খ্রিষ্টানদের বাইবেলে যিশু খ্রিষ্টকে ঈশ্বরের বাক্য (Word of God) বলা হয়েছে। [1] খ্রিষ্টানরা এ থেকে যিশুকে ঈশ্বর প্রমাণ করার চেষ্টা করে। আল কুরআনে বিভিন্ন স্থানে ঈসা(আ.) এর আলোচনার সময়ে ‘আল্লাহর কালিমা’র কথা উল্লেখ আছে। খ্রিষ্টান প্রচারকরা সেই আয়াতগুলো যুক্তি দেবার চেষ্টা করে যে, ঈসা(আ) যদি আল্লাহর কালিমা হয়ে থাকেন, এর দ্বারা প্রমাণ হয় তিনিই আল্লাহ (নাউযুবিল্লাহ)। কেননা আল্লাহর কালিমা বা আল্লাহর বাণী তো সৃষ্ট বস্তু হতে পারে না।
কুরআনে ঈসা(আ.) এর ব্যাপারে যে কালিমার (كلمة) কথা বলা হয়েছে এর অর্থ কী? :
আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ
অর্থঃ “যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।” [2]
এই আয়াতে كلمة (কালিমা, বাণী) শব্দের অর্থ আলোচনা করতে গিয়ে আল কুরআনের অন্যতম প্রাচীন ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তাফসির তাবারী’ তে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
“আল্লাহ পাকের বাণী بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ (তাঁর পক্ষ হতে একটি কালিমাঃ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রাসূল প্রেরণ ও তাঁর হতে খবর প্রদান। যেমন বলা হয়, ألقى فلانٌ إليّ كلمةً سَرّني بها ( অমুক তো আমার নিকট একটি বাণী পাঠিয়েছে, এর দ্বারা সে আমায় আনন্দিত করেছে।) অর্থাৎ সে আমাকে এমন একটি সংবাদ দিয়েছে যাতে আমি আনন্দিত হয়েছি। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ (এবং তাঁর বাণী যা তিনি মারইয়ামের নিকট পাঠিয়েছেন। (৪ : ১৭১) অর্থাৎ ঈসা (আ.) সম্পর্কিত আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হযরত মারইয়াম (আ.)-এর নিকট। এটি তিনি মারইয়াম (আ.)-এর নিকট প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আয়াতের ব্যাখ্যা হলোঃ হে মুহাম্মদ! তখন আপনি উক্ত সম্প্রদায়ের নিকট ছিলেন না। যখন ফেরেশতারা মারইয়াম কে বলেছিল হে মারইয়াম। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর পক্ষ হতে আপনাকে একটি সুসংবাদ দিচ্ছেন, তা হচ্ছে আপনার একটি সন্তান তাঁর নাম হলো মাসীহ ঈসা ইবন মারইয়াম (আ.)।
كلمة শব্দের ব্যাখ্যায় একদল তাফসীরকার বলেছেনঃ এটি তাফসীরকার কাতাদা (র.)-এর অভিমত- আলোচ্য আয়াতে كلمة শব্দটির অর্থ হলো كن অর্থাৎ হও।
৭০৬১. কাতাদা (র.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তা’আলার বাণী بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ -এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, এর অর্থ হল كن অর্থাৎ হও। এ শব্দটিকে আল্লাহ তা’আলা কালিমা নামে অভিহিত করেছেন যেহেতু এটি তাঁর কালিমা হতে উদ্ভূত। যেমন আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু নির্ধারণ করলে বলা হয় هذا قدر الله و قضاؤه (এটি আল্লাহর নির্ধারণ ও ফায়সালা) অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারণ ও ফায়সালা হতে উদ্ভূত। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولً (আল্লাহর নির্দেশ কার্যকরী হয়েই থাকে ( সূরা আহযাবঃ ৩৭) এবং এটিই আল্লাহ পাকের আদেশ।” [3]
আয়াতের আরো একটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করে ইমাম তাবারী(র.) বলেছেনঃ
“তাফসীরকারগণের একদলের মতে كلمة শব্দটি হযরত ঈসা (আ.)-এর নাম। আল্লাহ তা’আলা এ নামে ভূষিত করেছেন যেমন তাঁর সমগ্র জগতকে তিনি আপন ইচ্ছানুযায়ী বিভিন্নভাবে নামকরণ করেছেন। হযরত ইব্ন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, الكلمة হচ্ছে ঈসা (আ.)।
৭০৬২. ইব্ন ওয়াকী হকরামা (র.) সূত্রে বর্ণনা করেন, ইবন আব্বাস (রা.) আল্লাহ তাআলার বাণীঃ إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ -এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ঈসা (আ.)-ই আল্লাহ তাআলার কালিমা।” [4]
আমরা দেখলাম এ সম্পর্কে পূর্বযুগের উলামাদের মধ্যে كلمة এর অর্থ সম্পর্কে কয়েকটি অভিমত রয়েছে।
সাহাবী-তাবিঈ ও পূর্বযুগের ইমামগণ কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই তাফসির করতেন। মূলত এখানে সবগুলো অভিমতই কুরআনের আয়াতের আলোকে। যেমন, ১ম অভিমত অনুসারে কালিমা এর অর্থ হচ্ছে ঈসা(আ.) এর সুসংবাদ। আমরা কুরআনের অন্যত্রও ‘সুসংবাদ’ অর্থে এই শব্দের ব্যবহার দেখি। যেমনঃ
وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُوا ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ
অর্থঃ “এবং যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত, তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের উত্তরাধিকারী করলাম এবং বনী-ইস্রাইল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভবাণী সত্যে পরিণত হল; যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের নির্মিত শিল্প এবং যে সব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল, তা ধ্বংস করে দিলাম।” [5]
ইমাম তাবারী(র.) আরবি ভাষার নিয়ম থেকেও এর উদাহরণ দেখিয়েছেন।
২য় অভিমত অনুসারে কালিমার অর্থ হচ্ছে কুন (كن) বা “হও”। কুরআনে থেকেই এই অর্থের প্রমাণ পাওয়া যায়। আলোচ্য আয়াতের মাত্র এক আয়াত পরেই উল্লেখ করা হয়েছেঃ
قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “সে [মারইয়াম] বলল, হে আমার রব! আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি, এমতাবস্থায় আমার সন্তান হবে কিভাবে? তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘এভাবেই’, আল্লাহ যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।” [6]
স্পষ্টত উল্লেখ করা হচ্ছে যে ঈসা(আ.)কে আল্লাহ তা’আলা কুন (كن) বা “হও” এই কালিমা (শব্দ/বাণী) দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। একই সুরায় এর কয়েক আয়াত পরেই বলা হয়েছে আল্লাহ তা’আলা আদম(আ.)কেও “কুন” (হও) এই কালিমার দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করে তার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হও’ ফলে সে হয়ে গেল।” [7]
কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে আল্লাহ তা’আলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এই সব কিছুর উদ্ভাবক, তিনি জীবন ও মৃত্যুদাতা। তিনি যে কোনো কিছুই করবার ইচ্ছা করলে “কুন” (হও) এই কালিমার দ্বারা তা সম্পাদন করেন।
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের উদ্ভাবক। আর যখন তিনি কোন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।” [8]
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।” [9]
هُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ ۖ فَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কিছু করা স্থির করেন তখন তিনি তার জন্য বলেন ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।” [10]
مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٍ ۖ سُبْحَانَهُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, তিনি যখন কোন কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ হও এবং তা হয়ে যায়।” [11]
কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা গেলো যে আল্লাহ তা’আলা সন্তান গ্রহণ করেননি, তিনি ঈসা(আ.)কে সৃষ্টি করেছেন “কুন” (হও) এই কালিমার দ্বারা। যেমনিভাবে তিনি আদম(আ.)কেও “কুন” কালিমার দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তিনি কোনো যে কোনো কিছুই সৃষ্টি করেন “কুন” কালিমার দ্বারা। এভাবে কুরআনের আয়াতের দ্বারাই কাতাদা(র.) কালিমার শব্দের তাফসির করেছেন।
৩য় অভিমত অনুসারে কালিমার অর্থ হচ্ছে ঈসা(আ.)। হাদিসে বলা হয়েছেঃ
حَدَّثَنَا عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَابْنُ أَمَتِهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ وَأَنَّ الْجَنَّةَ حَقٌّ وَأَنَّ النَّارَ حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللَّهُ مِنْ أَىِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ شَاءَ "
অর্থঃ উবাদাহ্ ইবনু সামিত(রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বলে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং মুহাম্মাদ(ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আর নিশ্চয় ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তার বান্দীর (মারইয়ামের) পুত্র ও তার সে কালিমা- যা তিনি মারইয়ামকে পৌছিয়েছেন এবং তার পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি রূহ মাত্র, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তাকে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করাতে চাইবেন, প্রবেশ করাবেন।" [12]
এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে ‘কালিমা’ কথাটি ঈসা(আ.) সম্পর্কিত।
‘কালিমার’ ব্যাপারে সালাফ এবং পূর্বযুগের ইমামগণ যে তাফসির করেছেন আমরা তা দেখলাম। এই তাফসির কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এসেছে। মুসলিমদের নিকট কুরআনের ব্যাখ্যার ব্যাপারে স্বয়ং নবী(ﷺ) সাহাবী এবং প্রাচীন উলামাদের তাফসিরগুলো আছে। মুসলিমরা আল্লাহর কিতাবকে মনগড়াভাবে ব্যাখ্যা করে না। বরং নবী(ﷺ) এবং তাঁর শিষ্যদের ব্যাখ্যাগুলো আজও অনুসরণ করে। কুরআনের শুধু পাঠ না বরং এর ব্যাখ্যা পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। এভাবে দ্বীন ইসলাম বিকৃতির হাত থেকে সংরক্ষিত আছে। খ্রিষ্টান প্রচারকরা অনেক সময় মুসলিমদের সালাফ এবং প্রাচীন উলামাদের ব্যাখ্যার সমালোচনা করে থাকে। তাদের বিষয়টি অনেকটা লেজকাটা শিয়ালের মতো। তাদের নিকট তাদের কিতাবের ব্যাপারে যিশুশিষ্যদের ব্যাখ্যা তো দূরের কথা – যিশুর প্রায় ৩০০ বছরের মধ্যে কিতাবের পাণ্ডুলিপি খুঁজে পাওয়াই দুস্কর। তারা নিজেরা যে পর্যায়ে আছে, মুসলিমদেরকেও সেই পর্যায়ে নামাতে চায়। আজকের মূলধারার খ্রিষ্টবাদের আকিদার ব্যাখ্যা এমনকি কোন কোন কিতাব তাদের বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত হবে – এসব কিছু আনুষ্ঠানিকভাবে রূপলাভ করেছে যিশুর ৩০০ বছরেরও বেশি সময় পরে রোম সাম্রাজ্যে বিভিন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে। যারা নিজ নবীর শত শত বছর পরে বিভিন্ন কাউন্সিলের দ্বারা নিজেদের আকিদা গঠন করেছে, তারা নবী(ﷺ) এর দেড় হাজার বছর পরে কুরআনের মনগড়া বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করবার অপচেষ্টা করবে – এতে অবাক হবার কিছু নেই। তবে সচেতন মানুষমাত্রই এটা বুঝবে যে কুরআনের ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা অধিক গ্রহণযোগ্য – সালাফদের ব্যাখ্যা নাকি দেড় হাজার বছর পরে খ্রিষ্টান মিশনারীদের ব্যাখ্যা।
কালিমার (كلمة) অর্থ দ্বারা কি যিশু ঈশ্বর প্রমাণিত হন? :
উপরে ঈসা(আ.) এর ব্যাপারে ‘কালিমা’র তাফসির আলোচনা করা হয়েছে। সালাফ এবং পূর্বযুগের ইমামদের কেউ এ থেকে এটা বোঝেননি যে ঈসা(আ.) ইলাহ বা আল্লাহর সমতূল্য। এর একটা অর্থও ঈসা(আ.) এর ইলাহ হবার ব্যাপারে কিছু নির্দেশ করে না। উপরন্তু যে কুরআনুল কারিমে ঈসা(আ.) এর ব্যাপারে كَلِمَةٍ مِّنْهُ (তাঁর থেকে এক বাণী) বলা হয়েছে, সেই কুরআনুল কারিমেই স্পষ্টত বলে দেয়া হয়েছে ঈসা(আ.) মোটেও আল্লাহ না বরং তিনি আল্লাহর বান্দা। তিনি তাঁর জাতিকে সব সময়ে আল্লাহর ইবাদত করতে বলতেন। বরং আল্লাহর সাথে অংশী স্থির করা লোকেরা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
( 72 ) لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ۖ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
( 73 ) لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ ثَالِثُ ثَلَاثَةٍ ۘ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۚ وَإِن لَّمْ يَنتَهُوا عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থঃ “তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলেঃ আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে। ” [13]
কুরআনের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার এবং স্পষ্ট। খ্রিষ্টান মিশনারীরা নিজেদের কিতাবের স্পষ্ট বক্তব্য বাদ দিয়ে অস্পষ্ট বক্তব্যগুলোকে গ্রহণ করে যেমন ঈসা(আ.)কে আল্লাহর পর্যায়ে নেবার চেষ্টা করে, কুরআনের ব্যাপারেও তারা একই নীতি অবলম্বন করে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। আমরা তাদের উদ্যেশ্যে বলবোঃ কুরআন থেকে যিশুকে ঈশ্বর বানাতে চান?! পারলে সুরা মায়িদাহর ৭২ ও ৭৩ নং আয়াত থেকে বানানোর চেষ্টা করুন। শুভকামনা!
