নাস্তিক প্রশ্নঃ কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা আল্লাহ ও তাঁর নবীর পছন্দ নয় (কুরআন ৫:১০১, ৫:১০২)! কেন এই চিন্তার পরাধীনতা? এর কারণ কি এই যে তাতে করে ধর্মের মিথ্যা দিকগুলো প্রকাশ হয়ে যেতে পারে?
উত্তরঃ আল কুরআনে বলা হয়েছে—
অর্থঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। আর কুরআন নাযিলের সময় তোমরা যদি সেসব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে। অতীত বিষয় আল্লাহ ক্ষমা করেছেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল। তোমাদের আগেও এক সম্প্রদায় এ রকম প্রশ্ন করেছিল; তারপর তারা তাতে কাফির হয়ে গিয়েছিল।” [1]
কুরআনে যে প্রসঙ্গে আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে তার ধারেকাছেও না গিয়ে বিকৃতভাবে আয়াতগুলো ‘তাফসির’(?) করেছেন অভিযোগকারী নাস্তিক-মুক্তমনা সম্প্রদায় এবং ভুল উপসংহারে পৌঁছেছেন। আলোচ্য আয়াতসমূহ নাযিল হবার প্রেক্ষাপট সহীহ হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি।
আলোচ্য আয়াতসমূহে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহর বিধি-বিধানে অনাবশ্যক চুলচেরা ঘাটাঘাটি করতে আগ্রহী হয়ে থাকে এবং যেসব বিধান দেয়া হয়নি সেগুলো নিয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন তুলতে থাকে। ...রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী ঐ ব্যক্তি যে এমন বস্তু সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে যা হারাম করা হয়নি। অতঃপর তার প্রশ্ন করার কারণে তা হারাম করে দেয়া হয়েছে।” [2]
আলোচ্য আয়াতসমূহের শানে নুযুল এই যে, যখন হজ ফরয হওয়া সম্পর্কিত আদেশ নাযিল হয় তখন আকরা ইবন হাবেস(রা.) প্রশ্ন করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাদের জন্য কি প্রতি বছরই হজ করা ফরয? তিনি[রাসুলুল্লাহ(ﷺ)] এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন - না। প্রশ্নকারী পুনর্বার প্রশ্ন করলেন। তিনি তবুও চুপ। প্রশ্নকারী ৩য় বার প্রশ্ন করলে তিনি শাসনের সুরে বললেন, যদি আমি তোমার উত্তরে বলে দিতাম যে - হ্যাঁ প্রতি বছরই হজ ফরয, তবে তাই হয়ে যেত। কিন্তু তুমি এ আদেশ পালন করতে পারতে না। অতঃপর তিনি বললেন, যেসব বিষয় সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে কোন নির্দেশ দেই না, সেগুলোকে সেভাবেই থাকতে দাও-ঘাটাঘাটি করে প্রশ্ন করো না। তোমাদের পূর্বে কোন কোন উম্মত বেশি প্রশ্ন করে সেগুলোকে ফরয করিয়ে নিয়েছিল এবং পরে সেগুলোর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়েছিল। আমি যে কাজের আদেশ দেই, সাধ্যানুযায়ী তা পালন করা এবং যে কাজ নিষেধ করি, তা পরিত্যাগ করাই তোমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত। [3]
ইমাম বুখারী(র.) বর্ণণা করেছেন যে, ইবন আব্বাস(রা.) বলেছেনঃ কিছু লোক রাসুল(ﷺ)কে হাস্য-কৌতুক করে মাঝে মাঝে অহেতুক প্রশ্ন করত। যেমন একজন জিজ্ঞেস করলঃ আমার পিতা কে? [4] অন্য একজন প্রশ্ন করলঃ আমার উটটি কোথায় রয়েছে, যে উটটি হারিয়ে গেছে? তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতটি নাজিল করেন। [5]
অর্থাৎ আলোচ্য আয়াতে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের কথাই শুধু বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ও ভালো প্রশ্নের কথা বলা হয়নি। ইসলামের প্রাথমিক যুগে শরিয়ত পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তখন অধিক ও অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের দ্বারা শরিয়তে কঠোরতা আরোপের সম্ভাবনা ছিল। আল্লাহ তাঁর শরিয়তকে পূর্ণাঙ্গ করবেন, এ জন্য তাদেরকে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন না করে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। তা ছাড়া অনর্থক অপ্রয়োজীয় প্রশ্ন করাকে সুস্থ বিবেকও সমর্থন করে না।
এ আয়াত প্রসঙ্গে মুফাসসিরগণ আরো একটি হাদিস উল্লেখ করে থাকেনঃ
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেনঃ “মুসলিম হওয়ার একটি সৌন্দর্য এই যে, মুসলিম ব্যক্তি অনর্থক বিষয়াদি পরিত্যাগ করে।” [6]
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর একটি হাদিস দ্বারাই ইসলামবিরোধীদের অপপ্রচারের অপনোদন হয়ে যায়ঃ
“...অজ্ঞতার প্রতিষেধকক কি জিজ্ঞাসা করা নয়?...” [7]
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কি প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দিতেন না?
