Pray for the world economy

নবী(ﷺ) কি কুরআনের বিধান অমান্য করে নিষিদ্ধ হবার পরেও পুনরায় বিবাহ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)?

 

অভিযোগঃ

নাস্তিকদের একটি ব্লগে দাবি করা হয়েছে সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নবী মুহাম্মাদ()কে পুনরায় বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু তিনি নাকি আল্লাহর আদেশ অমান্য করে (নাউযুবিল্লাহ) এরপরেও সাফিয়া(রা.)কে বিয়ে করেছেন। জনৈক নাস্তিক ব্লগারের ভাষ্যমতেঃ

 

… … সুরা আহযাবের ৩৩: ৫২ আয়াতে আল্লাহপাক আমাদের প্রিয় নবীজিকে বিয়ে করতে নিষেধ করে দিচ্ছেন। বলছেন, আর কোন নারী উনার জন্য হালাল নয়, এমনকি বর্তমান স্ত্রীদের কাউকে বাতিল করে সেই জায়গায় নতুন কাউকে আনাও যাবে না। … …  ৩৩: ৫২ আয়াত পুরোটা তুলে দিচ্ছি, //এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন। কোরান, আল আহযাব-৩৩: ৫২//। এইবার আসুন আসল মজার জায়গাতে। কিভাবে হযরত মুহাম্মদ তার আল্লার নির্দেশ, কুরআনের আদেশকে অমান্য করেছিলেন। সুরা আহযাব নাযিল বা লিখিত হয়েছিল খন্দকের যুদ্ধ পরে।খন্দকের যুদ্ধ ৩১ মার্চ ৬২৭ সাল ও হিজরী ৫ম সালে শুরু হয়েছিল (সূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Battle_of_the_Trench)। এদিকে খয়বরে হামলা চালানো হয়েছিল ৬২৯ সালে। … … সুরা আহযাবের ৫২ নাম্বার আয়াত ৬২৭ সালে নাযিল হচ্ছে যেখানে নবীজিকে পরিস্কার বলা হচ্ছে তিনি আর বিয়ে করতে পারবেন না। কিন্তু খয়বর আক্রমন ৬২৯ সালে হয়েছিল! সাফিয়াকে যদি ইসলামী পন্ডিতদের দাবী অনুযায়ী নবী বিয়ে করে থাকেন তাহলে নবী সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াতকে পরিস্কার অমান্য করেছে! … >>

 

জবাবঃ 

আল কুরআনে সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

 

ا یَحِلُّ لَکَ النِّسَآءُ مِنۡۢ بَعۡدُ وَ لَاۤ اَنۡ تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنۡ اَزۡوَاجٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَکَ حُسۡنُهُنَّ اِلَّا مَا مَلَکَتۡ یَمِیۡنُکَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ رَّقِیۡبًا

অর্থঃ "এরপর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়; যদিও ওদের রূপ-সৌন্দর্য তোমাকে মোহিত করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।"

 

প্রথমতঃ

আলোচ্য আয়াত নাজিলের পরে নবী() আর বিবাহ করেননি বলে তাফসির গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ আছে। [1] কাজেই এই আয়াত নাজিলের পর পরে নবী() সাফিয়া(রা.) বা অন্য কাউকে বিয়ে করেছেন বলে নাস্তিকদের এই দাবি ডাহা মিথ্যা।

 

দ্বিতীয়তঃ

‘আহযাব’ যুদ্ধের নামে নামকরণ করা হয়েছে বলেই সুরা আহযাবের সব আয়াত আহযাব (বা খন্দক) এর যুদ্ধের বছরেই অর্থাৎ ৬২৬-৬২৭ সালে নাজিল হয়ে গেছে – এটা একটা মূর্খতামূলক চিন্তা। কুরআন সম্পর্কে একটা বেসিক জ্ঞান হচ্ছে – এর আয়াতগুলো ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে নাজিল হয়েছে। এক সুরার বিভিন্ন আয়াত বিভিন্ন সময়ে নাজিল হয়েছে। [2] এইটুকু বেসিক জ্ঞান না রেখেই এরা ইসলামের সমালোচনা করতে নেমে গেছে। অথবা হতে পারে তারা বিষয়টা জানে, কিন্তু জেনেশুনেই মুসলিমদের ধোঁকা দিতে নিজ ব্লগে এইসব লিখেছে।

