পশ্চিমবঙ্গের এক পাঠক মেসেঞ্জারে উপরের ছবিটা পাঠালেন। নাস্তিকরা নাকি এই ছবি নিয়ে খুব আত্মশ্লাঘায় ভুগছে। ছবিটি প্রচার করে তারা বুক ফুলিয়ে বলছে, মসজিদ-মাদ্রাসা-মন্দির-গীর্জা সব বন্ধ! সবাই তাকিয়ে আছে বিজ্ঞানের দিকে, কবে একটা ভ্যাক্সিন আসে। ধর্ম এখন বিজ্ঞানের ভরসায়!
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তাদের কাছে বিজ্ঞান হলো অ্যাসক্লেপিয়াসের মতো কোনো দেবতা। জিউস যাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। কেন? চিকিৎসার কল্পিত দেবতা অ্যাসক্লেপিয়াস যদি সব মানুষকে অমর বানিয়ে দেয় তাহলে কী হবে? এই দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে সামলাতে না পেরে বজ্রাঘাতে তাকে বিদায় করে দেয় জিউস। তারা ভাবে, ধার্মিকেরাও জিউসের মতো বিজ্ঞানের উপর খড়গসহস্ত হতে চায়। কিন্তু এখন বিপদে পড়ে বিজ্ঞানের দ্বারস্ত হয়েছে ধর্ম। নাস্তিকদের কাছে বিজ্ঞান যেন নবধর্ম, বিজ্ঞানীরা হলো পীর/পুরোহিত/যাজক, আর প্রকৃতি হলো দেবতা—ফাইসিস বা আর্টেমিসের মত! বিজ্ঞান নাস্তিকদের কাছে দেবতাতুল্যই বলা যায়। যদিও বিজ্ঞানের সাথে নাস্তিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। (সাইন্টিফিক আমেরিকানের আর্টিকেল)
যাই হোক, এবার মূল কথায় আসি। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্যানডেমিক বিস্তারে সবাই আতঙ্কিত। [এই প্রবন্ধটি রচনাকালে] বিভিন্ন দেশে এই COVID-19 রোগের চিকিৎসা, প্রতিষেধক খুঁজতে মরিয়া হয়ে গবেষণা চলছে। ভরসা করার মতো তেমন কোনো ফলাফল এখনো মেলেনি। একেক গবেষণায় একেক কথা আসছে। মানুষ হচ্ছে বিভ্রান্ত! আমেরিকার প্রেসিডেন্ট খেয়ালের বশে দুইটি ওষুধের নাম বলে ইমেজ রক্ষা করতে চেয়েছেন। পরে একজন ঐ ওষুধ খেয়ে মরেছেও! এই বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ে রোগের বিস্তার ঠেকাতে আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন তথা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং (সামাজিক দুরত্বায়ন) এর উপর কঠোর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে মসজিদ-মাদ্রাসা-মন্দির-গীর্জা ইত্যাদি বন্ধ করা সামাজিক দূরত্বায়নের অংশ। অন্য ধর্মের ব্যাপারে এ ব্যাপারে কি বলা আমার জানা নেই, তবে ইসলামে সামাজিক দূরত্বায়ন (কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেশন) নবীর সময় থেকেই চর্চা করা হয়েছে, হাদিসে এ বিষয়ে নির্দেশনাও আছে। পশ্চিমে কোয়ারেন্টাইনের চর্চা শুরু হয়েছে ১৩০০ সালের দিকে, আর মুসলিম ভূখণ্ডে শুরু হয়েছে ৭ম শতক থেকে!
২য় ব্যাপার হলো চিকিৎসাক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে। ইসলামের ইতিহাসে কুরআন ও হাদিসে থাকা নির্দেশনার অনুপ্রেরণা পেয়েই মুসলিম বিজ্ঞানীরা মেডিসিন, সার্জারি, হাসপাতাল তৈরিতে একসময় সারা পৃথিবীর অগ্রগামী ছিলো। রোগের ওষুধ বের করা, রোগীর সেবা করা আমাদের কাছে ইবাদত পর্যায়ের কাজ। পশ্চিমা গবেষকদের থেকেও এই বাস্তবতার স্বীকৃতি পাওয়া যায়। অ্যাকাডেমিক পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত বইতে জোনাথান লিয়ন লিখেন :
“Koranic injunction on the need to heal the sick, meanwhile, spurred enormous gains in medicine and the creation of advanced hospitals, complete with such innovations as specialised wards, regular doctors’ rounds, free health care for indigent patients, and humane treatment of the insane. Grounding their work in Greek learning initially passed along by Nestorian Christians fleeing Byzantine religious persecution, the Arabs went on to develop new medicines and new methods for preparing the active ingredients of these drugs. They made important discoveries in the field of vision and optics and advances in surgery. Revealing an early and growing recognition of germs and other disease pathways, the authorities chose to base Baghdad’s main hospital at a site where tests had shown that raw meat putrefied most slowly.
Major medical schools were established in Damascus, Baghdad, Cordoba, and Cairo… Unlike the medieval Christian West, which tended to view illness and disease as divine punishment, the Arab physicians looked for imbalances or other physical causes that could be treated as part of their religious mission.”
-- JONATHAN LYONS, THE HOUSE OF WISDOM: HOW ARAB LEARNING TRANSFORMED WESTERN CIVILIZATION; CHAPTER 4 (BLOOMSBURY PUBLISHING)
সুতরাং ধর্ম বিজ্ঞানের ভরসায় এ কথা ইসলামের জন্য ঠিক না, বরং ধর্মই বিজ্ঞানযাত্রাকে অনুপ্রাণিত করেছে এই বাস্তবতাই ঐতিহাসিকভাবে সঠিক। এই বাস্তবতা স্বীকার করার সৎসাহস কি অনলাইন নাস্তিক্যবাদী এক্টিভিস্টদের আছে? সত্য স্বীকার করতে বরাবরই তাদেরকে গড়িমসি করতে দেখা যায়। আমরা বলবো, এদের এ সকল প্রচারণাকে গুরুত্ব দিয়ে সময় নষ্ট করা বাদ দিয়ে নিজেকে ডেভলপ করাই ভালো।