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় কেটেছে সাহাবায়ে কিরাম(রা.) এর প্রশ্নের জবাব দিয়ে। শুধু তাই নয়, অন্য ধর্মের লোক যেমনঃ ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের প্রশ্নের উত্তরও দিতেন তিনি। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রশ্নগুলো হত আসমানী কিতাবভিত্তিক যেগুলোর উত্তর কেবল নবীদেরই জানা। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাদের করা সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে এত পরিমাণ রেওয়ায়েত আছে যে সব উল্লেখ করলে একটা বই হয়ে যেতে পারে। এ রকম একটা বিবরণ উল্লেখ করছি। --
ইহুদিরা পরীক্ষার্থে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে বলেছিলঃ যদি আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী হন, তবে বলুন ইয়াকুব পরিবার শাম (বৃহত্তর সিরিয় অঞ্চল) থেকে মিসরে কেন স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং ইউসুফ(আ.) এর ঘটনা কী ছিল? প্রত্যুত্তরে ওহীর(সুরা ইউসুফ) মাধ্যমে পূর্ণ কাহিনী অবতারণ করা হয়।...তিনি[মুহাম্মাদ(ﷺ)] ছিলেন নিরক্ষর এবং জীবনের প্রথম থেকেই মক্কায় বসবাসকারী। তিনি কারো কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেননি এবং কোন গ্রন্থও পাঠ করেননি। এতদসত্ত্বেও তাওরাতে বর্ণিত আদ্যোপান্ত ঘটনাটি বিশুদ্ধরূপে বর্ণণা করে দেন। বরং এমন কিছু বিষয়ও তিনি বর্ণণা করেন যেগুলো তাওরাতে উল্লেখ ছিল না। [8]
নবী(ﷺ)কে সাহাবী(রা.) গণ ও অন্যরা যে সব প্রশ্ন করতেন সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো এভাবেই আল্লাহ তা’আলা ওহী আকারে নাজিল করে দিতেন। একদিন এক সাহাবী(রা.) নবী(ﷺ)কে আল্লাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আয়াত নাজিল হল—
“আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে [তাদেরকে বল], নিশ্চয়ই আমি তো নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে - তাহলেই তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হতে পারবে।” [9]
লোকেরা রাসুল(ﷺ) এর কাছে হালাল-হারাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে নাজিল হল—
“তারা তোমাকে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] জিজ্ঞেস করে - তাদের জন্য কী কী হালাল করা হয়েছে? তুমি বলঃ পবিত্র জিনিসগুলো তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী তোমরা যে সমস্ত পশু-পাখিকে শিকার করা শিক্ষা দিয়েছ; তারা যা শিকার করে আনে তা তোমরা খাও এবং ওগুলোকে শিকারের জন্য পাঠানোর সময় আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।” [10]
সম্পদ কিভাবে ব্যয় করা হবে, এ বাপারে নবী(ﷺ)কে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে আয়াত নাজিল হয়---
“তারা তোমাকে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] জিজ্ঞেস করছে - তারা কিরূপে ব্যয় করবে? তুমি বলঃ তোমরা ধন সম্পত্তি হতে যা ব্যয় করবে তা মাতা-পিতার, আত্মীয়-স্বজনের, পিতৃহীনদের, দরিদ্রদের ও পথিকবৃন্দের জন্য কর; এবং তোমরা যে সব সৎকাজ কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তা সম্যক রূপে অবগত।” [11]
ইয়াতীমদের সাথে আচরণের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দিয়ে নাজিল হয়—
“... তারা তোমাকে ইয়াতীমদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলঃ তাদের হিত সাধন করাই উত্তম; ...” [12]
চাঁদের দৃশ্যমান হ্রাস-বৃদ্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর এলো---
"তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজের সময় ঠিক করার মাধ্যম। ..." [13]
কিয়ামতের সময়ে পাহাড়ের পরিনতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জবাব এলো---
“আর তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, আমার প্রভু এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। তারপর তিনি তাকে মসৃণ সমতলভূমি করে দেবেন। তাতে তুমি কোন বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না।” [14]
যুলকারনাঈন বাদশাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দিয়ে আয়াত নাজিল করা হল---
"আর তারা তোমাকে যুলকারনাঈন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। বল, “আমি এখন তার সম্পর্কে তোমাদের নিকট বর্ণনা দিচ্ছি।”
আমি তাঁকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায় ও পন্থা নির্দেশ করেছিলাম। অতঃপর সে একটি পথ ধরল। চলতে চলতে যখন সে সূর্যের অস্তগমনে পৌঁছল তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল। আমি [আল্লাহ] বললামঃ “হে যুলকারনাঈন, তুমি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারো অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারো।” সে বলল, “যে ব্যক্তি যুলুম করবে, আমি অচিরেই তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তাকে তার প্রভুর নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। তখন তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দেবেন। তবে যে ব্যক্তি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। আর আমি আমার ব্যবহারে তার সাথে নরম কথা বলব।”