 

সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াত কখন নাজিল  হয় ৯ম হিজরীতে বা ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে। [3] আর খায়বারের যুদ্ধ হয় ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে, [4] এই যুদ্ধের পরেই সাফিয়া(রা.) এর সঙ্গে পরে নবী() এর বিবাহ হয়। [5] কাজেই আমরা সাল-তারিখ সহ আরো নির্দিষ্ট করে দেখলাম সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াত নাজিল হবার নবী() সাফিয়া(রা.) কে বিবাহ করেননি বরং এই বিবাহ হয়েছিল আয়াত নাজিলের আগে। যদিও তিনি বিয়ে করলেও তা কুরআনের অবাধ্যতা হতো না, কেননা নবী()কে পরবর্তীতে এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। [6] কিন্তু তিনি এরপরে আর বিবাহ করেননি।

 

অতএব বরাবের মতোই নবী() এর বিরুদ্ধে নাস্তিকদের এই অভিযোগটিও মিথ্যা প্রমাণিত হল। আমরা আল্লাহর নিকট এইসব বিদ্বেষী নাস্তিকের হেদায়েত কামনা করছি এবং মুসলিম ভাই-বোনদেরকে এদের মিথ্যাচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1] ' তাফসির ইবন কাসির ‘ ৯ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা আযহাবের ৫২ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ১৩৯

[2] দেখুনঃ ‘উলুমুল কুরআন’– মুফতি তাকি উসমানী, পৃষ্ঠা ৭২-৮০

[3] তাবাকাত’ – ইবন সা’দ  ৮/১১৫; ‘ফাতহুল বারী’ – ইবন হাজার আসকালানী ৭/৪৩৮

  “ … Ibn ‘Abbas is reported to have noted that Qur’an 33:52 was revealed after the Wives of the Prophet () chose his company over worldly comforts which is known to have happened in the year 9/630.”

[Ibn Sa‘d, al-Tabaqat a-Kabir, Vol.8, 115; on dating of the Verse of Choice (ayat al-takhyir) see; al-‘Asqalani, Ibn Hajar, Fath al-Bari, (Beirut: Dar al-Ma’rifah, 1367 AH) Vol.7, 438;Vol.9, 286]

 “Suleman b. Yasar (d. 110/728) a client of the Prophet’s () wife Maimuna who was also a student of ‘Aisha and Umm Salama reports that verse 50-52 of surah al-Ahzab were revealed after the Prophet’s () marriage with Asma’ al-Jawniyya which, it is known, happened in Rabi-I, 9/June-July 630.”

[Ibn Sa‘d, al-Tabaqat a-Kabir, Vol.8, 159; for the dating of marriage with Asma’, see; Ibid., Vol.8, 115]

https://www.icraa.org/muhammad-marriages-privileges-chronology-study/

অথবা https://archive.is/wip/swZHq (আর্কাইভকৃত)

[4] "... the Muslims are given permission to make the pilgrimage to Mecca in 629. Two months later Muhammad leads his forces against the Jewish oasis of Khaybar, north of Medina."

https://www.britannica.com/biography/Muhammad/Biography-according-to-the-Islamic-tradition#ref1248221

অথবা https://archive.is/3BPLj (আর্কাইভকৃত)

[5]রাহিকুল মাখতুম’ – শফিউর রহমান মুবারকপুরী

https://www.hadithbd.com/books/detail/?pageNum_bookData=2&totalRows_bookData=28&book=43&section=523

[6] দেখুনঃ ‘তাফসির আহসানুল বায়ান’, সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াতের তাফসির

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=3585

আরো দেখুনঃ ‘তাফসির ফাতহুল মাজিদ’, সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াতের তাফসির

https://quran.com/33:52/tafsirs/tafisr-fathul-majid-bn