‘কালিমা’ শব্দের ব্যাপারে ১ম ২টি তাফসির হচ্ছেঃ এর অর্থ ঈসা(আ.) সম্পর্কিত সুসংবাদ এবং ‘কুন’ (হও)। এই ২টি অর্থ থেকে অপব্যাখ্যা ঈসা(আ.)কে আল্লাহর সমতূল্য বানানো সম্ভব না। ৩য় তাফসির অনুসারে ‘কালিমা’ হচ্ছেন ঈসা(আ.)। এই তাফসিরটি থেকে অপব্যাখ্যা করে ঈসা(আ.)কে আল্লাহর সমতূল্য বানানোর চেষ্টা করা যায়। খ্রিষ্টীয় প্রচারকরা এটাই করে। তারা দাবি করেঃ আল্লাহর কালিমা বা বাণী তো আল্লাহ তা’আলার সিফাত বা গুণ। তা অসৃষ্ট এবং চিরন্তন। আর আল্লাহ তা’আলার সিফাত তাঁর থেকে আলাদা নয়। কাজেই এ থেকে প্রমাণ হয় ঈসা(আ) আল্লাহর সমতূল্য (নাউযুবিল্লাহ)।
তাদের এহেন যুক্তির জবাবে যা বলবোঃ আল কুরআনে স্পষ্টত উল্লেখ করা হয়েছে ঈসা(আ.) হচ্ছেন সৃষ্ট। সুরা আলি ইমরানে ঈসা(আ.) সংক্রান্ত ঘটনার শেষাংশে আল্লাহ তা’আলা এ বিষয়ে আকিদা পরিষ্কার করে দিয়ে বলেছেন,
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করে তার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হও’ ফলে সে হয়ে গেল।” [14]
আয়াতে দেখা যাচ্ছে আদম(আ.)কেও আল্লাহ তা’আলা ‘কুন’ বা ‘হও’ বলে সৃষ্টি করেছেন। ঈসা(আ.) এর ক্ষেত্রেও তাই। কেউ যদি এরপরেও দাবি করতে চায় ঈসা(আ.) অসৃষ্ট – তাহলে এই অপযুক্তি দ্বারা আদম(আ.)ও অসৃষ্ট প্রমাণিত হবেন! অথচ বাস্তব মোটেও তা নয়। ঈসা(আ.) এবং আদম(আ.) উভয়ই সৃষ্ট এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট উভয়ের দৃষ্টান্ত অনুরূপ। হাওয়া(আ.)কে আল্লাহ তা’আলা আদম(আ.) এর মাধ্যমে এবং অন্য সব মানুষকে আল্লাহ তা’আলা তাদের পিতামাতার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। আদম(আ.) এর পিতা-মাতা কেউ ছিলো না, ঈসা(আ.) এর পিতা ছিলো না। তাঁদের উভয়কেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর কালিমা ‘কুন’ এর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এখানেই তাঁদের সাদৃশ্য। বিষয়টি এমন জটিল কিছুই নয়। কিন্তু যাদের অন্তরে ব্যধি আছে, তারা দুই-একটি শব্দ লুফে নিয়ে তা অপব্যাখ্যা করে নিজ বিকৃত আকিদার পক্ষে যুক্তি দেবার অপচেষ্টা করে।
পিতা-মাতা ছাড়া আদম(আ.) সৃষ্টি হয়েছিলেন আল্লাহ কর্তৃক রূহ ফুঁকে দেবার দ্বারা।
71 ) إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ
( 72 ) فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
অর্থঃ “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যেয়ো।” [15]
পিতা ব্যতিত সৃষ্ট ঈসা(আ.) এর ব্যাপারেও আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
وَرُوحٌ مِّنْهُ ۖ
অর্থঃ “...এবং রূহ-তাঁরই (আল্লাহ) কাছ থেকে আগত। ...” [16]
এ থেকে আদম(আ.) এবং ঈসা(আ.) এর সাদৃশ্যের বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে। কেউ যদি বিচ্ছিন্নভাবে কিছু আয়াতের অংশ নিয়ে ঈসা(আ.)কে ইলাহ বানাতে চায়, তাহলে তো সেই (অপ)যুক্তি অনুসারে আদম(আ.) আরো বড় ইলাহ হয়ে যাবেন (নাউযুবিল্লাহ) কেননা তিনি আরো আশ্চর্য উপায়ে অস্তিত্বে এসেছেন, তাঁর তো পিতা-মাতা কেউই ছিলো না!! মূলত এসব (অপ)যুক্তি প্রয়োগ নিস্ফল ও অসার। আদম(আ.) এবং ঈসা(আ.) উভয়ই আল্লাহর বান্দা এবং নবী। তাঁরা কেউ ইলাহ নন, কোনো মানুষ ইলাহ নয়।
ঈসা(আ.)কে যারা আল্লাহর সমপর্যায়ে নিতে চায়, তাদের ভ্রান্তি রদ করে আল কুরআনে জানানো হয়েছে যে ঈসা(আ.) এর সত্ত্বা ধ্বংসশীল (চিরন্তন নয়)। আল্লাহ যদি ধ্বংস করে দিতে চান, তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবেন।
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ۚ قُلْ فَمَن يَمْلِكُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا إِنْ أَرَادَ أَن يُهْلِكَ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ۗ وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থঃ “নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে, মসীহ ইবনে মরিয়মই আল্লাহ। আপনি জিজ্ঞেস করুন, যদি তাই হয়, তবে বল যদি আল্লাহ মসীহ ইবনে মরিয়ম, তাঁর জননী এবং ভূমন্ডলে যারা আছে, তাদের সবাইকে ধ্বংস করতে চান, তবে এমন কারও সাধ্য আছে কি যে আল্লাহর কাছ থেকে তাদেরকে বিন্দুমাত্রও বাঁচাতে পারে? নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, সবকিছুর উপর আল্লাহ তা’আলার আধিপত্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।” [17]
আল কুরআনে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে ঈসা(আ.) মারা যাবেন।
وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا
অর্থঃ “কিতাবীদের মধ্য থেকে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তার উপর ঈমান আনবেই। আর কেয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন।” [18]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের বিপুল জামা’আত কর্তৃক গৃহীত ও সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত হয়েছে, এখানে موته ‘তার মৃত্যু’ শব্দের সর্বনামে ঈসা(আ.)-এর মৃত্যু বোঝানো হয়েছে। ঈসা(আ.) এর দ্বিতীয় আগমনের পর তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ইহুদি আর খ্রিষ্টানরা সবাই তাঁর উপর যথাযথভাবে ঈমান আনবে। আবু হুরায়রা(রা.) বলেন, “রাসুল(ﷺ) বলেছেনঃ ঈসা ইবন মারইয়াম(আ.) একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে অবশ্যই অবতরণ করবেন। তিনি দাজ্জালকে কতল করবেন, শুকর নিধন করবেন এবং ক্রুশকে চুরমার করবেন। তখন একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদাত করা হবে। আবু হুরায়রা(রা.) আরো বলেন - তোমরা ইচ্ছা করলে এখানে কুরআনুল কারীমের এ আয়াত পাঠ করতে পার যাতে বলা হয়েছেঃ “আহলে কিতাবদের মধ্যে কেউ অবশিষ্ট থাকবে না, বরং ওরা তার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। [বুখারীঃ ৩৪৪৮] আবু হুরায়রা(রা.) বলেনঃ এর অর্থ ঈসা(আ.)-এর মৃত্যুর পূর্বে।” [19]
ঈসা(আ.) যদি সত্যিই অসৃষ্ট হতেন, আল্লাহর চিরন্তন সিফাত হতেন – তাঁর ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণের কোনো ব্যাপার থাকতো না। অথচ আল কুরআন এবং সাহাবীদের বক্তব্য অনুযায়ী তিনিও এক সময় আর সব মানুষের মতোই মৃত্যুবরণ করবেন।
সুরা নিসার ১৭১ নং আয়াতেও ঈসা(আ.) প্রসঙ্গে ‘কালিমা’র কথা বলা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, যে আয়াতে আল্লাহ তা’আলা খ্রিষ্টানদের ভ্রান্ত বিশ্বাসকে রদ করেছেন, ঐ আয়াত থেকেই খ্রিষ্টান মিশনারীরা তাদের বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি দেখায়! সুরা নিসার ১৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۖ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ ۚ انتَهُوا خَيْرًا لَّكُمْ ۚ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ ۘ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
অর্থঃ “হে আহলে-কিতাবগণ! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর শানে নিতান্ত সঙ্গত বিষয় ছাড়া কোন কথা বলো না। নিঃসন্দেহে মরিয়ম পুত্র মসীহ ঈসা আল্লাহর রসূল এবং তাঁর বাণী যা তিনি প্রেরণ করেছেন মরিয়মের নিকট এবং রূহ-তাঁরই কাছ থেকে আগত। অতএব, তোমরা আল্লাহকে এবং তার রসূলগণকে মান্য কর। আর একথা বলো না যে, আল্লাহ তিনের এক, একথা পরিহার কর; তোমাদের মঙ্গল হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তান-সন্ততি হওয়াটা তাঁর যোগ্য বিষয় নয়। যা কিছু আসমান সমূহ ও যমীনে রয়েছে সবই তার। আর কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট।” [20]
এই আয়াতে একদম স্পষ্টভাবে খ্রিষ্টীয় ত্রিত্ববাদের বিরোধিতা করা হয়েছে। ঈসা(আ.) সম্পর্কে খ্রিষ্টানরা যেসব ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করে, তার বিরোধিতা করা হয়েছে। অথচ আগের বা পরের কোনো কথা না দেখে খ্রিষ্টান মিশনারীরা শুধু আয়াতে “তাঁর বাণী (কালিমাতুহু) যা তিনি প্রেরণ করেছেন মরিয়মের নিকট” এই কথাটুকু আলাদা করে নিয়ে নিজ বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি পেশ করতে চায়! কী অদ্ভুত তাদের কর্মনীতি।
এই আয়াতের পরের আয়াতেই বলা হচ্ছেঃ
لَّن يَسْتَنكِفَ الْمَسِيحُ أَن يَكُونَ عَبْدًا لِّلَّهِ وَلَا الْمَلَائِكَةُ الْمُقَرَّبُونَ ۚ وَمَن يَسْتَنكِفْ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيَسْتَكْبِرْ فَسَيَحْشُرُهُمْ إِلَيْهِ جَمِيعًا