আবার সে এক পথ ধরল। চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয়ে পৌঁছল তখন সে দেখলো - ওটা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদিত হচ্ছে যাদের জন্য সূর্য তাপ হতে আত্মরক্ষার কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করিনি। প্রকৃত ঘটনা এটাই। আর তার নিকট যা ছিল, আমি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত।
আবার সে এক পথ ধরল। অবশেষে যখন সে দুই পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল, তখন সেখানে সে এমন এক জাতিকে পেল, যারা তার কথা তেমন একটা বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, “হে যুলকারনাঈন! নিশ্চয় ইয়া’জুজ ও মা’জুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। তাই আমরা কি আপনাকে এ জন্য কিছু খরচ দেব যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটা প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন?” সে বলল, “আমার প্রভু আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, সেটাই উত্তম। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। ... ... " [15]
আল কুরআনে এমন আরো অনেক আয়াত আছে যেখানে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এবং অন্যান্যদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হয়েছে। [16] এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে ইসলাম প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের বিরুদ্ধে নয়। ইসলামবিরোধীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও অমূলক।
ইসলাম কি অজানাকে জানা, জ্ঞান অনুসন্ধান এসব বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলে? কুরআন কি মানুষের চিন্তাকে পরাধীন করে?
আল কুরআনে অনেক আয়াত আছে যা আল্লাহর সৃষ্টি ও নিদর্শন সম্পর্কে মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করতে বলে। উদাসীন মানুষকে চিন্তা–গবেষণার অনুপ্রেরণা দেয়। প্রাথমিক যুগের মুসলিমরা আক্ষরিকভাবেই এসব আয়াতের উপর আমল করতেন। ইউরোপে যখন অন্ধকার যুগ ছিল, তখন মুসলিম বিশ্ব থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো বিশ্বে ছড়িয়েছে। ইসলাম যদি মানুষের চিন্তাকে পরাধীনই করত, তাহলে এমন কিছু হতে পারত না।
“…এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন-যাতে তোমরা চিন্তা কর।” [17]
“নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেছেন, তা দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার, যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।” [18]
“নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে।” [19]
“আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে অর্ন্তদৃষ্টি-সম্পন্ন লোকদের জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।” [20]
“ তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
তাঁর আরও নিদর্শনঃ রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয়ই এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
তাঁর আরও নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ - ভয় ও ভরসার জন্যে। এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর এর দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।“ [21]
“ আমি আকাশমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এগুলো যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না।” [22]
“ পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ কিতাব [আল কুরআন]। নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে বিশ্বাসীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। আর তোমাদের সৃষ্টিতে এবং চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীব জন্তুর সৃজনের মধ্যেও নিদর্শনাবলী রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য। দিবারাত্রির পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।“ [23]
“তিনি আল্লাহ যিনি সমুদ্রকে তোমাদের উপকারার্থে আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর আদেশক্রমে তাতে জাহাজ চলাচল করে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমণ্ডলে ও যা আছে ভূমণ্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।“ [24]
“তারা কি লক্ষ্য করে না, তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পাখিদের প্রতি, যারা পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ব-বিষয় দেখেন। ” [25]
“ তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে বিছানো হয়েছে?” [26]
এরপরেও, এটা কীভাবে বলা সম্ভব যে, ইসলাম আমাদেরকে জ্ঞান অন্বেষণ থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেয়? আল্লাহ তা’আলাই তো স্বয়ং কুরআন মাজিদে আমাদেরকে একটি দু’আ শিখিয়ে দিয়েছেন-
رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
অর্থঃ “…বলঃ হে প্রভু, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।” [27]
এভাবেই মহান আল্লাহ মানুষের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, মানুষকে ভাবনা-চিন্তার খোরাক দিয়েছেন, যাতে তারা আপন স্রষ্টাকে চিনতে পারে। সংশয়বাদীরা কি নিজ চিন্তাশক্তির প্রয়োগ ঘটাবে? চেনার চেষ্টা করবে তাদের স্রষ্টাকে? সময় শেষ হবার আগেই কি তারা আসবে অন্ধকার থেকে আলোতে?
