান ৫৫:৩৩ আয়াতের পর পরই ৩৫নং আয়াতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও ধুম্রকুঞ্জ প্রেরণের কথা বলা আছে যা স্পষ্টতই শেষ বিচারের দিনের চিত্র। সুতরাং সুরা আর রহমান ৫৫:৩৩ আয়াতে জিনেরা কোথায় বাস করে তা বলা উদ্যেশ্য নয় বরং সেখানে শেষ বিচারের দিনের কথা বলা হয়েছে। আয়াতটি ভুল প্রেক্ষাপট থেকে উদ্ধৃত করে অভিযোগকারীরা কুরআনের স্ববিরোধিতা খোঁজার (ব্যর্থ)চেষ্টা করেছেন।

 

সুরা আস সফফাত ৩৭:৬-৭ আয়াতে আকাশমণ্ডলকে শয়তান(যা এক প্রকার জিন) থেকে সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে আকাশে জিনদের উপস্থিতি আছে।

জিনদের প্রকৃতি সম্পর্কে কুরআনে আরো উল্লেখ আছে—

 

 “ সুলাইমান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্মসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে তার{সাবার রাণী} সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?

জনৈক শক্তিশালী-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং নিশ্চয়ই আমি এ কাজে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।

কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। ...” [4]

 

অর্থাৎ জিনেরা মানুষের মত কোন প্রাণী নয়। এরা এমন এক প্রকারের প্রাণী মুহূর্তের মধ্যেই যাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষমতা আছে। কিংবা হয়তো এরা মানুষের থেকে ভিন্ন কোন মাত্রা(dimension) এর প্রাণী। আল্লাহ ভালো জানেন।

 

জিন কোথায় থাকে, সে প্রসঙ্গে আমরা একটি হাদিস উদ্ধৃত করতে পারি।

 

রাসুলুল্লাহ() বলেছেন, “জিন ৩ প্রকার। এক প্রকারের পাখা আছে যা দিয়ে বাতাসে উড়তে পারে, এক প্রকার দেখতে সাপ ও কুকুরের মত এবং আরেক প্রকার যারা বিশ্রামের জন্য থামে এবং আবার যাত্রা শুরু করে।” [5]

 

এ হাদিস থেকে এটি পরিষ্কার যে জিন বিভিন্ন প্রকারের এবং তারা আকাশের পাশাপাশি পৃথিবীতেও থাকে।

সুরা আস সফফাত ৩৭:৬-৭ এ আকাশে জিনদের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে এবং উপরে উল্লেখিত সুরা নামল ২৭:৩৮-৪০এ নবী সুলাইমান(আ) এর বাহিনীর জিনদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিন মানুষের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির জীব এবং আকাশ, পৃথিবী – উভয় স্থানেই জিনদের বিচরণ রয়েছে।

 

কাজেই কুরআনে উল্লেখিত তথ্যে কোন প্রকারের বৈপরিত্য নেই।

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]  আল কুরআন, আর রহমান ৫৫:৩৩

[2]  আল কুরআন, আস সফফাত ৩৭:৬-৭

[3]  কুরতুবী, ফাতহুল কাদির, ইবন কাসির;

সূত্রঃ কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ২য় খণ্ড, ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, সুরা আর রহমানের ৩৩নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫৩৩

[4]  আল কুরআন, নামল ২৭:৩৮-৪০

[5]  মুশকিল আল আছার ৪/৯৫ ইমাম ত্বহাবী, আল কাবির ২২/২১৪ তাবারানী, সনদ সহীহ

“The world of the Jinn” [islamQA - Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid]

https://islamqa.info/en/2340