অর্থঃ “ মসীহ আল্লাহর বান্দা হবেন, তাতে তার কোন লজ্জাবোধ নেই এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশতাদেরও না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর দাসত্বে লজ্জাবোধ করবে এবং অহংকার করবে, তিনি তাদের সবাইকে নিজের কাছে সমবেত করবেন।” [21]
অর্থাৎ পরের আয়াতেই বলে দেয়া হলো ঈসা(আ.) আল্লাহর বান্দা বা দাস। যারা আল্লাহর দাসত্ব অস্বীকার করবে, তাদেরকে আল্লাহর নিকট (বিচারের জন্য) সমবেত করা হবে।
প্রিয় পাঠক লক্ষ করুন, খ্রিষ্টান মিশনারীরা কীরূপে প্রসঙ্গহীনভাবে কুরআনের খণ্ডাংশ উদ্ধৃত করে মুসলিমদের নিকট খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি দেখাতে চেষ্টা করে। অথচ প্রসঙ্গসহ কুরআনের আয়াতগুলো পাঠ করলেই তাদের যুক্তির অসারতা পরিষ্কার বোঝা যায়।
তাদের উদ্যেশ্য বিশুদ্ধ আকিদা বর্ণনা করে আল্লাহ তা’আলা আরো জানাচ্ছেন যেঃ ঈসা(আ.) একজন রাসুলের বেশি কিছু নন।
مَّا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ وَأُمُّهُ صِدِّيقَةٌ ۖ كَانَا يَأْكُلَانِ الطَّعَامَ ۗ انظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ الْآيَاتِ ثُمَّ انظُرْ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
অর্থঃ “মরিয়ম-তনয় মসীহ রসূল ছাড়া আর কিছু নন। তাঁর পূর্বে অনেক রসূল অতিক্রান্ত হয়েছেন আর তার জননী একজন ওলী। তাঁরা উভয়েই খাদ্য ভক্ষণ করতেন। দেখুন, আমি তাদের জন্যে কিরূপ যুক্তি-প্রমাণ বর্ননা করি, আবার দেখুন, তারা উল্টা কোন দিকে যাচ্ছে।” [22]
আল কুরআন আরো জানায় - ঈসা(আ.) আল্লাহর সমতূল্য তো ননই, আল্লাহর সন্তানও নন। তিনি আল্লাহ তা’আলার অনুগত বান্দা। যিনি ছিলেন একজন নবী এবং আল্লাহর নির্দেশের নিকট আজ্ঞাবহ। তিনি নিজে আল্লাহর ইবাদত করতেন, অন্যকেও সেদিকে আহ্বান করতেন।
( 30 ) قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا
( 31 ) وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
( 32 ) وَبَرًّا بِوَالِدَتِي وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا شَقِيًّا
( 33 ) وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
( 34 ) ذَٰلِكَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ ۚ قَوْلَ الْحَقِّ الَّذِي فِيهِ يَمْتَرُونَ
( 35 ) مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٍ ۖ سُبْحَانَهُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
( 36 ) وَإِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ
( 37 ) فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِن بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِن مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيمٍ
অর্থঃ “[ঈসা(আ.) বললেন] আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব। এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে। আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, তিনি যখন কোন কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ হও এবং তা হয়ে যায়। তিনি আরও বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার পালনকর্তা ও তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তার এবাদত কর। এটা সরল পথ। অতঃপর তাদের মধ্যে দলগুলো পৃথক পৃথক পথ অবলম্বন করল। সুতরাং মহাদিবস আগমনকালে কাফেরদের জন্যে ধবংস।” [23]
আল কুরআনের এই সুস্পষ্ট আলোচনা দ্বারা এটি একদম পরিষ্কার যে ঈসা(আ.) আল্লাহর সৃষ্ট, আল্লাহর বান্দা। তাঁর সত্ত্বা ধ্বংসশীল। তিনি একজন মানুষ এবং রাসুলের বেশি কিছু নন। তিনি অসৃষ্ট নন, চিরন্তন নন, আল্লাহ তা’আলার সিফাতেরও অংশ নন।
তাহলে আল কুরআনে তাকে যদি আল্লাহর কালিমা বলা হয়, তাহলে তা কী অর্থে বলা হতে পারে?
এর উত্তরে তাফসির সা’দীতে শায়খ আব্দুর রহমান সা’দী(র.) বলেছেন,
“এবং তাঁর কালিমা (বাণী) যা তিনি মারইয়ামের নিকট পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ এমন এক কালিমা যা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন এবং যার দরুণ ঈসা(আ.) অস্তিত্বে এসেছেন। তিনি নিজে সত্ত্বাগতভাবে সেই কালিমা নন। বরং তিনি সেই কালিমার দ্বারা অস্তিত্বলাভ করেছেন। তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বোঝানোর জন্য তাঁকে এভাবে তাঁর কালিমা বলে বর্ণনা করা হয়েছে।” [24]
কুরআনের অন্যান্য সকল আয়াতের আলোকে এটাই উলামাগণের ব্যাখ্যা। একটি উদাহরণের সাহায্যে বললে পাঠকদের নিকট বিষয়টি বোঝা আরেকটু সহজ হতে পারে। ধরা যাক বলা হলোঃ
“আমার জীবনে শুভ বার্তা হয়ে এলো আমার প্রথম সন্তান আব্দুল্লাহ।”
এই বাক্যে ‘শুভ বার্তা’ কথাটি দ্বারা সুসংবাদ বা কল্যাণ বোঝানো হয়েছে। ‘শুভ বার্তা’র অর্থ হচ্ছে ‘সুসংবাদ’ বা ‘কল্যাণ’। আবার এটাও বলা যেতে পারে এই বাক্যে ‘শুভ বার্তা’ হচ্ছে আব্দুল্লাহ, যেহেতু এখানে তার দিকে নির্দেশ করেই এটি বলা হচ্ছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আব্দুল্লাহ সত্ত্বাগতভাবেই সুসংবাদ! বরং জীবনে আরো অনেক সুসংবাদ থেকে থাকতে পারে। এই বহু সুসংবাদের এক সুসংবাদ হচ্ছে আব্দুল্লাহ। সত্ত্বাগতভাবে সে তো একজন মানব শিশু। আব্দুল্লাহর গুরুত্ব ও মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করেই তাকে ‘শুভ বার্তা’ বলা হচ্ছে।
সিরাত থেকে আরো একটি উদাহরণ দেখান যায়। হামজা(রা.) এর উপাধী ছিলো ‘আসাদুল্লাহ’ বা আল্লাহর সিংহ। [25] তাঁকে ‘আল্লাহর সিংহ’ বলা হয়েছে এর অর্থ এই নয় যে তিনি সত্ত্বাগতভাবেই সিংহ। বরং এর দ্বারা তাঁর সাহস ও মর্যাদাকে বোঝানো হয়েছে। বাংলা ভাষাতেও অনেক সময় কোনো ব্যক্তিকে ‘সিংহপুরুষ’ বলা হয় অথবা ইংরেজিতে ‘Lion heart’ বলা হয়। এখন কাউকে ‘সিংহপুরুষ’ কিংবা ‘Lion heart’ বলা হলে কেউ যদি এ থেকে দাবি করেঃ “এই ব্যক্তি সত্ত্বাগতভাবে সিংহ নামক একটি জন্তু যার কেশর আছে, চারটি পা আছে!” – তাহলে তা অত্যন্ত হাস্যকর একটি ব্যাপার হবে। ঈসা(আ.)কে ‘আল্লাহর কালিমা’ বলার দ্বারা কেউ যদি তাঁকে অসৃষ্ট এবং আল্লাহর সিফাত কিংবা আল্লাহর সমপর্যায়ে বানাতে চায় – তাহলে সেটিও হবে হাস্যকর অপব্যাখ্যা।
যদিও ইমাম তাবারী(র.) এর মতে ‘কালিমা’ এর অর্থের ব্যাপারে ১ম অভিমতটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ। অর্থাৎ সুসংবাদ অর্থে ‘কালিমা’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে।
“ইমাম আবু জাফর তাবারী বলেন, আমার বিশুদ্ধ মত হচ্ছে প্রথমটি আর তা হলো, ফেরেশতাগণ হযরত মারইয়াম (আ.)-কে আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ দিলেন, হযরত ঈসা (আ.)-এর রিসালাতের এবং আল্লাহর কালিমার। আল্লাহ যে সুসংবাদের আদেশ দিলেন তা হলো- স্বামী ও পুরুষ ব্যতিরেকে মারইয়াম(আ.) হতে একটি ছেলে সৃষ্টি করবেন। এজন্যেই পুংলিঙ্গ সর্বনাম ব্যবহার করে আল্লাহ্ তা'আলা (اسمه বলে) তাঁর (পুং) নাম মাসীহ বলেছেন আর স্ত্রীলিঙ্গ ব্যবহার করে اسمُها বলেননি; অথচ كلمة শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ। কারণ নামের উল্লেখ যেমন মুখ্য উদ্দেশ্য, কালিমাঃ তেমন মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। নামটি অমুক ব্যক্তি অর্থে ব্যবহৃত, কিন্তু কালিমাটি এখানে সুংবাদ অর্থে ব্যবহৃত। ফলে সেটির ইঙ্গিত উল্লেখ করা হয়েছে, যেমনটি সন্তান, জন্তু ও উপাধির ইঙ্গিত উল্লেখ করা হয়। এগুলো অবশ্য আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। সুতরাং আমরা একটু আগে যা বলেছি, তার অর্থ এইঃ আল্লাহ তা’আলা আপনাকে একটি সুখকর সংবাদ দিচ্ছেন, আর তা হলো একটি সন্তান, তার নাম মাসীহ।” [26]
কিন্তু এর অর্থ যদি ঈসা(আ.)ও নেয়া হয়, তবু এর দ্বারা প্রমাণ হয় না যে তিনি অসৃষ্ট। বরং কুরআনের বহু স্পষ্ট আয়াত থেকে প্রমাণ হয় যে তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। এর বেশি কিছু নন।
বাইবেল অনুযায়ী যিশু সৃষ্ট (Creation):
খ্রিষ্টান প্রচারকরা কুরআনের আয়াত অপব্যাখ্যা করে ‘কালিমাতুল্লাহ’ কথা থেকে ঈসা(আ.) কে অসৃষ্ট এবং আল্লাহর সমপর্যায়ে প্রমাণ করতে চান, অথচ স্বয়ং তাদের গ্রন্থ বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে যিশু খ্রিষ্টকে সরাসরি ‘ঈশ্বরের সৃষ্টি’ (Creation) বলে অভিহীত করা হয়েছে!
