♦ সংশয় নিরসনঃ মহামারী কিভাবে ঢুকলো মদীনায়?
♦ হাদিস কি তাহলে ভুল সাব্যস্ত হলো?
♦করোনা ভাইরাস কিভাবে মদীনায় প্রবেশ করলো
প্রশ্নঃ
عن أبي هريرة لا يَدْخُلُ المَدِينَةَ المَسِيحُ ولا الطّاعُونُ
অনুবাদঃ রাসুল(ﷺ) বলেছেন, মদীনায় দাজ্জাল ও মহামারী প্রবেশ করবে না।
[সহিহ বুখারী- হাদিস নং-৫৭৩১]
কিছু দুর্বল হাদিসে মক্কার ব্যাপারেও বলা হয়েছে।
[নববী, আল-আযকার – পৃষ্ঠাঃ ১৩৯]
তাহলে কি রাসুল(ﷺ) এর কথা অসত্য প্রমাণ হলো? (নাউযুবিল্লাহ)
জবাবঃ
এই মাসয়ালা বুঝতে হলে, দুটি বিষয় প্রথমে খেয়াল করতে হবে। আরবীতে মহামারী বোঝাতে ২ টি শব্দ ব্যবহার হয়ঃ
(১) ত্বউন (الطاعون) মহামারী
(২) ওয়াবা (الوباء) মহামারী
১নং- "ত্বউন" – হলোঃ
(খাছ) বিশেষ প্রকারের এক ধরনের মহামারী, যে মহামারীতে শরীরে বড় বড় ফোঁড়া দেখা যায় যেমন ফোঁড়া উটের গায়ে হয়।
রাসুল(ﷺ) কে যখন জিজ্ঞেস করা হয় "ত্বউন" কী? তখন তিনি উত্তর বললেন, উটের ফোঁড়ার ন্যায় যা শরীরে-বগলে বের হয়।
عن عائشة – رضي الله عنها – أنها قالت للنبي صلى الله عليه وسلم: الطعن قد عرفناه فما الطاعون؟ قال: ” غدة كغدة البعير يخرج في المراق والإبط “
زاد المعاد لابن القيم (4/38) والعين للخليل 2/209. وحديث عائشة: أنها قالت للنبي صلى الله عليه وسلم: ” الطعن قد عرفناه فما الطاعون “. أخرجه أحمد (6/145) وذكره الهيثمي في مجمع الزوائد (2/314)، وقال: رجال أحمد ثقات.
رواه البخاري (1781) ومسلم (1379). وأطال ابن حجر في بيان الفرق بين الطاعون والوباء في فتح الباري 10/181-191. ومِما قال: ” الوباء غير الطاعون وَمَن أطلق على كل وباء طاعونا فبطريق المجاز، قال أهل اللغة: الوباء هو المرض العام.. “
[ফাতহুল বারী-১০/১৮১, মুসনাদে আহমাদ-৬/১৪৫, যাদুল মায়াদ-৪/৩৮, মাজমাউয যাওয়ায়েদ-২/৩১৪, ইমাম হায়ছামি বলেন- رجال أحمد ثقات মুসনাদে আহমাদের এই হাদিসের রাবীগণ ছিকাহ/নির্ভরযোগ্য ]
রাসুল(ﷺ) বলেছেন, মক্কা-মদীনায় "ত্বউন" (الطاعون) প্রবেশ করবে না। কিন্তু কোনো হাদিসে "ওয়াবা" (الوباء) প্রবেশ করবে না এটা বলেন নি।
২নং: "ওয়াবা"- হলোঃ
(আম) কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল প্রকার মহামারীকে বলে।
ইবনে হাজার রাহ. বলেনঃ
الوباء غير الطاعون
অনুবাদঃ “ওয়াবা” এবং "ত্বউন" এক নয়।
[ফাতহুল বারী-১০/১৮১]
আর করোনা ভাইরাস ত্বউন/ফোঁড়া জাতীয় মহামারী না। এটা "ওয়াবা"। তাই রাসুল(ﷺ) এর হাদিসে কোনো ভুল নেই।
ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেনঃ 'মহামারী' বিষয়টিকে বুঝাবার জন্য আরবীতে একাধিক শব্দ থাকলেও ফোঁড়া উঠে যে মহামারীতে কেবল সেখানেই 'ত্বউন' শব্দ ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে যে কোনো ধরনের মহামারীর জন্য আরবী শব্দ হল 'ওয়াবা'।
[যাদুল মাআদ-৪/৩৮, ফাতহুল বারী-১০/১৮১]
এজন্যই ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেনঃ
ولكن .. ذكر بعض العلماء أن مكة قد دخلها طاعون عام 749 هـ .
وأجاب الحافظ ابن حجر رحمه الله عن ذلك بأنه لم يكن طاعوناً ، وإنما كان وباء آخر ، فظن من نقل ذلك أنه طاعون
অনুবাদঃ কিছু কিছু আলেম উল্লেখ করেন, মক্কায় ৭৪৯ হিজরিতে “ত্বউন”’ মহামারী প্রবেশ করেছিল।
মূলত এটা " ত্বউন" ছিল না। বরং তা অন্য একটি "ওয়াবা" মহামারী ছিল। যিনি এটাকে লিপিবদ্ধ করেছে, তিনি ধারণা করেছেন এটা "ত্বউন"। (মূলত রাসুল(ﷺ) এর বলা ফোড়া জাতীয় “ত্বউন” সেটা ছিল না)
[ https://islamqa.info/ar/131887/ ]
ইমাম নববী রাহ. আবুল হাসান মাদাইনী রাহ. থেকে বর্ণনা করেনঃ
وقد ذكر النووي رحمه الله عن أبي الحسن المدائني أن مكة والمدينة لم يقع بهما طاعون قط الأذكار" ص 139.
অনুবাদঃ মক্কা-মদীনায় কখনো "ত্বউন" প্রবেশ করে নি।
[ নববী, আল-আযকার - পৃষ্ঠাঃ ১৩৯ ]
শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ হাফি. বলেনঃ
فالحاصل : أن مكة والمدينة محفوظتان من الطاعون ، وليستا محفوظتين من غيره من الأمراض والأوبئة
অনুবাদঃ মক্কা-মদীনা "ত্বউন" থেকে সংরক্ষিত। (অর্থাৎ ত্বউন প্রবেশ করবে না) কিন্তু বিভিন্ন রোগ ও "ওয়াবা" থেকে সংরক্ষিত না।
[Islamqa, ফাতাওয়া নং-১৩১৮৮৭]
বিঃদ্রঃ
করোনা ভাইরাস ত্বউন/ফোঁড়া জাতীয় মহামারী না। এটা "ওয়াবা"। তাই রাসুল(ﷺ) এর হাদিসের সত্যতায় বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ নেই।
আল্লাহ বুঝবার তাওফিক দান করুক। আমিন।।
এ ব্যাপারে আরো দেখতে পারেনঃ
"ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?"
"মক্কা ও মদীনা কি সোয়াইন ফ্লু জাতীয় মহামারী ও প্লেগ থেকে সুরক্ষিত?"