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল কুরআন, মায়িদাহ ৫:১০১-১০২
[2] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৭২৮৯, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৩৫৮
[3] সহীহ মুসলিম ১৩৩৭, কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, ১ম খণ্ড, সুরা মায়িদাহ এর ১০১ নং আয়াতের তাফসির,পৃষ্ঠা ৬০১-৬০২
[4] ■ অপর এক বর্ণণায় এটি উল্লেখ আছে যে নবী(ﷺ) তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলেছেনঃ “তোমার পিতা হচ্ছেন হুজাফাহ।”
[তাবারী ১১/১০০, ফাতহুল বারী ১৩/৪৭]
■ "আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্(ﷺ) -কে কতকগুলো বিষয়ে প্রশ্ন করা হল যা তিনি অপছন্দ করলেন। লোকেরা যখন তাঁকে অধিক অধিক প্রশ্ন করতে লাগল, তিনি রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হল হুজাফাহ। এরপর আরেকজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শায়বাহর আযাদকৃত গোলাম সালিম। উমার(রা.) রাসুলুল্লাহ্(ﷺ)-এর চেহারায় রাগের আলামত দেখে বললেন, আমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ করছি"
[সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৬৭৯৩ ]
[5] ফাতহুল বারী ৮/১৩০, তাফসির ইবন কাসির(হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী), ২য় খণ্ড, সুরা মায়িদাহর ১০১-১০২ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৭৬২
[6] তিরমিযি ২৩১৭, ইবন মাজাহ ৩৯৭৬
[7] সহীহ আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম, পরিচ্ছেদঃ ক্ষত স্থানে তায়াম্মুম করা; হাদিস নং-৩৩৬
[8] ■ তাফসিরে মা’আরিফুল কুরআন, ৫ম খণ্ড, সুরা ইউসুফের ‘তাফসিরের সার-সংক্ষেপ’ অংশ, পৃষ্ঠা ৩-৪
■ আরো দেখুনঃ "সুরা ইউসুফ নাযিল হওয়ার সময়-কাল ও নাযিল হওয়ার কারণ" - 'শব্দার্থে আল কুরআনুল মজীদ' [অনুবাদকঃ মতিউর রহমান খান], ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫
[9] আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১৮৬
[10] আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ : ৪
[11] আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ২১৫
[12] আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ২২০
[13] আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১৮৯
[14] আল কুরআন, ত্ব-হা ২০ : ১০৫-১০৭
[15] আল কুরআন, কাহফ ১৮ : ৮৩-৯৫
[16] দেখুনঃ আল কুরআন, সুরা বাকারাহ ২ : ২১৭, ২১৯, ২২২, নিসা ৪ : ১২৭, আ’রাফ ৭ : ১৮৭, আনফাল ৮ : ১, ইসরা(বনী ইস্রাঈল) ১৭ : ৮৫, আহযাব ৩৩ : ৬৩ ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর তাফসির দেখুন ইবন কাসির অথবা অন্য কোন তাফসির গ্রন্থ থেকে।
[17] আল কুরআন, বাকারাহ ২:৭৩
[18] কুরআন, বাকারাহ ২:১৬৪
[19] আল কুরআন, আলি ইমরান ৩:১৯০
[20] আল কুরআন, নুর ২৪:৪৪
[21] আল কুরআন, রুম ৩০:২২-২৪
[22] আল কুরআন, দুখান ৪৪:৩৮-৩৯
[23] আল কুরআন, জাছিয়াহ ৪৫:২-৫
[24] আল কুরআন, জাছিয়াহ ৪৫:১২-১৩
[25] আল কুরআন, মুলক ৬৭:১৯
[26] আল কুরআন, গাশিয়াহ ৮৮:১৭-২০
[27] আল কুরআন, ত্ব-হা ২০:১১৪