বাইবেল অনুযায়ী যিশু হচ্ছেন ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি বা প্রথমজাত। অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রথম সৃষ্টি হচ্ছেন যিশু। বাইবেলের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী ঈশ্বর জগত সৃষ্টিরও পূর্বে সর্বপ্রথম যিশুকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর দ্বারা পরবর্তী সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন।
“কেউই ঈশ্বরকে দেখতে পায় না; কিন্তু যীশুই অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি এবং সমস্ত সৃষ্টির প্রথমজাত।
তাঁর পরাক্রমে সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্গে ও মর্ত্যে, দৃশ্য ও অদৃশ্য যা কিছু আছে, সমস্ত আত্মিক শক্তি, প্রভুবৃন্দ, শাসনকারী কর্তৃত্ত্ব, সকলই তাঁর দ্বারা ও তাঁর নিমিত্ত সৃষ্ট হয়েছে।” (BERV)
“He is the image of the invisible God, the first-born of all creation; for in him all things were created, in heaven and on earth, visible and invisible, whether thrones or dominions or principalities or authorities—all things were created through him and for him. ” (RSV) [27]
কেউ যদি সৃষ্টির প্রথমও হয়ে থাকে, তাহলেও সে তো একজন ‘সৃষ্টি’ই। সৃষ্টি কখনো আদি স্রষ্টা হতে পারে না। বরং স্রষ্টা থেকে তাঁর অবস্থান নিচে থাকে (Subordinate) । ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি’ কথাটি বাইবেলে আদিমানব আদমের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। [28] এটা দিয়েও মোটেও ঈশ্বরের সমপর্যায়ে কোনো কিছু বোঝায় না। ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টান পণ্ডিতগন জগত সৃষ্টির পূর্বে যিশুর অস্তিত্ব কিংবা যিশু দ্বারা বিভিন্ন জিনিস সৃষ্টি হওয়া সংক্রান্ত বাইবেলের পদগুলো বারংবার উল্লেখ করে যিশুকেই অসৃষ্ট এবং সৃষ্টিকর্তা প্রমাণ করতে চান। অথচ বাইবেলে যিশুকেই যে ‘সৃষ্টি’ (Creation) বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেটা বেমালুম এড়িয়ে যান! কেউ কেউ সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে যিশুর প্রথমজাত হওয়ার কথা উল্লেখ করে অপযুক্তি দিতে চেষ্টা করেন এবং অপব্যাখ্যা করে যিশুকেই এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টা বানানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাইবেলের বর্ণনায় জগত সৃষ্টির আগে সৃষ্টি হওয়া যিশু কিভাবে অন্য সৃষ্টির প্রথমজাত (Firstborn) হয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করেও পদ রয়েছে।
“জগৎ সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বর যাদের জানতেন, তাদের তিনি তাঁর পুত্রের মত করবেন বলে মনস্থ করলেন। এইভাবে যীশু হবেন অনেক ভাইদের মধ্যে প্রথমজাত।” (BERV)
“For those whom he foreknew he also predestined to be conformed to the image of his Son, in order that he might be the first-born among many brethren.” (RSV) [29]
একজন পিতার সন্তানদের মধ্যে যিনি প্রথমজাত বা Firstborn – দিনশেষে তিনি নিজেও কিন্তু একজন পুত্র। পিতা নন। বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে যিশুও স্রষ্টা নন। সৃষ্টি।এখানে স্পষ্টত ঈশ্বর (স্রষ্টা) এবং পুত্র/যিশুকে (সৃষ্টি) আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে।এই পদ থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে ঈশ্বর এবং যিশু এক নন। ঈশ্বরের মনস্থ করা অনুযায়ী যিশু তাদের ভাইদের মধ্যে প্রথমজাত হয়েছেন। অন্য ভাইয়েরা যেহেতু সৃষ্টি, যিশুও সৃষ্টি।
বাইবেলে আরো বলা হয়েছেঃ
“আর লায়দিকেয়াস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ- যিনি আমেন, যিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময় সাক্ষী, যিনি ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি, তিনি এই কথা কহেন;” (Carey)
“And to the angel of the church in La-odice′a write: ‘The words of the Amen, the faithful and true witness, the beginning of God’s creation.” (RSV) [30]
আমরা যদি এই পদে মূল গ্রীক লক্ষ করি তাহলে দেখবো এখানে বলা হয়েছেঃ ἀρχὴ τῆς κτίσεως τοῦ Θεοῦ (Beginning of the creation of God)। [31] তিনি ঈশ্বরের সৃষ্টির সূচনা।তিনি সৃষ্টি। তিনি ঈশ্বর না।বরং তিনি ঈশ্বরের।
বাইবেলেই যেখানে পরিষ্কার ভাষায় যিশুকে ‘সৃষ্টি’ বলে অভিহীত করা হয়েছে, সেখানে খ্রিষ্টান প্রচারকগণ আল কুরআন থেকে ঈসা(আ.)কে অসৃষ্ট বানানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালান। বড়ই বিচিত্র তাদের কর্মপ্রয়াস! নিজেদের ধর্মীয় গ্রন্থের আকিদা-বিশ্বাসের তোয়াক্কা না করে মনগড়া আকিদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টার সার্থক উদাহরণ।
এখানে যে বাইবেলের স্পষ্ট উদাহরণ উল্লেখ করে যিশুর ঈশ্বরের সৃষ্ট বান্দা হওয়ার ব্যাপারে যে যুক্তিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, এই যুক্তি নতুন কিছুই নয়। খ্রিষ্ট ধর্মের ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যায় বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় দল সবসময়েই ছিলো যারা কিতাবের স্পষ্ট পদ থেকে অপব্যাখ্যা করতো না বরং সরলভাবেই তা থেকে অর্থ নিতো।যার দরুণ তারা যিশু খ্রিষ্টকে ঈশ্বরের সৃষ্টি বলে মনে করতো, স্রষ্টা মনে করতো না।ইউরোপে ৪র্থ শতাব্দীতে এমন আকিদার খ্রিষ্টানরা Arian খ্রিষ্টান হিসেবে পরিচিত ছিলো, তাদের আকিদাকে বলা হতো Arianism। [32] ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দের নাইসিয়ার সম্মেলনে এদেরকে Heretic বা ভ্রান্ত আকিদার খ্রিষ্টান বলে চিহ্নিত করা হয়, পরে ধীরে ধীরে এদের দমন করা হয়। [33] এরও পুর্বে একদম ১ম শতাব্দী থেকেই খ্রিষ্টানদের মাঝে ‘ইবিওনীয়’ (Ebionites) নামে একটি দল ছিলো। এরা ছিলো যিশু খ্রিষ্টের এর নিজ জাতি বনী ইস্রাঈলের খ্রিষ্টান। তারাও যিশু খ্রিষ্টকে ঈশ্বর মানতো না বরং একজন মানুষ ও নবী মানতো। অর্থাৎ তারাও যিশুকে অসৃষ্ট মনে করতো না। তারা সাধু পলকে ধর্মত্যাগী মনে করতো এবং তার তত্ত্বকে পরিত্যাগ করতো। তারা তাওরাত ও ইঞ্জিল উভয়ের উপর আমল করতো। [34] এখানে বর্তমান বাইবেলের সরাসরি পদ থেকে যিশুকে ‘সৃষ্ট’ বলে আমরা যে ব্যাখ্যা করেছি, এটা মোটেও মুসলিম দাঈদের বানানো নতুন কোনো ব্যাখ্যা নয়। বরং খ্রিষ্টধর্মের সূচনাকাল থেকে যিশু সম্পর্কে এই ধরণের ব্যাখ্যা এবং আকিদা-বিশ্বাস প্রচলিত ছিলো, এই আকিদার খ্রিষ্টানরাই ছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমনকি ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টানরা আজ যেসব প্রাচীন চার্চ ফাদারদেরকে শ্রদ্ধা করে, যাদের লেখনী থেকে বিভিন্ন তথ্য উদ্ধৃত করে নিজ আকিদা-বিশ্বাস প্রমাণ করতে চায়, তাদের প্রায় সবাই ছিলেন Subordinationism আকিদার অনুসারী। টার্টুলিয়ান, অরিজেন প্রমুখ প্রাচীন চার্চ ফাদারদের থেকে এমন আকিদা পাওয়া যায়ঃ একমাত্র পিতা ঈশ্বর হচ্ছেন সবার থেকে বড়। পুত্র ও পবিত্র আত্মা ত্রিত্বের অংশ হলেও তাঁরা পিতার তুলনায় অধস্তন (Subordinate) এবং তাঁদেরকেও পিতা অর্থাৎ স্বর্গস্থ ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। ত্রিত্বের মাঝে একমাত্র পিতাই পূর্ণ ঈশ্বর। ৩২৫ সালে নাইসিয়ার সম্মেলনে এই আকিদাকে বর্জন করা হয় এবং যিশুকে অসৃষ্ট বলে ‘সিদ্ধান্ত’ নেয়া হয়। [35] পরবর্তীতে আইন প্রয়োগ, শক্তি প্রয়োগ ইত্যাদি নানা উপায়ে “যিশু অসৃষ্ট এবং ঈশ্বরের সমান” এই নাইসিয় আকিদাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। [36]
অনেকে জেনে অবাক হবেন যে, আজ অবধি বেশ কিছু খ্রিষ্টান দল এই স্থানে প্রাচীন খ্রিষ্টানদের ন্যায় ব্যাখ্যা করে।উপরে যে পদগুলো দেখিয়ে আমরা যিশু খ্রিষ্টকে ‘ঈশ্বরের সৃষ্টি’ বলে ব্যাখ্যা করেছি, বর্তমানে যিহোবার সাক্ষী (Jehovah’s Witness) দলীয় খ্রিষ্টানরাও এই পদগুলোকে ঠিক এভাবেই ব্যাখ্যা করে থাকে এবং যিশুকে সৃষ্টি (Creation) বলে বিশ্বাস করে। [37] তারা যিশু খ্রিষ্টের উপাসনা করে না, ত্রিত্বে বিশ্বাস করে না। তারা তাদের বিভিন্ন লেখনীতে বাইবেলের পদ এবং ইতিহাস উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে ত্রিত্ববাদীদের অযৌক্তিক ব্যাখ্যাগুলো খণ্ডন করার চেষ্টা করে।তারা তাদের বিভিন্ন প্রবন্ধে উল্লেখ করে বাইবেলের স্পষ্ট বিভিন্ন উল্লেখ অনুযায়ী যিশু ঈশ্বরের সৃষ্টি। তারা আরো উল্লেখ করে কিভাবে গ্রীক দর্শন ব্যবহার করে কিতাবের অর্থ অপব্যাখ্যা করে যিশুকে ঈশ্বরের সৃষ্টি থেকে ভিন্ন অর্থ করা হয় এবং স্রষ্টা বানিয়ে দেয়া হয়। ঈশ্বর অনুপ্রানিত বাইবেলের লেখকেরা যেখানে কখনোই এভাবে গ্রীক দর্শন ব্যবহার করতেন না। [38] সত্যি কথা বলতে, কিতাবের সরল অর্থ না নিয়ে, গ্রীক দর্শন ব্যবহার এবং অপব্যাখ্যা করে বহু জাতি যুগে যুগে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
বাইবেলের ‘ঈশ্বরের বাক্য’ পদ থেকেও যিশু চিরন্তন ঈশ্বর বলে প্রমাণিত হন নাঃ
বাইবেলে যোহন লিখিত সুসমাচারের কিছু পদের আলোকে ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টানরা দাবি করে এখানে যিশুকে চিরন্তন ঈশ্বর বলা হচ্ছে।
“আদিতে বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন আর সেই বাক্যই ঈশ্বর ছিলেন৷
…
বাক্য মানুষের রূপ ধারণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বসবাস করতে লাগলেন৷ পিতা ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হিসাবে তাঁর য়ে মহিমা, সেই মহিমা আমরা দেখেছি৷ সে বাক্য অনুগ্রহ ও সত্যে পরিপূর্ণ ছিলেন৷” (BBS)
“In the beginning was the Word, and the Word was with God, and the Word was God.
…
And the Word became flesh and lived among us, and we have seen his glory, the glory as of a father’s only son, full of grace and truth.” (NRSV) [39]
খ্রিষ্টানরা দাবি করে এখানে ঈশ্বরের এই বাক্য হচ্ছেন যিশু আর এখানে সরাসরি বলা হচ্ছে সেই বাক্যই ঈশ্বর। সেই বাক্য রক্তমাংসে রূপলাভ করে যিশুরূপে পৃথিবীতে এসেছিলো। খ্রিষ্ট ধর্মের আকিদা-বিশ্বাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশই এসেছে যোহনলিখিত সুসমাচারের এই পদগুলো থেকে এবং এর এহেন ব্যাখ্যা থেকে।
কিন্তু এখান এক শুভঙ্করের ফাঁকি আছে যা অধিকাংশেরই চোখ এড়িয়ে যায়।
বর্তমানে খ্রিষ্টানদের নিকট বাইবেলের যে নতুন নিয়ম (New Testament) অংশ রয়েছে তা বিভিন্ন গ্রীক পাণ্ডুলিপির একত্রিকরণের পর অনুবাদ করা হয়েছে। যোহন ১ : ১ এর মূল গ্রীক পাঠ হচ্ছেঃ
Ἐν ἀρχῇ ἦν ὁ λόγος, καὶ ὁ λόγος ἦν πρὸς τὸν θεόν, καὶ θεὸς ἦν ὁ λόγος. [40]
অনুবাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে আদিতে ঈশ্বরের সাথে ছিলো বাক্য এবং সেই বাক্যই ছিলো ঈশ্বর। কিন্তু বাইবেলের মূল গ্রীকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে, অথচ উভয় স্থানেই ‘ঈশ্বর’ অর্থাৎ কিংবা বড় হাতের G দিয়ে ‘God’ বলে অনুবাদ করা হয়েছে! এভাবে বাক্যকেও ঈশ্বর বা God বানিয়ে দেয়া হয়েছে। পাঠকের বুঝবার সুবিধার জন্য আমরা বাইবেলের মূল গ্রীকের শব্দগুলো আলাদা আলাদা করে এখান দেখাচ্ছি—
সূত্রঃ https://biblehub.com/text/john/1-1.htm
সূত্রঃ https://www.abarim-publications.com/Interlinear-New-Testament/John/John-1-parsed.html
এখানে গ্রীক τὸν θεόν (ton theon)কে অনুবাদ করা হয়েছে God, আবার θεὸς (theos)কেও অনুবাদ করা হয়েছে God! গ্রীক ভাষায় Definite Article (পদাশ্রিত নির্দেশক/পদাশ্রিত অব্যয়) এর অন্যতম হচ্ছে ὁ (ho), τὸν (ton) ইত্যাদি। Accusative Masculine singular এর ক্ষেত্রে Definite Article হিসেবে τὸν (ton) বসে, আর Nominative Masculine singular ক্ষেত্রে Definite Article হিসেবে ὁ (ho) বসে। [41] আমরা যোহন ১ : ১ এ দেখি The God বোঝানোর জন্য θεόν (theon) শব্দের পূর্বে τὸν (ton) বসেছে। অর্থাৎ The এর দ্বারা এখানে সুনির্দিষ্টভাবে সত্য ঈশ্বরকেই বোঝাচ্ছে। সাধারণভাবে θεὸς (theos) শব্দের পূর্বে ὁ (ho) Definite Article বসে। কিন্তু যোহন ১ : ১ এ θεὸς (theos) শব্দের পূর্বে কোনো Definite Article নেই। অর্থাৎ এখানে নির্দিষ্ট করে The God বলা হয়নি। এর দ্বারা নির্দিষ্টভাবে সত্য ঈশ্বরকে বোঝাচ্ছে না। এর অর্থ সত্য ঈশ্বরও (বড় হাতের G দিয়ে God) হতে পারে, অথবা সাধারণভাবে ছোট হাতে g দিয়ে god/a godও হতে পারে। বাইবেলের পরিভাষায় ছোট হাতের g দিয়ে লিখিত ‘god’ শব্দ দ্বারা প্রসিদ্ধ ব্যক্তি, ঈশ্বরের প্রিয় ব্যক্তি, ঐশ্বরিক ব্যক্তি (Divine Person), ঈশ্বরের বার্তাবাহকদেরকে বোঝায়। যেমন, বাইবেলের যাত্রাপুস্তক সপ্তম অধ্যায়ের ১ম পদে বলা হয়েছে,
“And the Lord said unto Moses, See, I have made thee a god to Pharaoh: and Aaron thy brother shall be thy prophet.” (KJV) [42]
বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) এর গ্রীক সংস্করণ সেপ্টুয়াজিন্টে দেখা যায় এখানে মোশি [Moses/মুসা(আ.)] এর ক্ষেত্রে τὸν (ton) Definite Article ছাড়াই শুধুমাত্র θεόν (theon) শব্দটি আছে। কাজেই এখানে স্বাভাবিকভাবেই ‘a god’ অনুবাদ হয়েছে। The God নয়। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে মোশি সত্য ঈশ্বর নন বরং ঈশ্বরের একজন দূত।
সূত্রঃ https://studybible.info/interlinear/Exodus%207:1
যোহন ১ : ১ এ যে এখানে সত্য ঈশ্বরকে বোঝানো হয়নি, তা নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় এই অধ্যায়েরই ১৮ নং পদ থেকে।
“ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখেনি; কিন্তু একমাত্র পুত্র, যিনি পিতার কাছে থাকেন, তিনিই তাঁকে প্রকাশ করেছেন৷” (BBS)
“No one has ever seen God. It is God the only Son, who is close to the Father’s heart, who has made him known” (NRSV) [43]
এখানে যোহনের সুসমাচার লেখক স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন কেউই ঈশ্বরকে দেখেনি। ঈশ্বরপুত্র অর্থাৎ যিশুই ঈশ্বরকে প্রকাশ করেছেন। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সুসমাচার লেখকের নিকট ঈশ্বর এবং যিশু আলাদা। যিশুকে তিনি ঈশ্বর বোঝাতে চাননি। ঈশ্বরের বাক্য তথা যিশুকে তো তাঁর শিষ্যরা সহ অনেকেই দেখেছে; ঈশ্বরকে কেউ দেখেনি। কাজেই বাক্য মোটেও ঈশ্বর না, The God না। [যোহন ১ : ১৮র ক্ষেত্রেও কিছু শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে যা একটু পরে আলোচনা করা হবে ইন শা আল্লাহ।] যোহন ১ : ১ এ “the Word was God” অনুবাদ হওয়া উচিত নয় বরং the word was a god অথবা the word was divine অনুবাদ হওয়া উচিত। আর বাইবেলের পরিভাষায় এ থেকে মোটেও সত্য ঈশ্বর বা এক-অদ্বিতীয় সদাপ্রভু ঈশ্বর (The God) বোঝায় না।
এখানে পাঠকের উদ্যেশ্যে একটি মজার জিনিস উল্লেখ করতে চাই। বাইবেলে ২ করিন্থিয় ৪ : ৪ এ শয়তানের ক্ষেত্রে Definite Article দিয়ে ὁ θεὸς (ho theos) লেখা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে অনুবাদ হওয়া উচিত The God! (চিত্র দ্রষ্টব্য)
সূত্রঃ https://biblehub.com/interlinear/2_corinthians/4-4.htm
উপরের চিত্রতেও দেখা যাচ্ছে শব্দের অর্থের জায়গায় ὁ θεὸς (ho theos) এর অনুবাদে ঠিকই বড় হাতে G দিয়ে the God লেখা হয়েছে, অথচ পুরো বাক্যের অনুবাদের জায়গায় আবার ছোট হাতে the god লেখা (তীর চিহ্ন দিয়ে নির্দেশিত)! বাইবেলের ইংরেজি ভার্সনগুলোতেও এখানে ছোট হাতে god অনুবাদ করা হয়েছে, বড় হাতে God অনুবাদ করা হয়নি। [44] এখন শয়তানকে বাইবেলের ঈশ্বর বা The God হিসেবে উল্লেখ করা যায় কিনা, সেটা খ্রিষ্টান পণ্ডিতগণ ঠিক করবেন। আমরা শুধুমাত্র মূল গ্রীক পাঠ উল্লেখ করে দেখিয়ে দিলাম অনুবাদের ক্ষেত্রে এখানে কেমন শুভঙ্করের ফাঁকি সৃষ্টি হয়েছে। যে স্থানে god অনুবাদ হবার কথা সেখানে অনুবাদ করা হয়েছে God আবার যেখানে God অনুবাদ হবার কথা সেখানে অনুবাদ করা হয়েছে god! একজন মানুষকে ঈশ্বর (God) বানাবার জন্য এতো আয়োজন। এর দ্বারা কার সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব? স্রষ্টার, নাকি অন্য কারো?
আমরা আল্লাহর নিকট সকলের হেদায়েত প্রার্থনা করি।
বাইবেলের কিছু অনুবাদ পর্যালোচনাঃ
খ্রিষ্টান প্রচারকরা এরপরেও হয়তো বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে না পারেন। তারা হয়তো বলতে পারেনঃ মুসলিমরা এখানে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ / ‘ভুল অনুবাদ’ (!!) করে যিশুর ঈশ্বরত্ব অস্বীকার করতে চায়! অন্ধভাবে যারা বিরোধিতা করে, তাদের জন্য আমরা শুধু হেদায়েতেরই দোয়া করতে পারি। কিন্তু যারা সত্য সন্ধানী, তাদের উদ্যেশ্যে বাইবেলের বেশ কিছু অনুবাদের পর্যালোচনা করতে পারি। বাইবেলের অনুবাদগুলো যাচাই করলে দেখা যায় বেশ কিছু ভার্সনে যোহন ১ : ১ এর এই স্থানে যথাযথভাবে ‘a god’ অথবা ‘divine’ অনুবাদ করা হয়েছে। The God অর্থ করা হয়নি। খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী পণ্ডিতেরাই এই বাইবেলগুলো অনুবাদ করেছেন। আমরা এই প্রবন্ধে τὸν θεόν (ton theon) এবং θεὸς (theos) এর অর্থের ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা আলোচনা করেছি, তারাও অনুরূপভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন এবং সে অনুযায়ী অনুবাদ করেছেন।
১)
যেমন, 2001 Translation - An American English Bible এ যোহন ১ : ১ এর অনুবাদ করা হয়েছে এভাবেঃ
“In the beginning there was the Word.
The Word was with The God (gr. Ton Theon) and the Word was a powerful one (gr. theos or god-like).” [45]
২)
‘Archbishop Newcome’s New Testament’ (Improved Version 1809)’ এ যোহন ১ : ১ এর অনুবাদ করা হয়েছে এভাবেঃ
"The Word was in the beginning, and the Word was with God and the Word was a god." [46]
সেই অনুবাদের পাদটিকায় বলা হয়েছেঃ
[and the Word was a god.'] " was God," Neweome. Jesus received a commission as a prophet of the Most High, and was invested with extraordinary miraculous powers. But, in the Jewish phraseology, they were called gods to whorn the word of God came. John X. 35. So Moses is declared to be a god to Pharaoh. Exod. VII.1.
অর্থাৎ, সুউচ্চ-মহান ঈশ্বরের নিকট থেকে যিশু একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নবী ছিলেন, যার ছিলো অসাধারণ কিছু মুজিজা। ইহুদিদের পরিভাষায় যাদের নিকট ঈশ্বরের বাণী আসতো, তাদেরকে gods (ঐশ্বরিক ব্যক্তি) বলা হতো (যোহন ১০:৩৫)। যেমন মোশিকে [মুসা(আ.)] ফিরআউনের নিকট একজন god বলা হয়েছিলো (যাত্রাপুস্তক ৭:১)।
৩)
‘The Wilton Translation of the New Testament’ এ যোহন ১ : ১ এর অনুবাদ করা হয়েছে এভাবেঃ
"The Word was in the beginning, and the Word was with God, and the Word was divine." [47]
৪)
‘The New Testament, An American Translation’ এ যোহন ১ : ১ এর অনুবাদ করা হয়েছে এভাবেঃ
“In the beginning the Word existed. The Word was with God, and the Word was divine.” [48]
৫)
‘The four Gospels - Charles Cutler Torrey’ এ যোহন ১ : ১ এর অনুবাদ করা হয়েছে এভাবেঃ
"In the beginning was the Word, and the Word was with God, and the Word was god.” [49]
৬)
"The New Testament : a new translation - James Moffatt" এ যোহন ১ : ১ এর অনুবাদ করা হয়েছে এভাবেঃ
"The Logos existed in the very beginning, the Logos was with God, the Logos was divine." [50]
এমন আরো বহু অনুবাদের উদাহরণ দেখানো যাবে। কিন্তু প্রবন্ধের কলেবর বড় হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকায় আমরা এখানেই উদাহরণের সমাপ্তি টানছি। সত্য সন্ধানীদের জন্য এগুলোই যথেষ্ট হবার কথা। যদিও অধিকাংশ অনুবাদে এই স্থানে ‘God’ অনুবাদ করা হয়েছে, তথাপি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভার্সনে a god বা divine লিখেও অনুবাদ করতে দেখা যায়। এতো শুভঙ্করের ফাঁকির মাঝেও যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভার্সনে সঠিক অনুবাদ দেখা যায় এতেই বোঝা যাচ্ছে যে সত্যকে কখনো চেপে রাখা যায় না। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
যোহন ১ : ১৮ – ঈশ্বরকে কেউ কখনো দেখেনিঃ
একটু আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে, যোহন ১ম অধ্যায়ের ১৮ নং পদ দ্বারা নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে ঈশ্বরের বাক্য যিশু কোনোভাবেই ঈশ্বর হতে পারেন না। এই পদটির জন্য আরো স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে যোহন ১ : ১ এ বাক্যকে ঈশ্বর বা God অনুবাদ করা সঠিক নয়। যার দরুণ ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু যোহন ১ : ১৮ এর কিছু অনুবাদে দেখা যায় যিশু নিজেই ঈশ্বর! আবার কোনো কোনো জায়গায় যিশু ঈশ্বরপুত্র। আধুনিক বিভিন্ন বাইবেল ভার্সনে যোহন ১ : ১৮ এর বিভিন্ন রকম অনুবাদ দেখা যায়। যেমনঃ
King James Version (KJV)
“No man hath seen God at any time, the only begotten Son, which is in the bosom of the Father, he hath declared him.” [51]
New International Version (NIV)
“No one has ever seen God, but the one and only Son, who is himself God and is in closest relationship with the Father, has made him known.” [52]
International Standard Version (ISV)
“No one has ever seen God. The uniquely existing God, who is close to the Father’s side, has revealed him.” [53]
Modern English Version (MEV)
“No one has seen God at any time. The only Son, who is at the Father’s side, has made Him known.” [54]
Carey Old Bengali Bible
“ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই; একজাত পুত্র, যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন, তিনিই [তাঁহাকে] প্রকাশ করিয়াছেন।” [55]
বাংলা সমকালীন সংস্করণ
“ঈশ্বরকে কেউ কোনোদিন প্রত্যক্ষ করেনি। কিন্তু এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর, যিনি পিতার পাশে বিরাজ করেন, তিনিই তাঁকে প্রকাশ করেছেন।” [56]
বিজ্ঞ পাঠক হয়তো অনুবাদে পার্থক্যগুলো লক্ষ করেছেন। যেন তেন কোনো পার্থক্য নয়, খুব বিশাল এবং গুরুতর পার্থক্য। কিছু কিছু অনুবাদে যিশুকে Son আবার কিছু অনুবাদে Begotten son (একজাত পুত্র) বলে উল্লেখ করা হয়েছে (সবুজ রঙে চিহ্নিত)। কিছু কিছু অনুবাদে যিশুকে পুত্রের সাথে সাথে সরাসরি ঈশ্বর (God) বলে উল্লেখ করা হয়েছে (আন্ডারলাইন ও লাল রঙে চিহ্নিত)। কিছু অনুবাদে পুত্র বাদ দিয়ে যিশুকে শুধু ঈশ্বর বলে উল্লেখ করা হয়েছে! এই পার্থক্যগুলো এমন যার দ্বারা আকিদা-বিশ্বাসই পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। আমরা এখানে মাত্র ৬টি বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন উল্লেখ করেছি। অন্য ভার্সনগুলোতেও এই বিশেষ পদটির অনুবাদে এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা অনুবাদ দেখা যায়।
এখানে এই অনুবাদের বৈচিত্র্যের কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে (Manuscripts) যোহন ১ : ১৮ বিভিন্নভাবে আছে। একভাবে নেই। ভিন্ন মূল পাণ্ডুলিপির উপর নির্ভর করার জন্য বিভিন্ন ভার্সনের অনুবাদেও ভিন্নতা। এখানে কোন মূল পাণ্ডুলিপিটা পবিত্র আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত বা ‘আসল’ ঈশ্বরের বাণী সেটা একটা প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর খ্রিষ্টানরাই বের করুক। তবে আমরা যদি যোহন ১ এর সব মূল পাণ্ডুলিপি বিশ্লেষণ করি তাহলে বুঝতে পারবো যে লেখক আসলে এখানে কী বলতে চেয়েছেন। যোহন ১ এর সকল পাণ্ডুলিপির মোট সংখ্যার ৯৯% এর মধ্যেই ১ : ১৮ পদে যিশুর ক্ষেত্রে υιος (পুত্র) কথাটি আছে। মাত্র ১% পাণ্ডুলিপিতে θεος (ঈশ্বর) কথাটি আছে।[57] কিছু কিছু অনুবাদক ৯৯% পাণ্ডুলিপির তথ্য অগ্রাহ্য করে মাত্র ১% পাণ্ডুলিপির উপর ভিত্তি করে যোহন ১ : ১৮ এ যিশুকে ঈশ্বর (God) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতো বিপুল পরিমাণ পাণ্ডুলিপির বিপরীতে নগণ্য সংখ্যক পাণ্ডুলিপির তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়।[58]
এখানে আরো একটি তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রাচীন অনেক চার্চ ফাদার তাদের লেখনীতে যোহন ১ : ১৮ পদটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাদের প্রায় সবাই এখানে যিশুর ক্ষেত্রে ঈশ্বর (God) না, বরং পুত্র (Son) দিয়ে এটি উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ Ignatius, Irenaeus, Origen, Tertullian, Augustine এইসব চার্চ ফাদারদের একজনও যোহন ১ : ১৮ উদ্ধৃত করার সময়ে যিশুর ক্ষেত্রে God বা Begotten God উল্লেখ করেননি। বরং Son বা Begotten Son উল্লেখ করেছেন।[59] খ্রিষ্টানগণ তাদের বাইবেল এবং আকিদা-বিশ্বাস প্রমাণ হিসেবে এই প্রাচীন চার্চ ফাদারদেরকে বারংবার উল্লেখ করে থাকেন। REV Bible Commantaryতে উল্লেখ করা হয়েছে, “only begotten son” এখানে সঠিক পাঠ।“only begotten God” নয়। যোহনের সুসমাচারে অন্যান্য স্থানে গ্রীক শব্দের ব্যবহার তুলনার দ্বারা এটি বোঝা যায়। REV Bible Commantaryতে এ ব্যাপারে বেশ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।[60]
এবার আসি যৎসামান্য পাণ্ডুলিপির উপর ভিত্তি করে যেসব জায়গায় যোহন ১ : ১৮তে যিশুকে “Only begotten God” বা “God” বলে অনুবাদ করা হয়েছে সেগুলোর আলোচনায়। এই অনুবাদকরা P66, P75 ইত্যাদি পাণ্ডুলিপির উপর নির্ভর করেছেন।এ পাণ্ডুলিপিগুলো অপেক্ষাকৃত প্রাচীন বলে UBS editorial committee যোহন ১ : ১৮কে “the only begotten God” বলে অনুবাদ করেছেন। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়। সেই ৫ সদস্যের কমিটির Allen Wikgren উল্লেখ করে গিয়েছেন,
“It is doubtful that the author would have written μονογενὴς θεός, which may be a primitive, transcriptional error in the Alexandrian tradition (Υς/Θς). At least a D decision would be preferable. A.W.” [61]
অর্থাৎ, বিষয়টি সন্দেহজনক, লেখক এখানে হয়তো ‘মনোজেনেস থিওস’ (Only begotten God) লিখেছেন যা আলেকজান্দ্রিয়ান ধারা থেকে আসা বহু প্রাচীন লিপিকারের ভুল। অন্ততপক্ষে একটি D সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করাই ভালো হবে। A.W (Allen Wikgren) ।
তিনি উল্লেখ করেছেন এটি {D} সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ Doubtful (সন্দেহজনক) সিদ্ধান্ত। এই অনুবাদের মাঝে সন্দেহ রয়েছে।মাত্র ১% পাণ্ডুলিপির উপর ভিত্তি করে অনুবাদটির ব্যাপারেও UBS editorial committee সদস্য সন্দেহ পোষণ করেছেন। ঝকঝকে পৃষ্ঠার সুন্দর বাঁধাইয়ের বাইবেল পাঠকারী অনেকেই হয়তো বিষয়টি জানেন না।
কী করে হলো এই লিপিকারের ভুলটি? এর উত্তরে Matthew Black এর ‘An Aramaic Approach to the Gospels and Acts’ গ্রন্থে বলা হয়েছে,
“… μονογενὴς θεός in John 1.18 mistranslates yehidh elaha, ‘the only-begotten of God’ ” [62]
অর্থাৎ, এখানে যোহন ১ : ১৮তে μονογενὴς θεός (Only begotten God) কথাটি Yehidah Elaha বা ‘The only-begotten OF God’ কথাটি ভুলভাবে অনুবাদ করার ফলে হয়েছে।
এই ভুল কি নিছক ‘ভুল’? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ব্যাপার আছে? যোহন ১ : ১৮ এর ক্ষেত্রে প্রাচীন পাণ্ডুলিপির ভিন্নতার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে James Frank McGrath বলেছেন,
“The attestation of two early Alexandrian papyrus manuscripts of the Gospel, known as P66 and P75, is frequently given more weight than it deserves. P75 is indeed a very early text, but it frequently gives a reading which is generally accepted to be inferior, and in a few instances shows signs of conscious additions or alterations having been made. Also significant is the agreement of these two manuscripts in omitting the word God in John 5:44, which almost all scholars agree was part of the original text. Beasley-Murray regards this as accidental, but it may equally be the case that the scribes who copied these manuscripts had difficulty referring to the Father as the only God, since the Logos can also be spoken of as "God." Also significant is that P66 adds the definite article before the word "God" in John 10:33. There are thus indications that the copyists of these manuscripts had a particular theological view which their transcription reflects. ” [63]
তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম হলো, আলেকজান্দ্রিয় ধারার P66 এবং P75 পাণ্ডুলিপি অনেক প্রাচীন সময়কালের হলেও অনেক সময় এগুলোর মাঝে সচেতনভাবে পরিবর্তন এবং সংযুক্তির (অর্থাৎ বিকৃতির) নিদর্শন দেখা যায়।এইসব পাণ্ডুলিপিগুলোতে এগুলোর লিপিকারদের আকিদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখা যায়।
আমরা দেখলাম কিভাবে বাইবেলের কিছু পাণ্ডুলিপিতে ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত ভুল করা হয়েছে যারা দ্বারা বর্তমান কিছু অনুবাদও প্রভাবিত হয়েছে।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ‘Beogotten’ শব্দ দ্বারা তো আমরা জন্ম দেয়া কাউকে বুঝি। বাইবেলের গ্রীক ভাষায় μονογενὴς কে সাধারণত ‘Begotten’ বা ‘একজাত’ বলে অনুবাদ করা হয়। এর দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? এর দ্বারা কি যিশুকে কি ঈশ্বর জন্ম দিয়েছেন বলে বোঝানো হচ্ছে (নাউযুবিল্লাহ) ?
এর উত্তরে বাইবেলীয় গ্রীক সম্পর্কিত অভিধান ‘‘The Vocabulary of The Greek New Testament’’ এ বলা হয়েছে,
“μονογενὴς
is literally "one of a kind." "only," "unique" (unicus), not "only-begotten," which would be μονογεννητos (unigenitu), … ” [64]
অর্থাৎ, আক্ষরিকভাবে ‘μονογενὴς’ (মনোজেনেস) কথাটির মানে হচ্ছে "one of a kind." "only," "unique" [একমাত্র, অনন্য, অদ্বিতীয়]। ‘Only-begotten’ বা ‘একমাত্র জন্ম দেয়া’ / ‘একজাত’ না।
কাজেই বাইবেলে এই কথার দ্বারা যিশুকে মোটেও ঈশ্বরের জন্ম দেয়া কিছু বোঝানো হচ্ছে না। যে কারণে বাইবেলের অনেক অনুবাদে এ স্থলে ‘only-begotten’ শব্দটি পরিহার করে ‘unique’, ‘only’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
"No one has ever seen God; the only Son, who is in the bosom of the Father, he has made him known."
[John 1 : 18, Revised Standard Version (RSV)] [65]
আশা করি উপরের আলোচনা থেকে পাঠকের নিকট বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে যোহন ১ : ১৮ এর অনুবাদে যিশুর ক্ষেত্রে কোনোমতেই God/begotten God সঠিক পাঠ নয়। বরং Only Begotten Son বা Only Son হচ্ছে সঠিক পাঠ। আর তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে যোহন ১ : ১ থেকেও যিশুকে ঈশ্বর প্রমাণ করা সম্ভব না [“বাইবেলের ‘ঈশ্বরের বাক্য’ পদ থেকেও যিশু চিরন্তন ঈশ্বর বলে প্রমাণিত হন না” অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য]।
ঈশ্বরের বাক্য যদি ঈশ্বর হয় তাহলে বাইবেলও ঈশ্বর!:
খ্রিষ্টানগণ বিশ্বাস করেন বাইবেল হচ্ছে ‘ঈশ্বরের বাক্য’ / ‘ঈশ্বরের বাণী’ (Word of God)। [66] তারা যিশু খ্রিষ্টের ক্ষেত্রেও একই কথা বলে থাকেন, তারা বিশ্বাস করেন যিশু ঈশ্বরের বাক্য। আর এটি তাদের নিকট যিশুর ঈশ্বরত্বের পক্ষে অন্যতম যুক্তি। বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘পবিত্র বাইবেল’ (২০০০) এর ভূমিকায় বলা হয়েছেঃ “পবিত্র বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য”।
এই অনুবাদেরই যোহন ১ম অধ্যায়ের ১ম ও ১৪ নং পদে বলা হয়েছেঃ
“১ প্রথমেই বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সংগে ছিলেন এবং বাক্য নিজেই ঈশ্বর ছিলেন।
১৪ সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন।” [67]
এখানে বলা হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্য নিজেই ঈশ্বর। খ্রিষ্টানরা ব্যাখ্যা করেন এই ঈশ্বরের বাক্য হচ্ছেন যিশু। আবার বাইবেলও ঈশ্বরের বাক্য। তাহলে যুক্তি কী বলে? যুক্তি অনুযায়ী তাহলে বাইবেলও ঈশ্বর হয়ে যায়!
খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসমতে যিশু নশ্বর মানব দেহ নিয়ে জন্মেছেন, কিন্তু সেই নশ্বর দেহে ঈশ্বরের চিরন্তন বাক্য আছে। আর ঈশ্বরের বাক্য হচ্ছে ঈশ্বর। কাজেই যিশুও ঈশ্বর। কিন্তু (তাদের যুক্তি অনুযায়ী) একই কথা তো বাইবেলের ক্ষেত্রেও সত্য। বাইবেলের কাগজ, কালি ইত্যাদি সৃষ্ট জিনিস। এগুলো নশ্বর। কিন্তু এগুলোর মাঝে ঈশ্বরের চিরন্তন বাক্য আছে। কাজেই খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু যদি ঈশ্বরের মানব অবতার (Incarnation) হয়ে থাকেন, তাহলে ঐ একই যুক্তিতে বাইবেলও ঈশ্বরের কিতাব অবতার হবে!
বিভিন্ন যুক্তি প্রয়োগ করে যিশু খ্রিষ্টকে যেভাবে অসৃষ্ট ও চিরন্তন তথা ‘ঈশ্বর’ বানানো হয়, ঐ একই যুক্তি দ্বারা বহু জায়গায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। এখানে এর একটি নমুনা দেখানো হলো। খ্রিষ্টান প্রচারকগণ এখানে হয়তো বলতে পারেনঃ বাইবেলকে কি কেউ কখনো উপাসনা করেছে? এমন ব্যাখ্যা তো কেউ করেনি! এই কথার সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত।এবার আমরা তাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো খ্রিষ্ট ধর্মের ১ম ৩০০ বছরে বিশেষ করে ১ম ১০০ বছরের মধ্যে যিশু খ্রিষ্টের প্রকৃতি সম্পর্কে প্রাচীন খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস কী ছিলো সেটি অধ্যায়ন করতে। সেই বিশ্বাসের সাথে এখনকার খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসের মিল কতোটুকু, বা অমিল কতোটুকু সেটিও যাচাই করতে। তাহলে সত্য বেরিয়ে আসবে। সরলভাবে অর্থ নেয়া হলে এবং ভুল যুক্তি প্রয়োগ না করা হলে বাইবেল বা যিশু কেউই ঈশ্বর প্রমাণ হন না। ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে বাইবেলে বিভিন্ন স্থানে যিশুকে সরাসরি ঈশ্বরের সৃষ্টি বলে অভিহীত করা হয়েছে।অনেক খ্রিষ্টান প্রচারক অপযুক্তি প্রয়োগ করে কুরআনের আয়াত থেকে ঈসা(আ.)কে অসৃষ্ট এবং আল্লাহর সমান প্রমাণের চেষ্টা করেন। এ প্রসঙ্গে প্রাচীন মুসলিম উলামাদের ব্যাখ্যা কী ছিলো তা আমরা এই প্রবন্ধের শুরুতেই আলোচনা করেছি। মুসলিম উম্মাহর নিকট সালাফদের এবং ইমামদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংরক্ষিত আছে। কাজেই অজ্ঞ মুসলিম বাদে অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করা এতো সহজ নয়। আমরা সকলকেই আহ্বান জানাই প্রাচীন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণগুলো অধ্যায়ন করতে। এর ফলে সত্য খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
উপসংহারঃ
সমগ্র আলোচনার সারাংশ উল্লেখ করে প্রবন্ধটির উপসংহার টানছি।
১। আল কুরআনের স্পষ্ট উক্তি থেকে থেকে প্রমাণিত যে ঈসা(আ.) আল্লাহর বান্দা এবং ধ্বংসশীল। চিরন্তন বা অসৃষ্ট নন।
২। আল কুরআনের প্রাচীন মুফাসসিররা ঈসা(আ.) এর ‘আল্লাহর কালিমা’ হওয়া সংক্রান্ত আয়াত থেকে কখনো এটি ব্যাখ্যা করেননি যে ঈসা(আ.) অসৃষ্ট বা চিরন্তন। আজ পর্যন্ত কোনো মুসলিম দল এ আয়াত থেকে ঈসা(আ.)কে অসৃষ্ট বলে বোঝেনি বা ঈসা(আ.) এর উপাসনা করেনি। ১৪০০ বছর পরে খ্রিষ্টান প্রচারকদের মনগড়া নতুন ব্যাখ্যা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণের কোনো ভিত্তি নেই।
৩। বাইবেলে থেকেও প্রমাণিত যে যিশু খ্রিষ্ট সৃষ্ট। চিরন্তন নন। আর সৃষ্ট কেউ কখনো ঈশ্বর নয়।
৪। যোহন ১ম অধ্যায় থেকেও যিশু ঈশ্বর বলে প্রমাণিত হন না।
৫। যিশুকে ঈশ্বরের বাক্য বলা হয়েছে কাজেই যিশু ঈশ্বর - এই অপযুক্তি প্রয়োগ করা হলে খ্রিষ্টান প্রচারকদের নিকট তাদের যুক্তি অনুযায়ী বাইবেলও ঈশ্বরে পরিগণিত হওয়া উচিত।
তথ্যসূত্রঃ
[1] বাইবেল, যোহন (John) ১ : ১, ১৪
[2] আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ৪৫
[3] তাফসির তাবারী, ৫ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা আলি ইমরানের ৪৫ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৩৯০
[4] তাফসির তাবারী, ৫ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা আলি ইমরানের ৪৫ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৩৯০-৩৯১
[5] আল কুরআন, আ’রাফ ৭ : ১৩৭
[6] আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ৪৭
[7] আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ৫৯
[8] আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১১৭
[9] আল কুরআন, ইয়া-সিন ৩৬ : ৮২
[10] আল কুরআন, মুমিন (গাফির) ৪০ : ৬৮
[11] আল কুরআন, মারইয়াম ১৯ : ৩৫
[12]সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪৬
[13] আল কুরআন, মারইয়াম ১৯ : ৩৫
[14] আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ৫৯
[15] আল কুরআন, সোয়াদ ৩৮ : ৭২
[16] আল কুরআন, নিসা ৪ : ১৭১
[17] আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ : ১৭
[18] আল কুরআন, নিসা ৪ : ১৫৯
[19] বিস্তারিত দেখুনঃ তাফসির যাকারিয়া, সুরা নিসার ১৫৯ নং আয়াতের তাফসির
[20] আল কুরআন, নিসা ৪ : ১৭১
[21] আল কুরআন, নিসা ৪ : ১৭২
[22] আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ : ৭৫
[23] আল কুরআন, মারইয়াম ১৯ : ৩০-৩৭
[24] তাফসির সা’দী, ২য় খণ্ড (ইংরেজি), সুরা নিসার ১৭১ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৩৩৮-৩৩৯
[25] “The Lion of Allaah, Hamzah ibn Abdul-Muttalib - Islamweb - Fatwas”
[26] তাফসির তাবারী, ৫ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা আলি ইমরানের ৪৫ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৩৯১
[27] বাইবেল, কলসীয় (Colossians) ১ : ১৫-১৬
https://www.bible.com/bible/3150/COL.1.BERV
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Colossians+1%3A15-16&version=RSV
মূল গ্রীক ও এর অর্থ যাচাই করতে দেখুনঃ
[28] দেখুনঃ বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ১ : ২৭
“পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।” (Carey)
“So God created man in his own image, in the image of God he created him; male and female he created them.” (RSV)
https://www.bible.com/bible/1791/GEN.1.27.ROVU
https://www.biblegateway.com/passage/?search=genesis+1%3A27&version=RSV
মূল গ্রীক ও এর অর্থ যাচাই করতে দেখুনঃ
[29] বাইবেল, রোমীয় (Romans) ৮ : ২৯
https://www.bible.com/bible/3150/ROM.8.BERV
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Romans+8%3A29&version=RSV
এই পদের মূল গ্রীক ও এর অর্থ যাচাই করতে দেখুনঃ
[30] বাইবেল, প্রকাশিত বাক্য (Revelation) ৩ : ১৪
https://www.bible.com/bible/1791/REV.3.ROVU
https://www.biblegateway.com/passage/?search=revelation+3%3A14&version=RSV
[32] Arianism: Definition, History, & Controversy - Encyclopædia Britannica
[33] Theodosius Issued an Edict - 301-600 Church History Timeline
[34] ■ Ebionites - Hartog - 2011 - Major Reference Works - Wiley Online Library
https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/9780470670606.wbecc0468
■ Ebionites - New World Encyclopedia
https://www.newworldencyclopedia.org/entry/Ebionites
■ Ebionites _ Encyclopedia.com
https://www.encyclopedia.com/philosophy-and-religion/christianity/christianity-general/ebionites
[35] “Subordinationism is a trinitarian doctrine that regards the Son and the Holy Spirit as sub-ordinate to the Father with respect to the Father's deity. Some early Christian theologians, including Tertullian and Origen, held that the Son was subordinate to the Father because they emphasized the monarchy of the Father in the Godhead. These theologians set the stage for the important debates about subordinationism that took place in the 3rd and 4th centuries. Subordinationists argued that a fully divine Son would imperil the monarchy of the Father, and they believed that any distribution of the divine substance to more than one person would indicate that God is both divisible and subject to change. As a result, they held that any person other than the Father must be created by the Father and subordinate to him. They thus argued that the Son was begotten by the Father as the firstborn of creation before time, that the Son is thus subordinate to the Father in every respect, and that the Father is the only person of the Trinity who is God in the fullest sense. This view was rejected as heresy at the Council of Nicaea in 325, which declared that the Son is not a creature but is eternally begotten from the Father. As such, the Son is as fully divine as the Father and worthy of the same worship the Father receives.”
https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/9780470670606.wbecc1327 অথবা https://archive.is/SIrt1
আরো দেখুনঃ
https://www.researchgate.net/publication/319323842_Subordinationism অথবা https://archive.is/86iAL
[36] “… Shortly after he came to the Imperial throne, Theodosius ended the Arian dispute by the simple expedient of issuing an edict. On this day February 27, 380 (some historians say 381) this edict commanded everyone to be a Christian--but not just any kind of Christian. A Catholic Christian, it said, was one who held that the Father, Son and Holy Spirit are one Godhead and equal in majesty. This, of course, was the position of the Nicene Creed. Theodosius' decision was the result of his upbringing: he was reared in a Christian home, perhaps the first emperor to enjoy that distinction. (His behavior wasn't always Christian, however, as the premeditated massacre of thousands of civilians at Thessalonica showed in 390).
The following year, Theodosius issued another edict specifically requiring worship of the one God according to the Nicene Creed. Theodosius deposed Demophilus of Constantinople an Arian bishop and replaced him with a trinitarian.
These laws (Theodosian Codes 16.1.2 and 16.5.6) are significant for many reasons. They mark the first time the legal code coerced people to become Christians. They made orthodox catholic Christianity the official dogma of the church and suppressed the Arian factions. The laws established a pattern which would become more pronounced as Theodosius' reign progressed of using the apparatus of the state to suppress diversity of religious opinion. The church can only regret that before all was done, people calling themselves Christians persecuted pagans, Arians, Manichees, and Jews….”
[37] “When Was Jesus Created, and Why Is He Called God’s Son” (Jehovah’s Witnesses)
https://www.jw.org/en/library/magazines/wp20130301/when-jesus-created-why-son/
[38] এ সংক্রান্ত তাদের একটি প্রবন্ধ থেকে কিছু লাইন হুবহু উল্লেখ করছি যেখানে ত্রিত্ববাদীরা কিভাবে অইস্রায়েলীয় এবং অবাইবেলীয় উৎস গ্রীক দর্শন ব্যবহার করে কিতাব অপব্যাখ্যা করে এর উল্লেখ রয়েছেঃ
“… According to The Expositor’s Greek Testament, to understand Revelation 3:14 as meaning that Jesus is “the active source” of creation, rather than the first created person, one must interpret arkhé “as in Greek philosophy and [non-Biblical] Jewish wisdom-literature,=aitía or origin.” The inspired Bible writers, however, never borrowed ideas from Greek philosophy.”
[39] বাইবেল, যোহন (John) ১ : ১, ১৪
https://www.wordproject.org/bibles/ben/43/1.htm
https://www.biblegateway.com/passage/?search=John+1%3A1%2C14&version=NRSV
[40] ΚΑΤΑ ΙΩΑΝΝΗΝ 1:1 (John 1:1) - Biblegateway.com
https://www.biblegateway.com/passage/?search=john+1%3A1&version=SBLGNT
[41] Three Graduated Courses In New Testament Greek
http://www.ntgreek.net/lesson13.htm
আরো দেখুনঃ Greek Articles (YouTube)
[42] বাইবেল, যাত্রাপুস্তক (Exodus) ৭ : ১
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Exodus+7%3A1&version=KJV
[43] বাইবেল, যোহন (John) ১ : ১৮
[44] ২ করিন্থিয় ৪:৪ এর বিভিন্ন ইংরেজি ভার্সন দেখুন এখান থেকেঃ
https://biblehub.com/2_corinthians/4-4.htm
এখানে “Aramaic Bible in Plain English” বাদে আর সকল ভার্সনে ‘god’ অনুবাদ করা হয়েছে।
[45] ‘2001 Translation - An American English Bible’, John 1:1
[46] ‘Archbishop Newcome’s New Testament’ (Improved Version 1809), John Chapter 1, Page 200
https://archive.org/details/newtestamentinim00newc/page/200/mode/2up
[47] ‘The Wilton Translation of the New Testament’, John Chapter 1, Page 125
[48] ‘The New Testament, An American Translation, John Chapter 1, Page 193
[49] ‘The four Gospels - Charles Cutler Torrey’, John Chapter 1, Page 183
https://archive.org/details/fourgospels00torruoft/page/182/mode/2up
[50] "The New Testament : a new translation - James Moffatt", John Chapter 1, Page 113
https://archive.org/details/newtestamentnewt01moff/page/112/mode/2up
[57] The Glory as of the only begotten of the Father - A defense of John 1:18 as found in the Authorized King James Bible by Jesse M. Boyd, Page 4
[58] Bible Q _ “Only begotten Son” or “only begotten God”_ (John 1_18)
[59] এই চার্চ ফাদারদের বিস্তারিত উদ্ধৃতিগুলো এবং এর সময়কাল দেখুন এখান থেকেঃ
John 1_18 - Textus Receptus
http://textus-receptus.com/wiki/John_1:18#Church_Fathers
আরো দেখুনঃ https://is.gd/chJ6bD অথবা https://archive.is/fLr1y
[60] John 1_18, REV Bible and Commentary
[61] ‘Textual Commentary on the Greek New Testament’ by Bruce M. Metzger, Page 198
আরো দেখুনঃ Bible Q _ “Only begotten Son” or “only begotten God”_ (John 1_18)
[62] 'An Aramaic Approach to the Gospels and Acts' 3rd Edition By Matthew Black, Page 11
[63] The only true God early christian monotheism in its jewish context by James Frank McGrath, Page 65
[64] ‘The Vocabulary of The Greek New Testament’ by James H. Moulton (D.D.), George Milligan (D.D.), Page 416-416
[66] ▪ The Bible is the Word of God - UnderstandChristianity.com
https://www.understandchristianity.com/basic-teachings-of-christianity/the-bible-is-the-word-of-god/
▪ The Bible Contains the Word of God (Crossroad Christian Academy)
https://www.ccapanama.org/academics/the-bible-contains-the-word-of-god/
▪ Is the Bible the Word of God_ 5 Evidences (christianity.com)
▪ Is the Bible truly God’s Word_ _ GotQuestions.org